দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই জনপ্রিয় ও পুষ্টিকর সবজি কাঁকরোল চাষ হয়। চাইলে জমি কিংবা বাড়ির আঙিনা, ছাদে বা টবে জনপ্রিয় এ সবজি চাষ করতে পারেন আপনিও।
বর্তমানে আমাদের দেশে কাঁকরোলের চাষাবাদে সফল হচ্ছেন অনেক চাষি। তবে সঠিক চাষাবাদ পদ্ধতি জানা না থাকার কারণে ভালো ফলন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কৃষকরা।
তাই আজ আমরা সঠিক কাঁকরোল চাষ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব এই নিবন্ধে।
আসুন জেনে নেই কাঁকরোল চাষ পদ্ধতি
পর্যাপ্ত জৈব সার থাকে প্রায় সব ধরণের মাটিতে কাঁকরোলের চাষাবাদ করা সম্ভব। তবে দো-আঁশ, এঁটেল দো-আঁশ মাটি এই সবজি চাষের জন্য বেশ উপযোগী।
তবে জমি অবশ্যই সুনিষ্কাশিত হতে হবে। কাঁকরোল চাষের জন্য কোনভাবে পানি জমে না এমন উঁচু বা মাঝারি উঁচু জায়গা নির্বাচন করতে হবে।
জমি তৈরি ও বপনের সময়কাল
আমাদের দেশে এপ্রিল থেকে মধ্য জুন সময় পর্যন্ত কাঁকরোলের বীজ (মোথা) বপনের উত্তম সময়।
এছাড়া কাঁকরোলের চাষাবাদের জমিতে ৪-৫ বার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে সমান করে নিতে হবে এবং আগাছা থাকলে তা পরিষ্কার করে নিতে হবে।
- এরপর বেড তৈরি করতে হবে জমির দৈর্ঘ্যের উপর নির্ভর করে (প্রস্থঃ ৩০০ সে.মি)।
- ২ বেডের মাঝে নালার প্রস্থ ৩০ সেমি, গভীরতা ২০ সেমি।
- প্রতি বেডে সারি থাকবে দুটি; সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ২০০ সেমি।
- প্রত্যেক সারিতে ৬০x৬০x৬০ সেমি আকারের গর্ত তৈরী করতে হবে।
- এছাড়া কাঁকরোল চাষের জমিতে প্রয়োজনীয় মাপের মাদা তৈরি করতে হবে।
- মাদা থেকে মাদার দূরত্ব হবে ২৫০ সেমি (হেক্টরপ্রতি প্রতি মাদার হবে ২০০০ এর মত)।
- প্রত্যেক মাদায় ৪-৫ টি বীজ (মোথা) বোনতে হবে।
- মাদার ৪-৬ সেমি গভীর গর্ত করে কন্দমূল (মোথা) বপন করতে হবে।
- মোথ বপনের পর খড়কুটা দ্ধারা ঢেকে দিতে হবে।
- বপনের জন্য নির্বাচিত মোথার ৫% হারে পুরুষ গাছের মোথা হতে হবে।
- মাদার মাটি যেন শুকিয়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- প্রয়োজনে জল সেচ দিতে হবে ঝাঝরি দিয়ে ২-১ দিন পর পর।
- মাটিতে যদি রস না থাকে তাহলে কন্দমূল গজাবে না।
- আবার রস বেশি হলে কন্দ পচে যেতে পারে। কাজেই এ দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
কাঁকরোলের পুরুষ ও স্ত্রী ফুল আলাদা গাছে জন্মেই পরাগায়ন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে স্ত্রী গাছের সাঙ্গে আনুপাতিক হারে পুরুষ গাছ লাগাতে হয়।
কাঁকরোল বীজ থেকেও চারা হয়। আবার কন্দমূল (মোথা) থেকে ও চারা তৈরি করা যায়। তবে বীজ থেকে তৈরি না করা উত্তম (বীজ থেকে মাত্র ৫০% চারা সৃষ্টি হয় এবং বেশির ভাগে চারাই পুরুষ চারা)। ফলনও কম হয়।
সার প্রয়োগ
কাঁকরোলের চাষাবাদে পরিমাণমতো পচা গোবর, ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম দিতে হবে। যেমন …
- প্রতি হেক্টররে ৩-৫ টন পচা গোবর,
- ইউরিয়া ১২৫-১৫০ কেজি,
- টিএসপি ১০০-১২৫ কেজি,
- এমওপি ১০০-১২৫ কেজি,
- ৮০-১০০ কেজি জিপসাম সার প্রয়োগ করতে হবে।
বীজ (মোথা) বোনার সময় অর্ধেক ইউরিয়া ও অর্ধেক এমওপি এবং অন্যান্য সার মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকী অর্ধেক ইউরিয়া ও এমওপি সমান ২ কিস্তি করে গাছের বৃদ্ধি পর্যায়ে প্রথম বার এবং ফুল আসার পর দিতে হবে।
এছাড়া মাটি যদি বেশি অম্লীয় হয় তাহলে হেক্টর প্রতি ৮০-১০০ কেজি ডলোচুন শেষ বার চাষ দেওয়ার সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
সেচ ও পরিচর্যা
বীজ (মোথা) হতে চারা গজানোর পর কাঁকরোল ক্ষেতের আগাছা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। আগাছা গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।
- এছাড়া মাটি ও গাছের অবস্থা বুঝে সেচ প্রয়োগ হবে।
- ক্ষেতে পানির অভাব দেখা দিলে গাছের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
- তবে কাঁকরোল ক্ষেতে অতিরিক্ত পানি জমে থাকলে বের করে দিতে হবে।
- কারণ কাঁকরোল গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না।
- প্রয়োজনে ক্ষেতে মাটি হালকা কুপিয়ে দিলে মাটি পর্যাপ্ত আলো বাতাস পাবে।
কাঁকরোলের গাছ ১০ -১৫ সেন্টিমিটার লম্বা হলে এর গোড়ায় বাশেঁর কুঞ্চি বা কাটি পুঁতে দিতে হবে। এছাড়া গাছ ৫০ সেন্টিমিটার লম্বা হলে মজবুত করে মাচা তৈরি করে দিতে হবে।
রোগবালাই ও পোকামকড় দমন
কাঁকরোল ক্ষেতে জাবপোকা, মাছিপোকা ও বিছাপোকা গাছের পাতা, ফুল ও ফল নষ্ট করে ফেলে। এছাড়া কচি কাণ্ডের রস শুষে নেয়।
এসব পোকার আক্রমণ হলে প্রয়োজনীয় কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
তবে চারা ঢলে পড়া,পাউডারি মিলডিউ ও মোজাইক হলে কচি গাছের গোড়া পচে যায়। চারা ঢলে পড়া বোগের ক্ষেত্রে আক্রান্ত গাছ তুলে পুতে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
প্রথম ২টি ছত্রাকজনিত এবং শেষেরটি ভাইরাসজনিত রোগ।
ফলন ও ফসল সংগ্রহ
হলুদ সবুজ হলেই কাঁকরোল সংগ্রহ করা যায়। বীজ (মোথা) বপনের ৪৫-৫০ দিনের মধ্যে কাঁকরোল গাছে ফুল আসা শুরু করে।
পরাগায়নের ২ সপ্তাহের মধ্যে জনপ্রিয় ও পুষ্টিকর সবজি সংগ্রহের উপযোগী হয়। সঠিক পরিচর্যা ও উন্নত জাত হলে ২৫-৩০ টন কাঁকরোল পাওয়া যাবে প্রতি হেক্টরে।
–লেখাটির বিভিন্ন তথ্য কৃষি তথ্য সার্ভিস ও অনলাইন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। বগ্লে প্রকাশিত কোনও তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
আরো পড়ুন …
- নতুন পদ্ধতিতে ড্রাগন ফল চাষ
- সঠিক এলাচ চাষ পদ্ধতি, হবে বাম্পার ফলন
- উন্নত আদা চাষ পদ্ধতি জেনে নিন
- সঠিক হলুদ চাষ পদ্ধতি
- আধুনিক বারোমাসি সজিনা চাষ পদ্ধতি
- সাম্মাম বা রকমেলন চাষ পদ্ধতি
**চাষাবাদ ও কৃষি সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, খবর পড়তে আজই জয়েন করুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )” হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )” অথবা টেলিগ্রাম চ্যানেল ”বীজ ঘর ( কৃষি কথা )’‘ এ।
আমি নিতে চাই কিভাবে পাব?