কৃষি কথা

সঠিক হলুদ চাষ পদ্ধতি

সঠিক হলুদ চাষ পদ্ধতি

রান্নাঘর কিংবা বিয়ে বাড়ি; বাঙালির সাজগোজ ও খাদ্যাভ্যাসে মিশে আছে মসলা ফসল হলুদ। উন্নত পদ্ধতিতে হলুদ চাষ করলে ভালো ফলনের পাশা-পাশি অর্থনৈতিক দিক থেকেও লাভজনক।

এ কারণে এদেশের কৃষকরা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হলুদের চাষাবাদের দিকে ঝুঁকছে। তাই আজ আমরা আমাদের এই নিবন্ধে হলুদ চাষের পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

আধুনিক হলুদ চাষ পদ্ধতি

উষ্ণ এলাকার মসলা জাতীয় ফসল হলুদ সব ধরনের মাটিতে চাষ করা যায়। তবে দো-আঁশ ও বেলে-দো-আঁশ মাটি এই ফসলের চাষাবাদ অধিক ভালো হয়। বার্ষিক ১০০-২০০ সেমি বৃষ্টিপাত হলুদ চাষের উপযোগী।

এছাড়া…

  • বাড়ির আঙ্গিনায়, গাছের ছায়ায় এবং অন্য ফসলের অনুপযোগী পতিত জমিতেও হলুদের চাষ করা সম্ভব।
  • উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুতে এই ফসল ভালো জন্মে।
  • রোদ  যুক্ত স্থানে হলুদের কন্দ ভালো হয়।
  • ছায়া যুক্ত স্থানে হলুদ চাষ করলে ফলন কম হতে পারে।
  • তাপমাত্রা কম থাকলে বা ঠান্ডা আবহাওয়া থাকলে হলুদের বৃদ্ধি কমে যায়।
  • অন্য ফসলের মতো হলুদের চাষে উর্বর জমির প্রয়োজন হয় না।
  • মাটিতে প্রচুর জৈব পদার্থ থাকলে ফলন ভালো হয় (মাটির অম্ল ৫-৬ হওয়া উচিত)।
  • এ ফসলে সার, সেচ ও পরিচর্যা কম লাগে; রোগবালাই তুলনামূলক কম।
  • কৃষি বনায়ন ও বিভিন্ন ফসলের সাথে সাথিফসল হিসেবে চাষ করা যায়।

বীজ বোনার সময় ও পদ্ধতি

সাধারনত হলুদের বীজ বোনার উত্তম সময় চৈত্র মাস (খরিপ মৌসুম)। বোনার আগে বীজ শোধন করে নিলে কন্দ পচা রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

তবে অধিক ফলনের জন্য চাষাবাদের জমি  ৪-৫ বার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে নিতে হবে। এছাড়া…

  • আগাছা পরিষ্কার করে ঢেলা ভেঙ্গে ভালোভাবে জমি তৈরি করে নিতে হবে।
  • হলুদের বীজ (কন্দ) সারিতে বোনতে হবে।
  •  কন্দ বপনের পর জমিতে মালচিং করে দিলে ভালো।
  • প্রতিটি বীজ হলুদের ওজন ১৫-২০ গ্রাম ( ১-২টি ঝুঁড়ি বিশিষ্ট) হলে উত্তম।
  • সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৫০ সেমি।
  • বীজ থেকে বীজের দূরত্ব হবে ২৫ সেমি।
  • বীজ ৫-৬ সেমি গভীরে বোনতে হবে।
  • কন্দ লাগানোর পর ভেলী দিতে হবে।
  • মাটি শুকনা থাকলে বীজ বোনার পর জমিতে সেচ দিতে হবে।

সার প্রয়োগ

হলুদের ভালো ফলন পেতে হলে উর্বরতা অনুযায়ী জমিতে সার প্রয়োগ করতে হবে। হেক্টর প্রতি…

  • এক হেক্টর জমিতে গোবর দিতে হবে ৪ থেকে ৬ টন,
  • ইউরিয়া দিতে হবে ২০০ থেকে ২৪০ কেজি,
  • টিএসপি দিতে হবে ১৭০ থেকে ১৮০ কেজি,
  • এমওপি দিতে হবে ১৬০ থেকে ১৮০ কেজি,
  • জিপসাম দিতে হবে ১০৫ থেকে ১২০ কেজি।

গোবর সার, টিএসপি ও জিপসাম জমি তৈরির সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। জমিতে কন্দ লাগানোর ৫০ থেকে ৬০ দিন পর ১০০ থেকে ১২০ কেজি ইউরিয়া প্রয়োগ করে দিতে হবে।

সার প্রয়োগের পর ক্ষেতের মাটি হালকা ভাবে কুপিয়ে দিতে হবে। এবং প্রয়োজনে জমিতে সেচ দিতে হবে।

সেচ ব্যবস্থাপন ও পরিচর্যা

হলুদ চাষের জমিতে যেন আগাছা না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

এছাড়া…

  • বীজ বোনার ৩-৪ দিন পর একবার আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে।
  • তারপর আরো তিন থেকে চার বার আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
  • প্রয়োজনীয় সেচ প্রয়োগ করতে হবে।
  • তবে জমি বেশি ভেজা রাখা যাবে না তাহলে কন্দ পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • জমিতে যেন অতিরিক্ত জল জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • প্রয়োজনে জল বের হয়ে যাওয়ার জন্য নালা তৈরি করে দিতে হবে।
রোগবালাই ও পোকামকড় দমন
  • হলুদ ক্ষেতের জমি শুকনা রাখতে হবে সব সময়।
  • হলুদ গাছকে রোগ থেকে রক্ষা করতে রোগমুক্ত কন্দ বপন করতে হবে।
  • এছাড়া জমিতে কোন রোগ বা পোকা আক্রমন করলে প্রয়োজনীয় বালাই নাশক বা ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।
ফলন ও ফসল সংগ্রহ

বীজ বপন করার ৯-১০ মাস পর হলুদ গাছের পাতা শুকিয়ে যাওয়ার পর হলুদ সংগ্রহ করা যায়। জানুয়ারি মাসের শেষ হতে মার্চ মাসের প্রথম পর্যন্ত হলুদ সংগ্রহ করা যেতে পারে।

ঠিক উপায়ে চাষ করতে পারলে সাধারনত এক হেক্টর জমি থেকে ২৫-৩০ টন কাচা হলুদ পাওয়া যায়। প্রতি ১০০ কেজি কাচা হলুদ থেকে ২৫-৩০ কেজি করে শুকনা হলুদ পাওয়া যায়।

–লেখাটির বিভিন্ন তথ্য কৃষি তথ্য সার্ভিস ও অনলাইন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।  বগ্লে প্রকাশিত কোনও তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।

আরো পড়ুন … 

**চাষাবাদ ও কৃষি সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, খবর পড়তে আজই জয়েন করুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )”  হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )” অথবা  টেলিগ্রাম চ্যানেল  ”বীজ ঘর ( কৃষি কথা )’‘ এ। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *