সঠিক এলাচ চাষ পদ্ধতি, হবে বাম্পার ফলন

বাংলাদেশে ইদানিং বাণিজ্যিক চিন্তা ভাবনা নিয়ে মসলা জাতীয় ফসল এলাচ চাষ শুরু করেছেন চাষীরা। এর ফলে আগামীতে বিদেশ থেকে আর আমদানি করতে হবে না মসলা জাতীয় ফসল।

নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করা সম্ভব হবে দেশের মাটিতে উৎপাদিত এলাচ। এতে অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি দেশে আসবে বৈদেশিক মুদ্রাও।

অন্যদিকে সুগন্ধযুক্ত ও রান্নায় স্বাদ বাড়ানোর জন্য মসলার রানী এলাচ বা এলাচীর চাহিদা প্রচুর। তাই আজ আমার এলাচ চাষ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব।

যেভাবে এলাচ চাষ করবেন

এলাচের চাষাবাদে সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। তবে এই ফসলের চাষে সুবিধা হচ্ছে, চাষের জন্য আলাদা কোন জমি দরকার হয় না।

মূলত আদা জাতীয় গাছ এলাচ এদেশে আবহাওয়া চাষাবাদে বেশ উপযোগী। যে কোনো ফলের বাগানে ছায়ায় এর চাষ যায়।  তবে…

  • এলাচ বা এলাচি চাষের জন্য জমি উর্বর হতে হবে।
  •  হালকা ছায়া যুক্ত জমি এই ফসলের চাষে উপযুক্ত।
  • তবে জমি ভেজা বা স্যাতস্যাতে হওয়া যাবে না।
  • ভেজা বা স্যাতস্যাতে জমিতে এলাচের চাষাবাদে ভালো ফলন পাওয়া যায় না।
  • এলাচ চাষ করার জন্য সবসময় আলাদা কোনো জমির দরকার হয় না।
  • যে কোন গাছের নিচে, বাগান বা বাড়ির আঙ্গিনা এলাচ চাষের জন্য উপযোগি।
  • অন্য কোন ফসলের মাঠেও মসলা জাতীয় ফসলের চাষাবাদ করা যায়।

সতর্কতা: ঘন বর্ষায় চারা লাগানো যাবে না। এছাড়া এলাচ বা এলাচি ক্ষেতে পানি যাতে জমে না থাকে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে; অতিরিক্ত পানি জমে থাকলে ড্রেনের ব্যবস্থা করতে হবে।

জমি তৈরি ও বপন পদ্ধতি

এলাচ চাষের জমিতে (এটেল মাটি হয়) বালির পরিমাণ কম থাকলে অতিরিক্ত বালি মেশাতে হবে। দোআঁশ মাটিতে কিছু করতে হবে না।

তবে এই ফসলের চাষের জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিতে হবে। প্রয়োজনে মাটি পরীক্ষা করে নিতে হবে। এছাড়া…

  • জৈব উপদানের পরিমাণ কম থাকলে গোবর সার বা কেঁচো কম্পোস্ট সার ব্যবহার করা উত্তম।
  • ভালো ফলনের জন্য ১৫ দিন অন্তর অন্তর ২ ফুট চওড়া ও দেড়ফিট গভীর গর্ত করে গোবর সার বা জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে।
  • সাথে অবশ্যই দানাদার কীটনাশক দিতে হবে।
  • প্রতি গর্তের গোবরের সাথে ২০০ গ্রাম।
  • চারা বপনের পর জমিতে সেচ দিতে হবে।
  • প্রতি শতকে প্রায় ১৪ টি এলাচের চারা লাগানো যেতে পারে।

এলাচের অধিক ফলন পেতে চারা নির্দিষ্ট দূরত্বে রোপন করতে হবে। এক চারা থেকে আরেক চারার দূরত্ব হতে হবে ৪ হাত এবং এক লাইন থেকে আরেক লাইনের দূরত্ব হবে ৩.৫ হাত।

সার প্রয়োগ ও সেচ ব্যবস্থাপনা

এলাচ চাষাবাদের জমি তৈরির সময় জমিতে সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি শতকে…

  • টিএসপি ৫০০ গ্রাম,
  • পটাশ ৫০০ গ্রাম,
  • এছাড়া  ফুরাডান নামক দানাদার কীটনাশক জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।

তারপর জমিতে ভালোভাবে সেচ দিতে হবে যেন মাটির সাথে সার গুলো খুব ভালো করে মিশে যায়।

রোগবালাই দমন ও পরিচর্যা

  • এলাচ সব সময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে, কারণ আগাছা গাছের বৃদ্ধি বাধা গ্রস্থ করে।
  • প্রথম বার এলাচ সংগ্রহ করার পর গাছের ডাল ছাটাই করতে হবে (মরা ডাল পাতা ও দুর্বল ডাল)।
  •  ছাটাই প্রক্রিয়া শীতকালে করা ভালো, কারন শীতকালে গাছে কোন ফুল ও ফল হয় না।
  • গাছে রোগ আক্রমন করলে প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।
  • এবং পোকা দমন করার জন্য প্রয়োজনীয় বালাই নাশক দিতে হবে।
ফল সংগ্রহ

এলাচের চারা বপনের ২ বছর পর ফল ধরা শুরু হয় (ফলন ভালো পাওয়া যায় ৩ বছর পর)। সাধারনত আষাঢ় মাসে এলাচ গাছে ফুল আসে এবং ভাদ্র মাস থেকে আশ্বিন মাসের শেষ দিকে এলাচ পরিপক্ক হয়।

ফল পরিপক্ক হলে তা সংগ্রহ করতে হবে।পরিপক্ক ফল দেখতে হালকা সবুজের উপর লাল রঙ হয়ে থাকে।

 

–লেখাটির বিভিন্ন তথ্য কৃষি তথ্য সার্ভিস ও অনলাইন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।  বগ্লে প্রকাশিত কোনও তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।

আরো পড়ুন … 

**চাষাবাদ ও কৃষি সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, খবর পড়তে আজই জয়েন করুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )”  হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )” অথবা  টেলিগ্রাম চ্যানেল  ”বীজ ঘর ( কৃষি কথা )’‘ এ। 

মতামত দিন

Item added to cart.
0 items - 0.00
Need Help?