বহুবর্ষজীবী কারিপাতা চাষ এ বাণিজ্যিকভাবে সফল হচ্ছে অনেকই। কারণ আমাদের দেশে কারিপাতার বাজার আস্তে আস্তে বেড়েছে।
তাই এই পাতার চাষাবাদে বাণিজ্যিকভাবে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি চাষিদের। এছাড়া কম খরচে বেশ বেশি আয় করা যায় কারিপাতার চাষাবাদ করে।
আজ আমরা কারিপাতা চাষের পদ্ধতি ও কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব এই নিবন্ধে।
যেভাবে কারিপাতা চাষ করবেন
সব ধরনের মাটি ও যেকোনও আবহাওয়ায় কারিপাতার চাষাবাদ করা সম্ভব। তবে শীতপ্রধান এলাকায় গাছের বৃদ্ধি সামান্য ব্যাহত হয়।
- সব ধরনের মাটিতে কারিপাতা গাছ জন্মায়; তবে লালমাটিতে সব থেকে ভাল হয়।
- খুব বেশি জাত নেই; তবে চাষিদের পছন্দের জাত হল মধ্যশিরা গোলাপি রঙের কারিপাতা।
- কারিপাতা চাষের জমিতে ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে তৈরি করতে হবে।
- এরপর বীজ থেকে প্রথমে চারা তৈরি করে নিতে হবে।
- তারপর বর্ষার শুরুতে (জুন-জুলাই মাসে) ২-৩ মিটার অন্তর অন্তর জমিতে চারা লাগাতে হবে।
- এছাড়া সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৭৫ সেন্টিমিটার।
- চারা বপনের আগে ৩০ ঘনমিটার গর্ত করতে কম্পোস্ট সার মিশিয়ে ভরাট করে সপ্তাহ দুয়েক রেখে দিতে হবে।
- সেখানে সুস্থ সবল চারা বপনের পর হাল্কা সেচ দিতে হবে।
- বীজ থেকে চারা হওয়া পর্যন্ত ১ মিটার লম্বা হলে গাছের ঠিকমতো পরিচর্যা করা প্রয়োজন।
পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন
কারিপাতার চাষাবাদে বড় একটি বড় সুবিধা হচ্ছে পোকামাকড় ও রোগবালাই উপদ্রব খুব কম।
- তবে এই গাছে পাতামোড়া, মিলিবাগ, এফিড প্রভৃতি পোকার আক্রমণের সম্ভাবনা থাকে।
- এই সব পোকার আক্রমণ হলে ডায়মিথোয়েট দু’মিলিলিটার প্রতি লিটার পানিতে গুলে ভাল করে স্প্রে করতে হবে।
- এছাড়া পাতায় দাগ রোগ দেখা দিলে কার্বেন্ডাজিম এক গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে গুলে স্প্রে করলে উপকার মিলবে।
- এই গাছে মিলিবাগ পাতা মরে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিলে মাসে অন্তত ১ বার নিম তেল স্প্রে করতে পারেন।
সার-সেচ ও পরিচর্যা
কারিপাতার গাছ সব সময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে। এছাড়া প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ দিতে হবে, খরার সময় সেচ দিলে উপকার হয়।
- এই গাছে তেমন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয় না।
- তবে গাছের বৃদ্ধি ও ভালো ফসলের জন্য গাছ প্রতি ২০ কেজি হারে জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে।
- এছাড়া প্রতি বছর ১ বার (জুলাই মাসে) প্রতি কারিপাতা গাছে ১০০ থেকে ২০০ গ্রাম ইউরিয়া সার দেওয়া উত্তম।
টবে কারিপাতা চাষ পদ্ধতি শিখে নিন
আপনি ছাদ বাগানে টবের মধ্যে কারিপাতার চাষ করতে পারেন তাহলে কেমন হয়? তাহলে কিভাবে টবে কারিপাতা চাষ করবেন, সহজ পদ্ধতি শিখে নিন।
- প্রথমে কারিপাতা চাষের জন্য মাটি প্রস্তুত করতে হবে এবং টব সংগ্রহ করতে হবে।
- মাটির সাথে নদীর বালি মাটি, হাড় গুড়ো, শিংকুচি, গোবর সার কিংবা ভার্মিকম্পোস্ট ভালো করে মিশিয়ে নিন।
- এরপর নার্সারি থেকে ভাল জাতের চারা কিনে আনুন।
- তবে লক্ষ্য রাখতে হবে বর্ষার শুরুতে (জুন-জুলাই মাসে) চারা লাগাতে হবে।
- বহুবর্ষজীবী এই গাছ মোটামুটি চারা থেকে গাছ হতে ৩ বছর সময় লাগতে পারে।
- ভালো ফলন পেতে মাঝে মাঝে গাছের গোড়ায় গোবর সার ও চায়ের পাতা প্রয়োগ করতে পারেন।
ফলন ও ফসল সংগ্রহ
কারি পাতা গাছের বয়স ১৫ মাস হলেই এই গাছ থেকে পাতা সংগ্রহ শুরু করা যায়। কচি পাতা সংগ্রহ না করে গোড়ার দিক থেকে বয়স্ক পাতা সংগ্রহ করতে হবে।
বহুবর্ষজীবী এই গাছে থেকে ১৫-২০ বছর পর্যন্ত (বছরে ৩-৪) পাতা তোলা যায়। ঠিকমতো পরিচর্যা করলে হেক্টের প্রতি ৫-৭ টন কারিপাতা সংগ্রহ করা সম্ভব।
ঘরোয়া ব্যবহারের জন্য একটা দুটো গাছই যথেষ্ট। বাণিজ্যিকভাবে চাষের আগে এর বাজার সম্বন্ধে নিশ্চিত হতে হবে।
আরো পড়ুন …
- পোলাও পাতা চাষ পদ্ধতি
- যেভাবে পুদিনা পাতা চাষ করবেন
- সম্পূর্ণ আধুনিক লেটুস পাতা চাষ পদ্ধতি
- সূর্যমুখী ফুল চাষ, জেনে নিন সঠিক ও সহজ পদ্ধতি
- রজনীগন্ধা ফুল চাষ পদ্ধতি ও কৌশল
- সঠিক ডালিয়া ফুল চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা
**চাষাবাদ ও কৃষি সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, খবর পড়তে আজই জয়েন করুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )” হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )” অথবা টেলিগ্রাম চ্যানেল ”বীজ ঘর ( কৃষি কথা )’‘ এ।
Discover more from বীজ ঘর ডটকম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.