জেনে নিন আধুনিক ক্যাপসিকাম চাষ পদ্ধতি

বিদেশি সবজি বেল পেপার বা ক্যাপসিকাম চাষ বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে বেশি কিছুদিন আগে থেকে। অনুকূল আবহাওয়া, উপযুক্ত মাটি থাকায় এদেশের কৃষকরা ইদানিং ব্যাপকভাবে বাণিজ্যিকভাবে এ সবজির চাষাবাদ করছে।

এছাড়া, খাদ্যগুণ আর স্বাদের জন্য ক্যাপসিকামের জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ছে।

বাজারে চাহিদার তুলনায় যোগান কম থাকায় দামও বেশ ভালো থাকে। তাই, আজ আমরা এই নিবন্ধে ক্যাপসিকামের চাষাবাদ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব।

বেল পেপার বা ক্যাপসিকাম চাষ করুন

সুনিষ্কাশিত দোঁয়াশ ও বেলে দোঁয়াশ মাটি ক্যাপসিকাম চাষের জন্য উত্তম। এছাড়া, কুয়াশামুক্ত শীতের আবহাওয়া, বছরে ৬০-১২০ সেমি. বৃষ্টিপাত এবং পর্যাপ্ত সূর্যালোক লঙ্কা প্রজাতির এই সবজি চাষের পক্ষে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

ক্যাপসিকাম উৎপাদনের জন্য আদ্রতা কম আছে এমন পরিবেশ সবচেয়ে উপযোগী। অতি বৃষ্টিপাত এবং অনিয়মিত তাপমাত্রায় ক্যাপসিকাম চাশাবাদের জন্য ক্ষতিকর।

এর ফলে ফুল ঝরে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে, ফলন ও মান কমে যায়, কোন কোন ক্ষেত্রে একেবারেই ফলন হয় না।

চাষের সময় ও জমি তৈরি

যদিও সব মৌসুমেই ক্যাপসিকাম চাষ সম্ভব, তবে ভাদ্র ও মাঘ মাসে (অক্টোবর থেকে নভেম্বর) বীজ বোনলে ভালো ফলনের সম্ভাবনা বেশি থাকে। তবে বর্তমানে ঘরোয়া কৃষকরা ১২ মাসই এটি চাষের চেষ্টা করছেন।

হাইব্রিড ক্যাপসিকাম বীজ
হাইব্রিড ক্যাপসিকাম বীজ

ক্যাপসিকামের চাষের জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে তৈরি করেতে হবে। এরপর …

  • বেড তৈরি করতে হবে।
  • প্রতিটি বেড চওড়া ২.৫ ফুট রাখতে হয়।
  • পরিচর্যা সুবিধার জন্য দুই বেডের মাঝে নালা রাখতে হবে।
  • তবে, সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ২ ফুট।

চারা বপন ও সার প্রয়োগ

বীজ দিয়ে ক্যাপসিকাম চাষ করলে প্রথমে চারা তৈরি করে নিতে হয়। বীজ বোনার ৭-১০দিন পর চারা ৩-৪ পাতা বিশিষ্ট হলে ৯-১২ সে.মি. আকারের পলি ব্যাগে স্থানান্তর করতে হবে।

এরপর সাধারণত ৩০ দিন বয়সের চারা বেডে ১.৫ ফুট দূরে দূরে বপন করতে হবে।

নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারি প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত রাতের তাপমাত্রা অনেক কমে যায় বলে পলিথিনের ছাউনি দিয়ে রাখলে ক্ষেতের ভেতরের তাপমাত্রা বেশি থাকে।

ক্যাপসিকাম চাষাবাদের জমিতে সার প্রয়োগ পদ্ধতি…

  • প্রতি শতক জমির জন্য গোবর ৪০ কেজি,
  • ইউরিয়া ১ কেজি,
  • টিএসপি ১.৪ কেজি,
  • এমওপি ১ কেজি,
  • দস্তা ২০ গ্রাম এবং জিপসাম ৪৫০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়।

এর মধ্যে অর্ধেক গোবর সার জমি তৈরির সময়, বাকি অর্ধেক গোবর সম্পূর্ণ টিএসপি, দস্তা, জিপসাম, ১ থেকে ৩ ভাগ এমওপি এবং ১ থেকে ৩ ভাগ ইউরিয়া চারা রোপণের গর্তে প্রয়োগ করতে হবে।

বাকি ২ থেকে ৩ ভাগ ইউরিয়া এবং এমওপি পরবর্তীতে দুইভাগ করে চারা রোপণের ২৫ দিন এবং ৫০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে।

প্রত্যেক বার চাপান সার প্রয়োগের পর পরই লাহকা করে সেচ দিতে হবে।

পরিচর্যা ও সেচ

সুস্থ-সবল গাছ এবং অধিক ফলন পাওয়ার জন্য সযত্ন পরিচর্যা অত্যন্ত জরুরী। ক্যাপসিকাম যেহেতু খরা ও জলাবদ্ধতা কোনটাই সহ্য করতে পারে না, তাই প্রয়োজন অনুসারে জমিতে সেচ দিতে হবে।

এছাড়া কোন গাছে ফল ধরা শুরু হলে খুঁটি দিতে হবে যাতে গাছ ফলের বারে হেলে না পড়ে।

জমি সব সময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। আগাছামুক্ত পরিচ্ছন্ন জমিতে রোগ-পোকার আক্রমণ কম হয় এবং ফলন বেশী পাওয়া যায়।

পোকামাকড় ও  বোগবালাই

খেয়াল রাখতে হবে, ক্যাপসিকামের পাতায় যেন রোগের উপদ্রব না হয়। জাবপোকা, থ্রিপস পোকা, লালমাকড়, এ্যানথ্রাকনোজ রোগ, ব্লাইট রোগ ইত্যাদি ক্যাপসিকাম মরিচে আক্রমণ হয়ে থাকে।

কাঙ্খিত ফলন পেতে রোগ-পোকার হাত থেকে ফসলকে রক্ষা করতে হবে। এর জন্য নিয়মিত প্রয়োজনে ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।

এছাড়া…

  • এসব  রোগ বা পোকার আক্রমণ হলে টক্সিন মুক্ত দ্রবণ ব্যবহার করাই শ্রেয়।
  • এক চামচ সাবান গুঁড়া এবং নিম তেল এক টেবিল চামচ নিন, উভয় এক লিটার পানিতে মিশ্রিত করুন।
  • প্রতি সপ্তাহে এই দ্রবণ একবার স্প্রে করুন।

টবে বা ছাদবাগানে ক্যাপসিকাম চাষ করুন

আমাদের দেশের কাঁচাবাজার ও সুপারশপতে এখন সবুজ, লাল ও হলুদ রঙ সহ বিভিন্ন রঙের ক্যাপসিকাম দেখা মিলে।  তবে একটু চেষ্টা করলে বারান্দা কিংবা ছাদের টবে খুব সহজেই  ক্যাপসিকাম চাষ করা যায়। এবার জেনে নিন চাষ পদ্ধতি…

  • ক্যাপসিকাম চাষের জন্য ঝুরঝুরে বেলে দোআঁশ মাটি উপযুক্ত।
  • যদিও সব মৌসুমেই ক্যাপসিকাম চাষ সম্ভব।
  • তবে ভাদ্র ও মাঘ মাসে বীজ বোনলে ভালো ফলনের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • বীজ বা চারা সংগ্রহ করে নিচের দিকে ছিদ্রযুক্ত একটি টব বাছাই করতে হবে, যেন অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনে সুবিধা হয়।
  • টবের মাটির সঙ্গে এক-তৃতীয়াংশ জৈব সার মেশাতে হবে।
  • মোটামুটি এক মাস বয়সী চারা রোপণের জন্য উপযুক্ত।
  • ক্যাপসিকাম চাষের জন্য আলো, বাতাস ও প্রখর তাপহীন রোদ উপকারী।
  • কারণ, তীব্র রোদে চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই তাপ কম থাকা অবস্থায় চারা রোপণ করা উচিত।
  • চারা রোপণের কমপক্ষে ২০ দিন পর থেকে এক চামচ করে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে।
  • সেই সঙ্গে নিয়মিত পরিমিত পানি দিতে হবে যেন মাটি শুকিয়ে না যায়।
  • চারা একটু বড় হলে শক্ত খুঁটি দিতে হবে যাতে হেলে না পড়ে যায়।
  • এ ছাড়া গাছের গোড়ার আগাছা থাকলে সেগুলো সাবধানে তুলে ফেলতে হবে।
ফলন ও ফসল সংগ্রহ

চারা বপনের ৬০-৭০ দিন পর থেকে ফলন দিতে শুরু করে বেল পেপার বা ক্যাপসিকাম।  যা পরবর্তী এক থেকে দেড় মাস পর্যন্ত ফল দিতে থাকবে।

একর প্রতি ৫০ থেকে ৭৫ কুইন্টাল পর্যন্ত ফলন হয়।

ক্যাপসিকাম ফলগুলি আকারে বড় এবং বোঁটাগুলি মোটা হওয়ার ফসল সংগ্রহের সময় গাছের ডাল ভেঙ্গে যেতে পারে বা আঘাত পেতে পারে; ফসল সাবধানে তোলা উচিৎ।

–লেখাটির বিভিন্ন তথ্য কৃষি তথ্য সার্ভিস ও অনলাইন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।  বগ্লে প্রকাশিত কোনও তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।

আরো পড়ুন … 

**চাষাবাদ ও কৃষি সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, খবর পড়তে আজই জয়েন করুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )”  হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )” অথবা  টেলিগ্রাম চ্যানেল  ”বীজ ঘর ( কৃষি কথা )’‘ এ। 

মতামত দিন

Item added to cart.
0 items - 0.00
Need Help?