মিষ্টি আলু চাষ পদ্ধতি

বাংলাদেশ সহ প্রায় সব নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে মিষ্টি আলু চাষ ভালো হয়। আমাদের দেশে প্রধান ফসলের মধ্যে না পড়লেও মিষ্টি আলুর চাষাবাদ বেশ লাভজনক।

তাই আজ আমারা এই নিবন্ধে মিষ্টি আলুর চাষাবাদে যেভাবে সুফল মিলবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

মিষ্টি আলু চাষ, যেভাবে সুফল মিলবে

সুনিষ্কাশিত সব ধরনের জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করা গেলেও নদীর চরের পলিমাটিতে কন্দাল জাতীয় এই ফসল ভালো জন্মে।

এছাড়া দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি মিষ্টি আলু চাষের জন্য উত্তম। তবে মাটির অম্লতার মান ৬.০ এর মধ্যে হওয়া উচিত।

জমি তৈরি ও চারা রোপণ

মিষ্টি আলু চাষাবাদের জমি ভালো ভাবে ৪-৫ টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে তৈরি করতে হবে। সাধারণত বড় ঢেলা ভেঙে দিতে হয়।

আমাদের দেশে কার্তিক থেকে মধ্য অগ্রহায়ন বা মধ্য অক্টোবর থেকে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত মিষ্টি আলুর কাটিং বা লতা লাগানোর উপযুক্ত সময়।

এছাড়া…

  • লতার মাথা থেকে ১ম ও ২য় খন্ড বপন করা উত্তম।
  • প্রতি খণ্ড ২৫ থেকে ৩০ সেমি. লম্বা হতে হবে।
  • সমতল পদ্ধতিতে লাইন করে লাগাতে হবে যাতে ২-৩টি গিট মাটির নীচে থাকতে হয়।
  • সমান্তরালভাবে শুইয়ে দিয়ে উপরের অংশ বাঁকিয়ে খাঁড়া করে দিতে হবে।
  • লাইন-লাইন দূরত্ব ২৪ ইঞ্চি এবং লতা-লতার দূরত্ব ১২ ইঞ্চি রাখতে হবে।
  • প্রতি শতকে ২২০-২৩০টি লতার প্রয়োজন হয়।
  • আগার খণ্ড (অগ্রীয় কুঁড়িসহ) সবচেয়ে বেশি ফলন দেয়।
  • বপনের সময় আবহাওয়া শুকনো থাকলে কয়েকটি পাতা ছাঁটাই করে দিতে হবে।
  • রস না থাকলে কাটিং/চারার গোড়ায় পানি দিতে হবে।
  • বীজ বপন করার আগে জমির আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।

তবে বেশি বয়স্ক খণ্ড বীজ বা কাটিং হিসেবে ব্যবহার বর্জনীয়। মাঝখানের খণ্ড লাগানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে, যাতে গোড়ার দিক মাটিতে পোঁতা হয়।

সার প্রয়োগ ও সেচ পদ্ধতি

মিষ্টি আলুর চাষাবাদে জমিতে, প্রতি শতকে ইউরিয়া ৬০০ গ্রাম, টিএসপি ৫০০ গ্রাম, এমপি ৭৩০ গ্রাম, গোবর ৪০ কেজি প্রয়োগ করতে হয়। তবে…

  • জমি তৈরির শেষ চাষের সময় সব গোবর, টিএসপি ও অর্ধেক ইউরিয়া ও অর্ধেক পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে।
  • চারা রোপণের ৬০ দিন পর অবশিষ্ট ইউরিয়া ও পটাশ সার সারির পার্শ্বে প্রয়োগ করতে হবে।
  •  জমির আর্দ্রতার উপর নির্ভর করে ২-৩টি সেচ দিতে হবে।
  • ইউরিয়া সার পার্শ্ব প্রয়োগের সময় ২ বার গাছের গোড়া বেঁধে দিতে হবে।
  • সার প্রয়োগ করার পর প্রয়োজনে জমিতে সেচ দিতে হবে।

পরিচর্যা…

  • মিষ্টি আলুর ক্ষেত লতা দিয়ে পরিপূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
  • অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি দ্রুত বের করে দেয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
রোগবালাই ও পোকামাকড় দমন :

মিষ্টি আলুর রোগবালাই খুবই কম, উইভিল নামক একটিমাত্র পোকা ছাড়া অন্যান্য পোকা ও রোগ নাই বললেই চলে।

  • মিষ্টি আলু গাছের গোড়ার আলুতে মাটি তুলে দিলে উইভিল পোকা দমন করা যায়।
  • মাটিতে লতা বপনের ৭ থেকে ১৫ দিন পরপর মোট ৪ বার সুমিথিয়ন কীটনাশক ওষুধ প্রয়োগ করে এই পোকা দমন করা যায়।
  • এই পোকা কন্দমূলের ভিতর আঁকাবাকা সুড়ঙ্গ করে ক্ষতি করে থাকে।
  • উইভিল আক্রান্ত কন্দমূল খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়ে।

এছাড়া…

মিষ্টি আলুর কান্ড পচা রোগ দমনে কপার অক্সিক্লোরাইট জাতীয় ছত্রাক নাশক প্রয়োগ করতে হয়। পাতায় দাগ পড়া রোগ দমনে ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক পানিতে মিশিয়ে ১২ দিন পরপর স্প্রে করা।

ফসল সংগ্রহ

জাত বা চাষ পদ্ধতি, মাটির অবস্থা ও আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে হেক্টরপ্রতি মিষ্টি আলুর ফলন হয় ২০-৫০ টন। চারা রোপণের ১৩০-১৫০ দিনের ভেতর মিষ্টি আলু তুলে সংগ্রহ করা যায়।

তবে মার্চ মাসের মধ্য ফসল সংগ্রহ করা উচিত। কন্দমূল টেনে ছিড়া যাবে না। ধারালো চাকু দিয়ে কেটে কন্দমূল লতা থেকে আলাদা করা উচিত।

–লেখাটির বিভিন্ন তথ্য কৃষি তথ্য সার্ভিস ও অনলাইন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।  বগ্লে প্রকাশিত কোনও তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।

আরো পড়ুন … 

**চাষাবাদ ও কৃষি সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, খবর পড়তে আজই জয়েন করুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )”  হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )” অথবা  টেলিগ্রাম চ্যানেল  ”বীজ ঘর ( কৃষি কথা )’‘ এ। 

মতামত দিন

Item added to cart.
0 items - 0.00
Need Help?