খুব সহজেই লেটুস পাতা চাষ করা যায়। লেটুস পাতা চাষাবাদের জন্য বড় জমি দরকার হয় না সব সময় বরং বসতবাড়ি বা ছাদে টবে এই পাতার চাষ করা সম্ভব।
আজ আমরা এই নিবন্ধে লেটুস পাতা চাষের পদ্ধতি ও কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব ।
লেটুস পাতা চাষ করবেন যেভাবে
বারোমাসি এই উদ্ভিদ শীত প্রধান দেশে সারা বছর চাষাবাদ করা সম্ভব হলেও; আমাদের দেশে কেবল রবি মৌসুমে (অক্টোবর-জানুয়ারি) পর্যন্ত বীজ বোনা যায়।
এছাড়া লেটুস পাতা চাষের মাটি অবশ্যই উর্বর হতে হবে। উর্বর দোআঁশ মাটিতে লেটুস পাতা ভালো জন্মে। তবে দোআঁশ মাটির সাথে প্রয়োজন মত জৈব সার মিশানো থাকা ভালো।
জমি তৈরি ও চাষাবাদের নিয়ম
লেটুস পাতা চাষাবাদের জমি ৪-৫ বার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে ভালোভাবে তৈরি করতে হবে। এছাড়া…
- মাটি বেশি ঝুরঝরা হলে মাটিতে সমপরিমান জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে।
- জমিতে প্রয়োজনীয় রস থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে; প্রয়োজনে জমিতে সেচ দিতে হবে।
- লেটুস পাতা বীজ সরাসরি জমিতে বোনা যায় (খুব ছোট বীজ তাই বোনার আগে বীজের সাথে ছাই মিশিয়ে নেওয়া উত্তম)।
- অথবা বীজ তলায় চারা তৈরি করে চারা বপন করা যায়।
- সাধারনত ১ বয়সী লেটুস পাতার চারা বপন করা উত্তম।
- লাইন করে চারা বপন করলে লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব হবে ১২ ইঞ্চি।
- আর চারা থেকে চারার দূরত্ব হবে ৮ ইঞ্চি।
- চারা বপনের পর চারার গোড়ায় মাটি দিয়ে হালকা ভাবে চেপে দেওয়া ভালো।
- এছাড়া রোদ ও বৃষ্টি থেকে রক্ষা ৩-৪ দিন চারা ঢেকে রাখা প্রয়োজন।
সার প্রয়োগ
অধিক ফলন পেতে লেটুস পাতা চাষাবাদের জমিতে প্রয়োজন মত সার প্রয়োগ করতে হবে। এই পাতা চাষে প্রতি শতাংশ জমিতে যে পরিমাণ সার প্রয়োগ করতে হবে…
- গোবর সার দিতে হবে ২০ কেজি,
- খৈল দিতে হবে ৮০০ গ্রাম,
- ইউরিয়া দিতে হবে ৪০০ গ্রাম,
- টিএসপি দিতে হবে ১০০ গ্রাম,
- পটাশ দিতে হবে ১০০ গ্রাম।
এ সার গুলো থেকে গোবর চাষের প্রথম দিকে এবং শেষ চাষের সময় টিএসপি ও পটাশ সার মাটির সাথে ভালো করে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া ইউরিয়া সার ২ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে (প্রথম বার চারার বয়স ১০ দিন হলে আর দ্বিতীয় বার চারার বয়স ২০ দিন হলে)।
প্রতিবার সার প্রয়োগ করার পর জমিতে সেচ দিতে হবে।
সেচ ও পরিচর্যা
লেটুস পাতা গাছ লাগালে পর থেকে নিয়মিত পরিচর্যা করতে হবে। চারা লাগানোর পর ছোট পাখিরা ঠুকরে ঠুকরে সেই পাতা খেয়ে ফেলতে পারে।
- এই ক্ষেত্রে পাতলা পলিথিনের গায়ে ছোট ছোট ছিদ্র করে সেটি দিয়ে গাছটি ঢেকে দেওয়া দরকার।
- এছাড়াও যেইসব পাতা শুকিয়ে গেছে, সেগুলি তুলে ফেলা উচিত।
- আশানুরূপ ফলন পেতে জমিতে সব সময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
- গাছ বড় হলে মাঝে মাঝে লেটুস পাতা গাছের গোড়ার মাটি চেপে দিতে হবে।
- গাছে যদি খুব বেশি ঘন হয়ে যায় তাহলে তা পাতলা করে দিতে হবে।
- এতে একদিকে যেমন গাছ বেড়ে উঠবে ঠিকভাবে, অন্যদিকে উত্তোলিত গাছ ব্যবহার করা যাবে।
লেটুস পাতার ক্ষেতে নিয়মিত সেচ দিতে হবে; তবে পানি যেন জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে হবে।
রোগবালাই ও পোকামকড় দমন
লেটুস পাতা গাছের গোড়া পচা রোগ দেখা দিলে পাতা নুয়ে পড়ে, পাতার আগা পুড়ে যায়। এই ক্ষেত্রে গাছ তুলে ফেলা উত্তম। তবে বীজ ও মাটি শোধন করলে রোগ থেকে বাঁচা যায়।
এছাড়া জাব পোকা লেটুসের যম হিসাবে বিবেচিত। এই পোকা আক্রমন করলে হাত দিয়ে তুলে পোকা মেরে ফেলতে হবে। তবে এই পোকার আক্রমন বেশি হলে প্রয়োজনীয় পরিমানে জৈব উপায়ে তৈরী কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।
টবে লেটুস পাতা চাষের জন্য যা করবেন
সময় বদলে গেছে। সম্প্রতিকালে বাসা-বাড়ির ছাদে বা বারান্দায় টবে কিংবা ড্রামে খুব সহজেই লেটুস পাতার চাষ করা যায়। এবার জেনে নিন টবে যেভাবে লেটুস পাতার চাষ করবেন।
- লেটুস পাতা চাষের জন্য খুব বড় টবের প্রয়োজন হয় না।
- তবে টবের মাটি অবশ্যই উর্বর, হালকা এবং ঝুরঝুরে হতে হবে।
- দো-আঁশ মাটি ও জৈব সার ভালোভাবে মিশেয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
- তবে মাটি এঁটেল হলে জৈব সারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে।
- এছাড়া প্রতি টবে চার চামচ (চা চামচে) টিএসপি সার ও ভেজানো ১১৬ গ্রাম পরিমাণ সরিষার খৈল মেশানো উত্তম।
- ভাদ্র থেকে অগ্রহায়ণ পর্যন্ত (সেপ্টেম্বর -নভেম্বর) পর্যন্ত বীজ থেকে চারা তৈরি করে টবে লাগানো যায়।
- টবে বীজ বোনলে ৩-৪ দিনে চারা গজায়।
- চারার বপনের ক্ষেতে ৪-৫টি পাতা গজালে টবে (বিকেলে) লাগাতে হবে।
- সকাল-বিকাল চারার গোড়ায় পানি দিতে হবে।
- পানি শুকিয়ে গেলে টবের মাটিতে যেন ফেটে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
- প্রয়োজনে সেচ দিতে হবে এবং মাঝে মাঝে চারার গোড়ার মাটি হালকাভাবে আলগা করে দিতে হবে।
টবে চারা বপনের পর অনেক সময় দেখা যায় চড়াই শালিক, বাবুই ইত্যাদি ছোট ছোট পাখি চারার কচি পাতা এবং ডগা খেয়ে ফেলে, অনেক ক্ষেত্রে চারা উপড়ে ফেলে। সেক্ষেত্রে টবেটি ঢেকে রাখতে হবে দু’চারটা ছিদ্রবিশিষ্ট পাতলা পলিথিন কাগজ বা লোহার নেট দিয়ে।
ফলন ও ফসল সংগ্রহ
লেটুস পাতার চারা বপনের ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যেই ফসল তোলার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। গাছে পাতা তোলার উপযুক্ত হলে পাতা সংগ্রহ করতে হবে।
এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ গাছ তুলে ফেলা ভালো।
তবে বাসা বাড়িতে যদি চাষ করা হয় তখন গাছ থেকে প্রয়োজনীয় পাতা সংগ্রহ করা উচিত।
–বগ্লে প্রকাশিত কোনও তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
আরো পড়ুন …
- সূর্যমুখী ফুল চাষ, জেনে নিন সঠিক ও সহজ পদ্ধতি
- রজনীগন্ধা ফুল চাষ পদ্ধতি ও কৌশল
- সঠিক ডালিয়া ফুল চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা
- চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষ, সঠিক ও সহজ পদ্ধতি জেনে নিন
- সঠিক ও সহজ জুঁই ফুল চাষ পদ্ধতি শিখে নিন
- ভিন দেশি টিউলিপ ফুল চাষ, সঠিক পদ্ধতি জেনে নিন
**চাষাবাদ ও কৃষি সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, খবর পড়তে আজই জয়েন করুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )” হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )” অথবা টেলিগ্রাম চ্যানেল ”বীজ ঘর ( কৃষি কথা )’‘ এ।