সঠিক আলু চাষ পদ্ধতি জেনে নিন

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ফসল আলু। অনুকূল আবহাওয়ার জন্য কিছু কিছু জেলায় ব্যাপক ভাবে আলু চাষ হয়। কার্তিক-অগ্রহায়ণ ঋতুচক্রের হেমন্তকালীন এ মাস গুলো এই ফসল চাষের উপযুক্ত সময়।

এদেশে যেসব জাতের আলুর চাষাবাদ হয় তার মধ্যে দেশি জাতের পাশাপাশি উচ্চফলনশীল উন্নত জাতও আছে।

বর্তমানে শতকরা ৬৫ ভাগ জমিতে আলুর উন্নত জাত এবং ৩৫ ভাগ জমিতে দেশি জাতের আলুর চাষাবাদ করা হয়। আজ আমারা এই নিবন্ধে আলু চাষ পদ্ধতির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করব।

জেনে নিন আলু চাষ এর নিয়ম-কাননগুলো

কার্তিক মাসে আলুর চাষাবাদের জমি তৈরি ও বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। হালকা প্রকৃতির মাটি অর্থাৎ বেলে দো-আঁশ মাটি আলু চাষ এর জন্য উপযুক্ত।

এছাড়া, আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি আশানুরূপ ফলন পেতে আলুর ভালো জাত নির্বাচন করতে হবে।

চাষের মৌসুম ও মাটির ধরন

শীতপ্রধান অঞ্চলের ফসল আলু নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলেও ভালো জন্মে। তবে, অ-নিরক্ষীয় অঞ্চলের শীত মৌসুমে (যেমন আমাদের দেশে) এই ফসলের চাষাবাদ ভালো হয়।

আমাদের দেশে…

  • উত্তরাঞ্চলে মধ্য-কার্তিক (নভেম্বর প্রথম সপ্তাহ), আর দক্ষিণাঞ্চলে অগ্রহায়ণ মাসের ১ম সপ্তাহ থেকে ২য় সপ্তাহে (নভেম্বর মাসের মধ্য থেকে শেষ সপ্তাহ) আলুর চাষাবাদের উপযুক্ত সময়।
  • ১৬-২১ ডিগ্রি তাপমাত্রা আলুর জন্য আদর্শ।
  • তবে গাছ বৃদ্ধির প্রথম দিকে অধিক তাপ ও শেষ দিকে অর্থাৎ কন্দ ধরা কালীন সময়ে কম তাপ থাকা বাঞ্ছনীয়৷
  • অল্প পরিমাণ বরফ পড়াও আলু সহ্য করতে পারে।
  • তবে অধিক শৈত্যে (-২০ হেত ৩০) কন্দের বৃদ্ধি থেমে যায় ও কোষের গঠন নষ্ট হয়ে যায়৷
  • মৌসুমে মাঝারি বৃষ্টিপাত ৩০ ইঞ্চি অর্থাৎ ৭৬২ মিলিমিটার আলুর জন্য উপযোগী।
  • অধিক বৃষ্টিপাতে আলু মোটেই ভালো হয় না; গাছের বৃদ্ধি থেমে যায়।
  • তবে পার্বত্য এলাকায় অধিক বৃষ্টিপাত হলেও পানি দ্রুত সরে যায় ও ঠাণ্ডা পরিবেশ বিরাজমান থাকে বলে সেরূপ পরিবেশে আলুর চাষ করা যায়৷

সুনিষ্কাশনযুক্ত দোআঁশ ও বেলে-দোআঁশ মাটি আলুর চাষাবাদের সব চাইতে উপযোগী। এছাড়, এটেল-দোআঁশ মাটিতেও আলুর চাষ করা যায়। তবে, এই ধরনের মাটিতে আলুর ফলন তেমন ভালো হয় না।

জমি তৈরি ও বীজ বপন

আলুর চাষাবাদের জমির প্রকৃতি ভেদে ৫ থেকে ৬ বার চাষ ও মই দিয়ে ভালোভাবে ওলট-পালট করে ঝুরঝুরা নিতে হবে।

কারণ ঢেলা যুক্ত ও আঁটসাঁট জমিতে আলুর বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।

আশ্বিন মাস হতে আলু চাষের জমি প্রস্তুতের কাজে হাত দেওয়া উত্তম। বীজ প্রত্যয়িত হলে বোনার আগে শোধন করতে হয় না।

অন্যথায় বীজ শোধন করে নেওয়া ভালো। তবে কাটা আলুর বীজ ব্যবহার করতে গেলে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

যেমন-

  • বীজ কাটার সময় ধারালো ছুড়ি দিয়ে লম্বালম্বি কাটতে হবে।
  • বীজের কাটা দিকটায় পরিষ্কার ঠাণ্ডা ছাই লাগিয়ে দিতে হবে৷
  • এই সমস্ত সাবধানতা অবলম্বন করলে বীজ পচে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

 বীজ বোনার পদ্ধতি

 বীজ বোনার পদ্ধতি

বোনার জন্য আলুর টিউবার অর্থাৎ কন্দ (আগের বছরের সুরক্ষিত অঙ্কুরিত বীজ) ব্যবহার করা হয়। আলু বীজ সাধারণত দুই সারি পদ্ধতিতে বোনা যায়।

  • প্রথম পদ্ধতি: প্রতি সারি বরাবর ৫-৭ সেন্টিমিটার মাটি সরিয়ে নিয়ে নালা প্রস্তুত করা হয়, তারপর সেই নালাতে নির্দিষ্ট দূরত্বে বীজ বোনে তা মাটি দ্বারা ঢেকে দেওয়া হয়।
  •  দ্বিতীয় পদ্ধতি: সারির মাটি না খুড়ে অর্থাৎ নালা না করে সারির দাগ বরাবর বীজ নির্দিষ্ট ব্যবধানে বপন করার পর দুই সারির মধ্যবর্তী জায়গা হতে মাটি টেনে উঁচু করে বীজ ঢেকে দেওয়া হয়।

এছাড়া… 

  • বীজ বোনার দূরত্ব ৬০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার (আস্ত আলু) এবং ৪৫ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার (কাটা আলু)৷
  • ২৫ থেকে ৩৫ গ্রাম ওজনের বীজ  বপন করা সবদিক থেকে উত্তম।
  • বীজহার নির্ভর করে রোপণ দূরত্ব ও বীজের আকারের উপর।
  • সাধারণত প্রতি হেক্টরে ১.৫ থেকে ২ টন বীজ আলুর প্রয়োজন হয় (একরে ৬০০-৮০০ কেজি)।
  • বীজ আস্ত বোনা ভালো, তবে আকারে বেশি বড় হলে কেটে দুইভাগ করে বপন করা যাবে।
  • ২-৩ সেন্টিমিটার সেই বীজ বোনার জন্য উত্তম এবং সেসব বীজ বোনার সময় কাটার প্রয়োজন পড়ে না।

দ্বিতীয় পদ্ধতিটিই বিজ্ঞানসম্মত, কেননা এতে জমির রস অধিক দিন বজায় থাকে এবং সারির মাটি আলগা থাকে বলে আলুর কন্দ বৃদ্ধিতে কোনো বাধার সৃষ্টি হয় না। অন্য দিকে প্রথমোক্ত পদ্ধতিতে নালার মাটি চাপ খাওয়া থাকে বলে স্কন্দের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে কন্দ অর্থাৎ আলুর আকার ছোট থেকে যায়৷

সার প্রয়োগ ও পরিমান

সারের চাহিদা সকল জমির জন্য সমান নয়। সারের পরিমাণ জমির অবস্থাভেদে কম-বেশি হতে পারে। তবে, হেক্টরপ্রতি ১০-১২ টন জৈব সার ব্যবহার করলে ফলন অনেক বেশি ভালো হয়।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, ফার্মগেট, ঢাকা কর্তৃক প্রকাশিত “সার সুপারিশ গাইড” অনুযায়ী বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য প্রয়োজনীয় সার ব্যবহার করতে হবে।

দুটি কারণে আলু চাষ এ সুষম সার প্রয়োগ করা অত্যাবশ্যক…

  • প্রথমত: সুষম সার প্রয়োগ করলে আলুর উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং উৎপাদিত বীজ আলুর গুণগত মান ভালো হয়।
  • দ্বিতীয়ত: গাছে কোনো খাদ্য উপাদানের অভাব জনিত লক্ষণ সৃষ্টি হলে আলু গাছে ভাইরাস রোগের উপস্থিতি বা লক্ষণ সনাক্ত করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

এক হেক্টর জমিতে আলু চাষ করতে ৩২৫ কেজি ইউরিয়া, ২২০ কেজি টিএসপি, ২৫০ কেজি এমওপি, ১৫০ কেজি জিপসাম এবং ১৪ কেজি দস্তা সার প্রয়োজন।

তবে, গোবর, অর্ধেক ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি, জিপসাম ও জিঙ্ক সালফেট (প্রয়োজন বোধে) রোপণের সময় জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে৷

বাকি ইউরিয়া রোপণের ৩০-৩৫ দিন পর অর্থাৎ দ্বিতীয় বার মাটি তোলার সময় প্রয়োগ করতে হবে৷

অম্লীয় বেলে মাটির জন্য ৮০-১০০ কেজি/হেক্টর ম্যাগনেসিয়াম সালফেট এবং বেলে মাটির জন্য বোরন ৮-১০ কেজি/হেক্টর প্রয়োগ করলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে।

আলু চাষে সার প্রয়োগ

সেচ ব্যবস্থাপনা

শীতকালীন শুষ্কের জন্য আলু চাষ এ সেচের প্রয়োজন হয়। পানির প্রাপ্যতা কম হলে আলুর ফলন মারাত্মকভাবে কমে যায়। এদেশে অনেক চাষী বিশেষ করে যারা দেশী আলুর চাষ করেন তারার জমিতে সেচের দিতে চান না।

কিন্তু আলুর অধিক ফলনশীল জাতে অধিক সার ব্যবহার করলে ক্ষেতে পরিমাণ মতো পানি ব্যবহার করা আবশ্যক।

আলুর ক্ষেত সব সময় রসযুক্ত থাকবে সেই বিবেচনায় নিয়মিত সেচ দেওয়া উত্তম। মাটির প্রকারভেদের উপর নির্ভর করে কমপক্ষে ২/৩ বার সেচ দিতে হবে।

যেভাবে সেচ দিতে হবে…

  • সেচ প্রয়োগ ১ঃ বীজ বোনার পর জমিতে পরিমিত রস না থাকলে সেচ দেওয়া উত্তম, তবে খেয়াল রাখতে হবে ক্ষেতে কোনভাবেই পানি না দাঁড়ায়। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন পানিতে নালা/ভেলির ২/৩ অংশ পর্যন্ত ডুবে যায়।
  • সেচ প্রয়োগ ২ঃ স্টোলন বের হওয়ার সময় ২০থেকে ২৫ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় সেচ প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
  • সেচ প্রয়োগ ৩ঃ  ৪০থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে গুটি বের হওয়া পর্যন্ত এবং পরে আলু বৃদ্ধির সময় তৃতীয় বার সেচ দিতে হবে।
  • তবে জমি থেকে আলু উঠানোর ৭থেকে ১০ দিন পূর্বে মাটি ভেদে সেচ প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে।

উল্লেখ্য যে, দাঁদ রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য আলু বোনার পর ৩০ থেকে ৫০ দিনের সময়ে জমিতে কোন অবস্থায় রসের ঘাটতি এবং ৬০ থেকে ৬৫ দিনের পর রসের আধিক্য হতে দেয়া যাবে না।

এছাড়া এক গবেষণায় দেখা গেছে, বীজ আলু বোনার ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে একবার সেচ দিতে হবে। ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় সেচ এবং ৬০ থেকে ৬৫ দিনের মধ্যে আরেকটি সেচ দিতে হবে।

তবে দেশের উত্তরাঞ্চলে ৮-১০ দিন পর সেচ দিলে ফলন বেশি পাওয়া যায়।

পরিচর্যা 

আলুর ভালো ফলনের জন্য আগাছা পরিষ্কার, সেচ, সারের উপরি প্রয়োগ, মাটি আলগাকরণ বা কেলিতে মাটি তুলে দেওয়া, বালাই দমন এবং মালচিং করা আবশ্যক। সময়মতো সবগুলো কাজ করতে পারলে খরচ কমে আসে, ফলন বেশি হয়।

যা যা করবেন…

  • আলু গাছের উচ্চতা ১০-১৫ সেন্টিমিটার হলে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
  • দুই সারির মাঝে সার দিয়ে কোদালের সাহায্যে মাটি কুপিয়ে গাছের গোড়ায় তুলে দিতে হবে।
  • আলু ক্ষেতে ১০-১২ দিন পরপর এভাবে গাছের গোড়ায় মাটি তুলে না দিলে ভালো হয়।
  • বীজ বোনার ৬০ দিন পর্যন্ত আলুর ক্ষেত আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
  • গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দেয়া ও গোঁড়ার মাটি আলগা করে দেয়ার সময়ই আগাছা দমন হয়ে যায়।
  • আলুর চাষাবাদ পদ্ধতির মধ্যে অন্যতম হলো পোকার আক্রমণ ও রোগ-বালাই দমন করা।

হামপুলিং বা গাছ উপড়ে ফেলা

হাম পুলিং হল মাটির উপরে গাছের সম্পূর্ণ অংশকে টেনে উপড়ে ফেলা। হামপুলিং এর ৭ থেকে ১০ দিন (বালি মাটি হলে ৫-৭ দিন) পূর্ব হতে সেচ বন্ধ করতে হবে।

হামপুলিং করার সময় মাটিতে পর্যাপ্ত রস থাকলে গাছ ক্ষেত থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। যদি পর্যাপ্ত রস না থাকে তবে গাছ দ্বারা পিলি ঢেকে দিতে হবে।

যাতে হিট ইনজুরি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। আলুর আকার ও ফলন দেখে হামপুলিং এর তারিখ নির্ধারণ করতে হবে।

বীজ আলুতে অবশ্যই হাম পুলিং করতে হবে, তবে খাবার আলুর বেলায় হাম পুলিং জরুরি নয়।

রোগিং

  • মানসম্পন্ন বীজ আলু উৎপাদনে রোগিং একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
  • সঠিকভাবে রোগিং করা না হলে বীজ আলুর গুণাগুণ কমে যায়।
  • এ জন্য গাছের বয়স ৩০-৩৫ দিন থেকে শুরু করে ফসল সংগ্রহ পর্যন্ত নিয়মিত আলুর জমিতে বিভিন্ন জাতের মিশ্রিত গাছ, অস্বাভাবিক এবং রোগাক্রান্ত গাছ তুলে ফেলতে হবে।
  • ভাইরাস রোগের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সর্তকতার সাথে আলু গাছ মাটির নিচে আলুসহ উঠিয়ে অন্যত্র মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে।
  • সকালে এবং বিকালে রোগিং এর জন্য উপযুক্ত সময়।
  • সুর্যের বিপরীত দিকে মুখ করে রোগিং করতে হবে যেন পাতায় সকল লক্ষণ স্পষ্ট বুঝা যায়।
  • লক্ষ্য রাখতে হবে যেন রোগাক্রান্ত গাছ কোনক্রমেই কোন সুস্থ গাছের সঙ্গে না লাগে এবং শ্রমিকের হাতের স্পর্শ দ্বারাও যেন সুস্থ গাছ রোগ সংক্রমণ না হয়।
  • বীজ ফসলের ক্ষেতে বীজ আলু মাটি ভেদ করে উঠে আসার পর থেকে হাম পুলিং পর্যন্ত ৪/৫ দিন অন্তর অন্তর ফসলের মাঠে যেয়ে রোগিং করতে হবে।
  • রোগমুক্ত মানসম্পন্ন আলু উৎপাদন করায় রপ্তানিযোগ্য আলু উৎপাদনের ক্ষেত্রেও এ পদ্ধতি অনুসরণ করা দরকার।

পোকামকড় ও রোগ দমন

আলুর চাষাবাদ পদ্ধতি এর মধ্যে অন্যতম হলো পোকার আক্রমণ ও দমন: আলুর কাটুই পোকা বিষয়ে জানা।

কাটুই পোকা
  • কাটুই পোকার কীড়া বেশ শক্তিশালী। এই কীড়া চারা গাছ কেটে দেয় এবং আলুতে ছিদ্র করে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে।
  • এই পোকার কীড়া দিনের বেলা মাটির নিচে লুকিয়ে থাকে৷
  • আলুর কাটা গাছ অনেক সময় কাটা গোঁড়ার পাশেই পড়ে থাকতে দেখা যায়।
  • কাটুই পোকার উপদ্রব খুব বেশি না হলে কাটা আলু গাছ দেখে তার কাছাকাছি মাটি উল্টেপাল্টে কীড়া খুঁজে সংগ্রহ করে মেরে ফেলা উচিৎ৷
  • কাটুই পোকার উপদ্রব খুব বেশি হলে কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে৷
  • প্রতি লিটার পানির সাথে ক্লোরোপাইরফর (ডারসবান) ২০ ইসি ৫ মিলিমিটার হারে মিশিয়ে গাছের গোড়া ও মাটি স্প্রে করে ভিজিয়ে দিতে হবে।
আলুর আগাম ধসা বা আর্লি ব্লাইট রোগ
  • নিচের পাতা ছোট ছোট বাদামি রংয়ের অল্প বসে-যাওয়া কৌণিক দাগ পড়ে।
  •  আক্রান্ত অংশে সামান্য বাদামি এলাকার সাথে পর্যায়ক্রমে কালচে রংয়ের চক্রাকার দাগ অপেক্ষাকৃত লম্বা ধরনের হয়।
  •  গাছ মরে যাওয়া এ রোগের লক্ষণীয় উপসর্গ।
  • আক্রান্ত টিউবারের গায়ে গাঢ় বাদামি থেকে কালচে বসে যাওয়া দাগ পড়ে।
  • এই রোগ থেকে বাঁচতে সুষম সার প্রয়োগ এবং সময়মতো সেচ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

 রোগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম রোভরাল মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর প্রয়োগ করতে হবে৷ ডাইথেন এম-৪৫ ০.২% হারে প্রয়োগ করা যায়৷

কাণ্ড ও আলু পচা রোগ লক্ষণ :
  • এ রোগের আক্রমণের ফলে বাদামি দাগ কাণ্ডের গোড়া ছেয়ে ফেলে।
  • গাছ ঢলে পড়ে এবং পাতা বিশেষ করে নিচের পাতা হলদে হয়ে যায়।
  • আক্রান্ত অংশে বা আশেপাশের মাটিতে ছত্রাকের সাদা সাদা জালিকা দেখা যায়।
  • কিছু দিন পর সরিষার দানার মত রোগ জীবাণু গুটি বা স্কেলেরোসিয়া সৃষ্টি হয়।
  •  আলুর গা থেকে পানি বের হয় এবং পচন ধরে৷ ক্রমে আলু পচে নষ্ট হয়ে যায়।
  •  আক্রান্ত গাছ কিছুটা মাটিসহ সরিয়ে ফেলতে হবে।
  • জমি গভীরভাবে চাষ করতে হবে।
  • জমিতে সব সময় পঁচা জৈবসার প্রয়োগ করতে হবে।
আলুর স্টেম ক্যাষ্কার স্কার্ফ রোগের লক্ষণ :
  •  গজানো অঙ্কুরের মাথায় এবং স্টোলনে আক্রমণের দাগ দেখা যায়৷
  •  বড় গাছের গোঁড়ার দিকে লম্বা লালচে বর্ণের দাগ বা ক্ষতের সৃষ্টি হয়৷
  • কাণ্ডের সাথে ছোট ছোট টিউবার দেখা যায়৷
  • আক্রান্ত টিউবারের গায়ে শক্ত কালচে এবং সুপ্ত রোগ জীবাণু গুটি দেখা যায়৷
  • টেরক্লোর হেক্টরপ্রতি ১৫ কেজি মাত্রায় বীজ লাগানোর পূর্বে বীজ নালায় প্রয়োগ করতে হবে৷
  •  ৩% বরিক এসিড় দ্বারা বীজ শোধন বা স্প্রে যন্ত্রের সাহায্যে প্রয়োগ করলেও ভালো ফল পাওয়া যায়৷
  •  বীজ আলু মাটির বেশি গভীরে রোপণ পরিহার করতে হবে৷
  • ভালোভাবে অঙ্কুরিত বীজ আলু রোপণ করতে হবে৷
ফলন ও ফসল সংগ্রহ

আলু পরিণত হলে আলু গাছের কাণ্ড হেলে পড়ে এবং নিচের দিকের পাতা হলুদ হতে থাকে। আলু সংরক্ষণ করতে হলে অবশ্যই পরিপক্বতা লাভ করার পর ফসল সংগ্রহ করতে হবে।

উচ্চফলনশীল জাতে ৮০-১০০ দিন লাগে পরিপক্বতা আসতে। দেশি জাতে সময় আরো বেশি লাগে।

বাংলাদেশে উচ্চফলনশীল জাতের হেক্টরপ্রতি ফলন ১৩-১৪ টন এবং দেশি জাতে ৭-৮ টন। বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষ করলে উচ্চফলনশীল জাতে ২০ টনের অধিক ফলন পাওয়া সম্ভব।

–লেখাটির বিভিন্ন তথ্য কৃষি তথ্য সার্ভিস ও অনলাইন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।  বগ্লে প্রকাশিত কোনও তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।

আরো পড়ুন … 

**চাষাবাদ ও কৃষি সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, খবর পড়তে আজই জয়েন করুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )”  হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )” অথবা  টেলিগ্রাম চ্যানেল  ”বীজ ঘর ( কৃষি কথা )’‘ এ। 

মতামত দিন

Item added to cart.
0 items - 0.00
Need Help?