সঠিক টমেটো চাষ পদ্ধতি ( রোগ বালাই ও প্রতিকার )

টমেটো চাষ এর জন্য মাঝারি উষ্ণ ও শুষ্ক পরিবেশ দরকার। শীতকালীন সবজি টমেটোর চাষাবাদ এখন সারা বছরের করা যায়।

আমাদের দেশে সারা বছর ফলে এমন কিছু আধুনিক উচ্চফলনশীল জাতের টমেটো উদ্ভাবন করা হয়েছে, যেগুলো ভালো ফলন দিচ্ছে।

সব মিলিয়ে এ দেশে এখন পঞ্চাশটিরও বেশি জাতের টমেটো চাষ হচ্ছে।

বীজ ঘর ডটকমের কৃষি কথা বিভাগে আমরা কৃষি ভিত্তিক নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। আজ আমারা এই নিবন্ধে টমেটোর চাষাবাদের বিভিন্ন দিক নিয়ে আদ্যোপান্ত আলোচনা করব।

আধুনিক টমেটো চাষ পদ্ধতি

সব ধরনের মাটিতে টমেটো চাষাবাদ হলেও উর্বর দোঁআশ মাটি সবচেয়ে উপযুক্ত। তবে উপযুক্ত পরিচর্যায় বেলে দোঁআশ থেকে এটেল দোঁআশ সব মাটিতেই টমেটো ভালো জন্মে।

কার্তিকের শেষ সপ্তাহ থেকে অগ্রহায়ণের প্রথম সপ্তাহ ( অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ) টমেটো চারা লাগানোর সঠিক সময়।

টমেটোর ভালো ফলনের জন্য দিনের তাপমাত্রা ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এবং রাত্রিকালীন তাপমাত্রা ১৫ থেকে ২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থাকা প্রয়োজন।

তাই বাংলাদেশে শীতকালে টমেটো চাষের জন্য উপযুক্ত সময়।

টমেটোর উল্লেখযোগ্য জাত-

আমাদের দেশে চাষাবাদযোগ্য টমেটোর অনেক উন্নত জাত রয়েছে। তবে মৌসুম অনুসারে টমেটোর জাতকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়ছে।

  • এরমধ্যে আগাম জনপ্রিয় জাতসমূহ হলো- বারি টমেটো ৪, বারি টমেটো ৫ ইত্যাদি।

    হাইব্রিড টমেটো বীজ
    টমেটো বীজ (হাইব্রিড) কিনুন
  • টমেটোর নাবি মৌসুমি জাতসমূহ হলো- বাহার, রোমা ভিএফ, সুরক্ষা, রাজা ইত্যাদি।
  • মাঝ মৌসুমি জাতসমূহ হল মানিক, মহুয়া, রতন, বারি টমেটো-৩, বারি টমেটো-৬, , বারি টমেটো-৭, বারি টমেটো-৯ ইত্যাদি।
  • এছাড়াও গ্রীষ্মকালীন কিছু টমেটোর জাত রয়েছে। তাঁর মধ্যে রয়েছে শ্রাবণী, বারি টমেটো-৪, বারি টমেটো-১০ ইত্যাদি।
  • এছাড়াও অন্যান্য জাতের মধ্যে রয়েছে হীরা, মারগ্লোব, রূপালি, সাথী, সবল, মিন্টু, লাভলী, ডেলট ইত্যাদি।

বছরের যে কোন সময় টমেটোর বীজ অথবা চারা বপন করলে গাছ হয় এমনকি সেসব গাছে ফুলও আসে। কিন্তু সব জাতের গাছে ফল ধরে না। এজন্য সারা বছর চাষের উপযোগি জাতের টমেটো চাষ করতে হয়।

বীজতলা ও চারা তৈরি

টমেটোর চাষাবাদ করা হয় চারা তৈরি করে; এজন্য বীজতলায় বীজ বুনে চারা তৈরি করে নিতে হয়।

যেভাবে টমেটোর চারা তৈরি করবেন…

  • আলো বাতাসযুক্ত উঁচু স্থানে ভালভাবে মাটি চাষ দিয়ে বীজতলা তৈরি করতে হবে।
  • চাষের পর মাটি সমতল করে ১ মিটার চওড়া করে বেড বানাতে হবে। বেড খুব বেশি লম্বা না করে ৩-৫ মিটার করা ভাল।
  • ভালো মানের চারা উৎপাদনের জন্য (১ মিটার x ৩ মিটার) প্রতিটি বীজতলায় ৫০ গ্রাম বীজ ঘন করে বুনতে হবে।
  • শুকনা মাটিতে বীজ বুনলে করে সেচ দেয়া উচিত নয়, এতে মাটির চটা বেঁধে চারা গজাতে অসুবিধা সৃষ্টি হয়।
  • তাই সেচ দেয়া মাটির জো অবস্থা এলে বীজ বপন করা উত্তম।
  • জুলাই মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাসে টমেটোর আগাম জাতের বীজ বোনার উপযুক্ত সময়।
  • এছাড়া মাঝ মৌসুমি জাত সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাস।
  • এবং নাবী জাতের ক্ষেত্রে সময় হল জানুয়ারী মাস।
  • টমেটো চাষে সফলতার জন্য বীজ বোনার আগে বীজকে শোধন করে নিতে হবে।
  • বীজ বোনার আগে প্রয়োজনমতো পানিতে বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ ছত্রাকনাশক মিশাতে হবে।
  • বীজ শোধনের ফলে চারার বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে রক্ষা পেতে পারে।
  • বীজ তলার মাটি চাষ দিয়ে তাতে জৈব সার মিশিয়ে পলিথিন দিয়ে দু’সপ্তাহ ভাল করে ঢেকে রেখে দিলে সূর্যের তাপে মাটিতে থাকা অনেক জীবাণু মরে যায় ও বীজতলার মাটি শোধন হয়ে যায়।
  • সময় না থাকলে বীজতলার মাটির উপরে ৩ ইঞ্চি পুরু করে কাঠের গুঁড়া বিছিয়ে আগুন দিলে সে তাপেও রোগ জীবাণু নষ্ট হয়।
  • সম্ভব হলে বীজতলায় বোনার আগে অংকুরোদগম পরীক্ষাও করে নেয়া উচিত।
  • বীজ থেকে চারা গজাতে ৬-১৪ দিন লাগে।

অতিরিক্ত বৃষ্টি ও রোদের হাত থেকে চারা রক্ষা করতে প্রয়োজন পলিথিন ও চাটাই এর আচ্ছাদন ব্যবহার করতে হবে। প্রতি শতক জমিতে চারা বপনের জন্য ১ গ্রাম বীজ বুনতে হবে।

জমি তৈরি ও চারা রোপন

টমেটোর ভালো ফলন অনেকটাই নির্ভর করে জমি তৈরি করার উপর।

  • টমেটো চাষের জমি ৪ থেকে ৫ বার চাষ এবং মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে তৈরি করতে হবে।

    উচ্চফলনশীল চেরি টমেটো বীজ
    উচ্চফলনশীল চেরি টমেটো বীজ কিনুন
  • গ্রীষ্মকালে টমেটো চাষের জন্য ২০-২৫ সেন্টিমিটার উঁচু এবং ২৩০ সেন্টিমিটার চওড়া বেড তৈরি করতে হয়।
  • সেচ দেওয়ার সুবিধার জন্য দু´টি বেডের মাঝে ৩০ সে.মি. নালা রাখতে হবে।
  • চারার বয়স ৩০-৩৫ দিন অথবা ৪-৬ পাতা বিশিষ্ট হলে জমিতে রোপণ করতে হবে।
  • প্রতিটি বেডে দুই সারি করে চারা রোপণ করতে হবে।
  • এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব ৬০ সে.মি. রাখতে হবে। এ জন্য চারা তোলার আগে বীজতলার মাটি ভিজিয়ে নিতে হবে।
  • বীজতলা থেকে চারা অত্যন্ত যত্নসহকারে তুলতে হবে যেন চারার শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং কিছু মাটিসহ চারা ওঠাতে হবে।
  • বিকালের চারা বপন করা উত্তম। চারা লাগানোর পর হালকা সেচ প্রদান করতে হবে।
  • এবং চারা বপনের কয়েক দিন পর পর্যন্ত নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে।

শীতকালীন টমেটোর জন্য মধ্য কার্তিক থেকে মাঘের ১ম সপ্তাহ (নভেম্বর থেকে মধ্য জানুয়ারি) পর্যন্ত চারা রোপণ করা যায়। তবে আগাম চাষের জন্য রোপণ সময় এগিয়ে আনতে হবে।

আগাম চাষের জন্য ভাদ্র-আশ্বিন মাসে এবং নাবি চাষের ফাল্গুণ মাসে এবং গ্রীষ্মকালীন চাষের জন্য জন্য চৈত্র-বৈশাখ মাসে চারা রোপণ করতে হবে।

সার প্রয়োগ

ভালো ফলন পেতে হলে টমেটো চাষের জমিতে যতটুকু সম্ভব জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া মাটি পরীক্ষা করে নিয়ম মতো সার প্রয়োগ করতে হয়।

প্রতি শতকে টমেটো ক্ষেতে ২ কেজি থেকে ২.৪ কেজি ইউরিয়া, টিএসপি প্রতি শতকে ১.৬ কেজি থেকে ২ কেজি, এমওপি প্রতি শতকে ০.৮ কেজি থেকে ১.২ কেজি ও গোবর প্রতি শতকে ৩০ কেজি থেকে ৪৫ কেজি প্রয়োগ করতে হবে।

এছাড়…

  • অর্ধেক গোবর সার ও সবটুকু টিএসপি সার শেষ চাষের সময় জমিতে ছিটিয়ে দিতে হবে।
  • অবশিষ্ট গোবর চারা লাগানোর পূর্বে গর্তে প্রয়োগ করতে হবে।
  • ইউরিয়া ও এমওপি সমান দুই কিস্তিতে পার্শ্বকুশী ছাঁটাই এরপর চারা লাগানোর তৃতীয় সপ্তাহে ও পঞ্চম সপ্তাহে রিং পদ্ধতিতে প্রয়োগ করতে হয়।
  • ঘাটতি থাকলে জিপসাম, জিঙ্ক সালফেট, বোরিক এসিড পাউডার এবং ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারও প্রয়োগ করতে হবে।

সেচ ও পরিচর্যা

উচ্চফলনশীল কালো টমেটো বীজ (হাইব্রিড)
উচ্চফলনশীল কালো টমেটো বীজ (হাইব্রিড) কিনুন
  • শুষ্ক মৌসুমে চাষ করলে টমেটোতে পানি সেচ দেয়া প্রয়োজন। ফসল ও মাটির অবস্থা বিবেচনা করে সেচ দিতে হবে।
  • বৃষ্টির পানি নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • বর্ষা মৌসুমে তেমন একটা সেচের প্রয়োজন হয় না। টমেটো গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না।
  • টমেটোর জমি নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
  • প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির সার প্রয়োগের আগে পার্শ্বকুশিসহ মরাপাতা ছাটাই করে দিতে হবে।
  • হরমোন প্রয়োগ সুবিধা এবং বাতাসে যেন হেলে না পড়ে সেজন্য বাঁশের কঞ্চি দ্বারা ঠেকনা দিতে হবে।
  • প্রতিটি সেচের পরে মাটির উপরি ভাগের চটা বা চাকামাটি ভেঙে দিতে হবে যাতে মাটিতে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করতে পারে।
  • মরা পাতা ছাঁটাইসহ ‘অ’ আকৃতি বাঁশের খুটি টমেটো গাছের জন্য অতি প্রয়োজনীয় একটি কাজ।

এ ছাড়া ভাইরাস রোগ দেখা দিলে গাছ তুলে ফেলতে হবে। অন্যান্য রোগ প্রতিকারের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। তেমনি পোকামাকড় দেখা দিলেও সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে।

পোকামাকড় ও রোগদমন

বিভিন্ন ধরণের পোকা টমেটো ক্ষেতে আক্রমণ হয়ে থাকে। এর মধ্যে ফল ছিদ্রকারী পোকা, কাটুই পোকা, পাতা সুড়ঙ্গকারী পোকা, বিছা পোকা, এফিড বা জাব পোকা, শ্যামা পোকা, ছাতরা পোকা এবং থ্রিপস পোকা অত্যন্ত ক্ষতিকর।

এছাড়া ভাইরাস রোগ হলে নির্দিষ্ট পোকা শনাক্ত করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

  • আর যদি গাছ বেশি আক্রান্ত হয় তাহলে গাছ তুলে ফেলে দিতে হবে।
  • টমেটো গাছের পাতায় ছত্রাক আক্রমণ করলে মেকোজেব, কার্বোন্ডিজম, মেটালিস্কিম ইত্যাদি গ্রুপের ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।
  • গাছের পাতা কুঁকড়ালে সাত দিন পর পর এবামেকটিন গ্রুপের কীটনাশক দিতে হবে।
  • কোসাইড প্রতি লিটার পানিতে ৩ গ্রাম মিশিয়ে গাছের গোড়ায় দিলে গোড়া পচবে না।
  • ছত্রাকনাশক কেবল স্প্রে নয়, গাছের মাটিতেও দেওয়া যায়।
  • টমেটো গাছে সাদা মাটি ভাইরাস ছড়ায়। তাই রিপকড, ইমিটাপ কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।

টমেটোর ওপরের দিকে পচে যায় ছত্রাকের কারণে। নিচের দিকে পচে যায় ক্যালসিয়ামের অভাবে। ক্যালসিয়ামের জন্য এক লিটার পানিতে খাবার চুন ৩০ গ্রাম মিশিয়ে তার ওপরের পানির সঙ্গে আরও পানি মিশিয়ে মাটিতে দিতে হবে।

টমেটো চাষী ভাইদের জন্য রোগ বালাই নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ

পরামর্শ গুলো দিয়েছেন এ আর মালিক সীডের গবেষক কৃষিবিদ আব্দুল কাইয়ুম

টমেটো চাষের জন্য ভালো মানের বীজ সংগ্রহ করা, সুষম সার ব্যবহার করা, সঠিক দুরত্বে চারা রোপন করা ( গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২ ফুট এবং সারি থেকে সারি দুরত্ব ২.৫-৩ ফুট , বেডের উচ্চতা ৬ ইঞ্চি ।

পানির বিষয় সবসময় সর্তক থাকবেন যাতে ক্ষেতে পানি জমে না থাকে।

শিডিউল স্প্রে

  • চারা মূল জমিতে লাগানোর ৪/৫ দিন পরে কার্বেন্ডিজম (2gm/L) গ্রুপের ছত্রাকনাশক স্প্রে করবেন ।
  •  চারা রোপণের ৭ থেকে ১০ দিন পরে হলুদ রঙের ফাঁদ শতাংশ প্রতি ১/২টি দিয়ে দিবেন।
  • চারা লাগানোর ৩০ দিন পর থেকে ১০-১২ দিন পর পর ১ বার করে ইমিডাক্লোরোপ্রিড (1ml/L) গ্রুপের কীটনাশক + কার্বেন্ডিজম (2gm/L) গ্রুপের ছত্রাকনাশক স্প্রে করবেন ৪০ দিন পর্যন্ত।
  • তারপর ৬০ দিন পর থেকে আবার ১০ দিন পর পর স্প্রে করবেন।
  • চারা রোপনের ৪০ দিন থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত শুধু ছত্রাকনাশক দিবেন, কীটনাশক দিবেন না( যদি পোকার আক্রমন অতিরিক্ত না হয় তাহলে)
  • যদি তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি বেশি হয় তাহলে সুড়ঙ্গকারী পোকার আক্রমন দেখা দিতে পারে তাই শিডিউল স্প্রে ইমিডাক্লোরোপিড গ্রুপের কীটনাশক এবং কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশকের সাথে ডেল্টামেথ্রিন(1ml/L) গ্রুপের এবং স্পিনোসাইড( 1ml) গ্রুপের কীটনাশক স্প্রে করবেন।
  • চারা লাগানোর ৩৫/৪০দিন পর থেকে ১০ দিন পর পর ১ বার করে [কার্বেন্ডিজম (2gm/L)+স্ট্রেপটোমাইসিন সালফেট(0.2gm/L)]
  • অথবা [কার্বেন্ডিজম (2gm/L)+(বিসমার্থিওজল+কাসুগামাইসিন(2gm/L)]
  • অথবা কার্বেন্ডাজিম(2gm/L)+ ক্লোরো আইসো ব্রোমাইন সায়ানুরিক এসিড গ্রুপের(1gm/L) ছত্রাকনাশক স্প্রে করবেন ।

[পুনশ্চ- এভাবে স্প্রে করলে আশা করি ভালো ফলাফল পাবেন। ছত্রাকনাশক এবং কীটনাশক মাত্রা কোম্পানি অনুযায়ী কমবেশি হতে পারে]

টমেটো গাছের রোগ- বালাই জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
  • চারা ধ্বসা রোগের জন্য= রোগ বালাই মুক্ত বীজতলা সংগ্রহ করা।
  • জমি প্রস্তুতির সময় শতক প্রতি ১ কেজি সরিষার খৈল এবং শতাংশ প্রতি ৩/৪ কেজি ট্রাইকো- কম্পোস্ট দিতে পারেন।
  • এরপরও নিয়ন্ত্রণ না হলে কার্বেন্ডাজিম( 2gm/L) গ্রুপের অথবা (ম্যানকোজেব+ মেটালেক্সিল) গ্রুপের ছত্রাকনাশক স্প্রে করুন।
  • বুশি স্টান্ট বা পাতা কুঁকড়া & ছোট হওয়া রোগের জন্য = রোগ মুক্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা। ১-৫% হলে গাছ তুলে ফেলে ধ্বংস করা এবং বাহক পোকা দমনে জন্য ইমিডাক্লোরোপিড গ্রুপের (1ml/L) অথবা ডাইমেথেয়েট (1ml/L) গ্রুপের কীটনাশক স্প্রে করুন।
  • আগাম ধ্বসা রোগের জন্য = সময়মত সুষম সার & পানি সেচ দেয়া। পাতায় ১/২ টি চিহ্ন দেখা গেলে ম্যানোজেব( 2gm/L) অথবা (ম্যানকোজেব+মেটালেক্সিল) ছত্রাকনাশক স্প্রে করুন।
  • নাবী ধ্বসা রোগের জন্য = কুয়াশা ও মেঘলা আবহাওয়া বেশি হয়। প্রতিরোধক হিসেবে (ম্যানকোজেব+ মেটালেক্সিল) 2gm/L অথবা সিকিউর 2gm/L
  • অথবা ( ম্যানকোজেব+ ডায়মেটামফ) অথবা ( ম্যানকোজেব+ সাইমোক্সালি) গ্রুপের ছত্রাকনাশক স্প্রে করবেন।
  • টমেটো লিফ কার্ল রোগের জন্য = আক্রান্ত গাছ ১-৫% হলে তুলে ফেলে ধ্বংস করুন। তারপর বাহক পোকা দমনের জন্য ইমিডাক্লোরোপিড(1ml/L) গ্রুপ বা ডায়মেথেয়েট(1ml/L) স্প্রে করুন।
  • পাতা সুরঙ্গকারী পোকা দমনের জন্য = ডেল্টামেথ্রিন (1ml/L)গ্রুপের ডেসিস অথবা স্পিনোসাইড ( 1ml/L) কীটনাশক স্প্রে করবেন।
  • ফল ছিন্দ্রকারী পোকা দমনের জন্য = ৫০/৬০ গ্রাম নিমবীজ ভেঙে ১০/১২ ঘন্টা পানিত ভিজিয়ে রেখে ছেকে ১০ দিন পর পর ৩ বার স্প্রে করুন টমেটো ফুল আসার পর। বেশি আক্রমণ করলে এমামেকটিন বেনজোয়েড(1gm/L) অথবা সাইপামেথ্রিন (1ml/L) গ্রুপের কীটনাশক স্প্রে করুন।
  • ব্লোজম ইন্ড রট রোগের জন্য = এটি সাধারণত ক্যালসিয়াম অভাবের কারণে হয়ে থাকে, তাই অম্লীয় মাটির ক্ষেতে শতাংশ প্রতি ৩.৫/৪ কেজি ডলোচুন প্রয়োগ করলে খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।।
  • টমেটো বাক আই রোগের জন্য = ( ম্যানকোজেব+ মেটালেক্সিল) 2gm/L অথবা সিকিউর 2gm/L স্প্রে করবেন।
  •  গাছের কান্ড বা ডাঁটা পঁচা হলে= ( ম্যানকোজেব+ ডাইমেটামরফ) বা ( ম্যানকোজেব + সাইমোক্সানিল) বা ( টেবুকোনাজল+ ট্রাইফ্লক্সিস্ট্রবিন) গ্রুপের ছত্রাকনাশক স্প্রে করবেন।
  • ফল ফেটে যাওয়া জন্য = খরা অবস্থায় হঠাৎ পানি দিবেন না। সঠিক দূরত্ব চারা রোপণ করা, সুষম সার ব্যবহার করবেন এবং সলুবোর বোরন 2gm/L স্প্রে করবেন।
  •  পাতা, ফুল,ফল,পত্রবৃন্ত,বৃন্ত পচা রোধের জন্য ম্যানকোজেব/ কার্বেন্ডিজম (2gm/L) গ্রুপের ছত্রাকনাশক স্প্রে করবেন ।
  • ফুল,ফল বৃদ্ধির জন্য [ চিলেকেট জিংক (1gm/L) + সলুবোর বোরন (2gm/L)] অথবা Nitrobenzene গ্রুপের (ফ্লোরা 2ml/L) গ্রুপের মাইক্রোনিউট্রিয়েন ।
  • মূলে নেমাটোডা আক্রমণ করলে এটা পরিচর্যা করতে হবে জমি তৈরির সময় করতে হবে চারা লাগানোর ১৫ দিন আগে শতাংশ প্রতি ৮০-৮৫ গ্রাম হারে ব্লিচিং পাউডার ছাই বা বালুর সাথে মিশিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে ছিটিয়ে দিন এবং জমি তৈরির সময় শতাংশ প্রতি ১২০-১৩৫ গ্রাম হারে কার্বোফুরন গ্রুপর কীটনাশক ছাই বা বালুর সাথে মিশিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে ছিটিয়ে দিন ।
  • ছত্রাকের কারনে টমেটো গাছ ঢলে পড়লে কার্বেন্ডিজম (2gm/L)/কপার-অক্সিক্লোরাইড(2gm/L) গ্রুপের ছত্রাকনাশক গোড়ায় স্প্রে করবেন ।
  • .ব্যাকটেরিয়ার কারণে টমেটো গাছ ঢলে পড়লে [স্ট্রেপটোমাইসিন সালফেট(0.2gm/L)]
  • অথবা [(বিসমার্থিওজল+কাসুগামাইসিন(2gm/L)] অথবা ক্লোরো আইসো ব্রোমাইন সায়ানুয়িক এসিড গ্রুপের ব্যাকটেরিয়ানাশক গোড়ায় স্প্রে করবেন ।

(পুনশ্চ- এক ক্ষেতে সকল স্প্রে করতে হবে বিষয় টা এমন না, শিডিউল স্প্রে গুলো শুধু নিয়মমাফিক দিতে হবে, আর এর বাইরে যার ক্ষেতে যেই রোগ হবে তিনি সেই অনুযায়ী স্প্রে করবেন, আশা করি বুঝতে পেরেছেন)

টবে টমেটো চাষ

শৌখিন বাগানিরা ছাদ কিংবা বেলকোনিতে টমেটো চাষ করতে পছন্দ করেন। টবে টমেটোর চাষে ছোটখাটো কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় ছাদ বাগানিদের।

তাই,জেনেনিন কিভাবে টবে বা ছাদ বাগানে টমেটো চাষ করবেন…

মাটি …
  • টবে টমেটো চাষের জন্য ৫০ শতাংশ মাটি, ২০ শতাংশ বালু, ১০ শতাংশ জৈব সার, ১০ শতাংশ গোবর সার, শিং কুচি ৫ শতাংশ, ৫ শতাংশ হাড়ের গুঁড়া, অল্প একটু নিম খৈল দিয়ে মাটি তৈরি করতে হবে।
  • ভাত পচানো মাটি দিলে ভালো সুফল পাওয়া যায়।
  • এছাড়া মাটির সঙ্গে জৈব সার, ভার্মি কম্পোসের পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে।
  • তবে অবশ্যই ট্রাইকোডারমা বা অন্য কোনো ছত্রাকনাশক দিতে হবে।
  • সব কিছু দিয়ে কিছুদিন মাটি রেখে দিয়ে তারপর গাছ লাগানো উত্তম।
  • ৭-৮ ঘণ্টা রোদ পড়ে এমন জায়গায় টমেটো গাছ ভালো হয়।
  • টমোটো গাছ খুব নরম; পানি বেশি দিলে গোড়া পচে যায়। তাই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
  • স্যাঁতসেঁতে মাটি থাকলে টমেটো গাছের ঢলেপড়া রোগ হতে পারে।
  • শীতকালে টমেটোর ফলন ভালো হয়। ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় টমেটো ভালো হয়।
  • তবে কৌশল জানা থাকলে সারা বছর টমেটোর ফলন সম্ভব।
চারা ও পরিচর্যা
  • বীজ দিয়ে চারা করলে বীজ শোধন করে নিতে হবে।
  • শুধু কাকোপিট বা ভার্মিতে চারা দ্রুত বড় হয়।
  • বাজার থেকে চারা কিনলে ইমিটাফ পানিতে গুলে সে পানিতে দশ মিনিট গোড়া ভিজিয়ে রেখে তারপর লাগাবেন।
  • পাশাপাশি চারার দূরত্ব হবে ২৪ ইঞ্চি, অন্যদিকে ১৫ ইঞ্চি, এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
  • কারণ ঘন করে চারা লাগালে ভালো ফলন পেতে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে।
  • ৪০ দিন বয়সি চারা লাগালে ভালো ফল পাবেন।
  • প্রথমে মিনি পটে চারা তারপর একটু বড় পটে নিলে ভালো করবেন।
  • ১০ ইঞ্চি টবে একটি, একটি ড্রামে বড়জোর দুটি গাছ থাকতে পারে।
  • অক্টোবরে টমেটোর আবাদে হাত দেওয়া উত্তম। তাহলে অনায়াসে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খাওয়া যাবে।
  • টমেটো গাছ শুয়ে থাকলে ফলন কম হবে।
  • শুরু থেকেই লাঠি বেঁধে দিন। উত্তর পাশে লাঠি বাঁধতে হবে।
  • টমেটো গাছের নিচের দিকে ডালপালা কেটে দিলে ফলন বেশি হবে; গাছ হালকা হবে।
  • কিছু কাঁচা টমেটো খেয়ে ফেলতে পারেন। তাহলে অন্যগুলো দ্রুত বড় হবে।

টমেটো গাছের খাবার হলো সরিষা খৈল, পচা পানি, সবজির পানি, অনুখাদ্য, ভার্মি কম্পোস্ট, জৈব সার, ড্যাপ সার, নিম খৈল, হাড়ের গুঁড়া ইত্যাদি। তবে মাঝে মাঝে ইপসম স্বল্প পানিতে গুলে স্প্রে করলে সুফল পাওয়া সম্ভব। ফুল আনার জন্য মিরাকুলান এবং অন্য একটি পিজি আর স্প্রে করা যায়।

ফলন:

টমেটো পাকা ও কাঁচা উভয়ই অবস্থায়ই তোলা যায়। পুষ্ট ও রোগবালাই মুক্ত টমেটো সংগ্রহ করতে হবে।

জাত ও লাগানোর সময়ের উপর নির্ভর করে ৬০ -৮০ দিনের মধ্যেই টমেটোর ফসল সংগ্রহ করা যায়।

সঠিক পরিচর্যায় প্রতি একরে ১০ থেকে ১৫ মেট্রিক টন ফলন পাওয়া সম্ভব।

ফলের নিচে ফুল ঝরে যাওয়ার পর যে দাগ থাকে ঐ স্থান থেকে লালচে ভাব শুরু হলেই বাজারজাতকরণের জন্য ফল সংগ্রহ করতে হবে।

তবে দূরে পাঠানোর জন্য একেবারে পাকা টমেটো তোলা উচিত নয়।

–লেখাটির বিভিন্ন তথ্য কৃষি তথ্য সার্ভিস ও অনলাইন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।  বগ্লে প্রকাশিত কোনও তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।

আরো পড়ুন … 

**চাষাবাদ ও কৃষি সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, খবর পড়তে আজই জয়েন করুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )”  হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )” অথবা  টেলিগ্রাম চ্যানেল  ”বীজ ঘর ( কৃষি কথা )’‘ এ। 

মতামত দিন

Item added to cart.
0 items - 0.00
Need Help?