কৃষি কথা

সঠিক আলু চাষ পদ্ধতি জেনে নিন

সঠিক আলু চাষ পদ্ধতি জেনে নিন

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ফসল আলু। অনুকূল আবহাওয়ার জন্য কিছু কিছু জেলায় ব্যাপক ভাবে আলু চাষ হয়। কার্তিক-অগ্রহায়ণ ঋতুচক্রের হেমন্তকালীন এ মাস গুলো এই ফসল চাষের উপযুক্ত সময়।

এদেশে যেসব জাতের আলুর চাষাবাদ হয় তার মধ্যে দেশি জাতের পাশাপাশি উচ্চফলনশীল উন্নত জাতও আছে।

বর্তমানে শতকরা ৬৫ ভাগ জমিতে আলুর উন্নত জাত এবং ৩৫ ভাগ জমিতে দেশি জাতের আলুর চাষাবাদ করা হয়। আজ আমারা এই নিবন্ধে আলু চাষ পদ্ধতির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করব।বীজ আলু কাটার সঠিক নিয়ম ও পদ্ধতি

জেনে নিন আলু চাষ এর নিয়ম-কাননগুলো

জমি তৈরি

আশ্বিন মাস হতে আলুর জমি প্রস্তুতের কাজে হাত দিতে হয়। জমির প্রকৃতি ভেদে ৫/৬ চাষ ও বার কয়েক মই দিয়ে ভালোভাবে পাইট করে চাষ করতে হয়।

আলুর জমি গভীরভাবে চাষ করা উচিত৷ কোনো কোনো অঞ্চলে যেমন, ঢাকার মুন্সীগঞ্জ ও কুমিল্লা সদর এলাকার চাষীগণ কোদাল ও লাঙলের সাহায্যেই জমি গভীরভাবে চাষ করে থাকেন।

জমি শুধু গভীরভাবে চাষ করলেই হয় না, মাটি যাতে মোলায়েম হয় ও ঝুরঝুরা করে প্রস্তুত করা হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হয়। ঢেলা যুক্ত ও আঁটসাঁট জমিতে আলুর বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।

বীজ বপন

আগাম ফসল করতে হলে ভাদ্র মাসের শেষে বীজ বপন করতে হবে।

আলু বীজ সারিতে বপন করতে হয়৷ এক সারি হতে অন্য সারির দূরত্ব ২৪ ইঞ্চি অথবা ৬০ সেন্টিমিটার রাখতে হবে, এবং সারিতে এক বীজ হতে অন্য বীজের দূরত্ব হবে ৮-১০ ইঞ্চি অথবা ২০-২৫ সেন্টিমিটার।

সারিতে দুই পদ্ধতিতে বীজ বপন করা যায়

  • প্রথম পদ্ধতিতে প্রতি সারি বরাবর ৫-৭ সেন্টিমিটার মাটি সরিয়ে নিয়ে নালা প্রস্তুত করা হয়, তারপর সেই নালাতে নির্দিষ্ট দূরত্বে বীজ বপন করে মাটি দ্বারা বীজ ঢেকে দেওয়া হয়৷
  • দ্বিতীয় পদ্ধতিতে সারির মাটি না খুড়ে অর্থাৎ নালা না করে সারির দাগ বরাবর বীজ নির্দিষ্ট ব্যবধানে বপন করার পর দুই সারির মধ্যবর্তী জায়গা হতে মাটি টেনে উঁচু করে বীজ ঢেকে দেওয়া হয়৷

এক্ষেত্রে, ২য় পদ্ধতিটিই বিজ্ঞানসম্মত, কেননা এতে জমির রস অধিক দিন বজায় থাকে এবং সারির মাটি আলগা থাকে বলে আলুর কন্দ বৃদ্ধিতে কোনো বাধার সৃষ্টি হয় না৷ অন্য দিকে ১ম পদ্ধতিতে নালার মাটি চাপ খাওয়া থাকে বলে কন্দের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়৷ ফলে কন্দ অর্থাৎ আলুর আকার ছোট থেকে যায়।

বীজ হার:  বপনের জন্য প্রতি হেক্টরে সাধারণত ১৫০০-২০০০ কেজি বীজ লাগে। তবে বীজ আকারে বড় হলে কিছু বেশি এবং ছোট হলে কিছু কম লাগে৷

সার প্রয়োগ পদ্ধতি

গোবর, অর্ধেক ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি, জিপসাম ও জিঙ্ক সালফেট (প্রয়োজন বোধে) রোপণের সময় জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে৷ বাকি ইউরিয়া রোপণের ৩০-৩৫ দিন পর অর্থাৎ দ্বিতীয় বার মাটি তোলার সময় প্রয়োগ করতে হবে।

অম্লীয় বেলে মাটির জন্য ৮০-১০০ কেজি/হেক্টর ম্যাগনেসিয়াম সালফেট এবং বেলে মাটির জন্য বোরন ৮-১০ কেজি/হেক্টর প্রয়োগ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।

সেচ ব্যবস্থাপনা

এদেশে অনেক চাষী  বিশেষ করে যারা দেশী আলুর চাষ করেন তারা আলুর জমিতে সেচের পানি ব্যবহার করতে চান না।

কিন্তু অধিক ফলনশীল আলুর জাতে অধিক সার ব্যবহার করলে আলুর জমিতে পরিমাণ মতো পানি ব্যবহার করা আবশ্যক।

আলুর জমিতে সেচ দেওয়া বেশ সুবিধাজনক৷ সারিতে গাছের গোড়ায় মাটি উঁচু করে দেওয়ার ফলে যে জুলি বা নালার সৃষ্টি হয় তার মধ্যে পানি প্রবেশ করিয়ে দিলেই সারা ক্ষেত পানিতে সিক্ত হয়ে যায়।

আলুর জমি সব সময় রসযুক্ত থাকবে সেই বিবেচনায় আলু ক্ষেতে নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে৷ মাটির প্রকারভেদের উপর নির্ভর করে ২/৩ বার সেচ দিলেই চলবে৷ অধিক সেচে কোনো লাভ নেই, তাতে বরং উপকারের চাইতে অপকারই হবে।

এই অবস্থায় গাছে ছোট ছোট নিম্নমানের আলু ধরবে৷ আবার অনিয়মিত পানি ব্যবহার করলে গুটি যুক্ত ফাঁপা ধরনের আলু জন্মাবার সম্ভাবনা থাকে। আলু উঠানোর দুই সপ্তাহ পূর্ব হতে সেচ বন্ধ করে দিতে হবে৷ এতে আলুর পূর্ণতা প্রাপ্তি হবে।

আগাছা দমন:-

বীজ বপনের ৬০ দিন পর্যন্ত আলুর ক্ষেত আগাছা মুক্ত রাখতে হয়৷ আলুর জমিতে আগাছা দমন আলাদাভাবে করার প্রয়োজন পড়ে না।

গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দেয়া ও গোঁড়ার মাটি আলগা করে দেয়ার সময়ই আগাছা দমন হয়ে যায়।

আলুর চাষাবাদ পদ্ধতি এর মধ্যে অন্যতম হলো পোকার আক্রমণ ও রোগ-বালাই দমন:

আলুর কাটুই পোকা
  • কাটুই পোকার কীড়া বেশ শক্তিশালী, ৪০-৫০ মিলিমিটার লম্বা হয়।
  • পোকার উপর পিঠ কালচে বাদামি বর্ণের, পার্শ্বদেশ কালো রেখাযুক্ত এবং বর্ণ ধূসর সবুজ।
  • শরীর নরম ও তৈলাক্ত।
  • কাটুই পোকার কীড়া চারা গাছ কেটে দেয় এবং আলুতে ছিদ্র করে আলু ফসলের ক্ষতি করে থাকে।

পোকার কীড়া দিনের বেলা মাটির নিচে লুকিয়ে থাকে। আলুর কাটা গাছ অনেক সময় কাটা গোঁড়ার পাশেই পড়ে থাকতে দেখা যায়৷

প্রতিকার-

  • কাটুই পোকার উপদ্রব খুব বেশি না হলে কাটা আলু গাছ দেখে তার কাছাকাছি মাটি উল্টেপাল্টে কীড়া খুঁজে সংগ্রহ করে মেরে ফেলা উচিৎ।
  • কাটুই পোকার উপদ্রব খুব বেশি হলে কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে৷ প্রতি লিটার পানির সাথে ক্লোরোপাইরফস (ডারসবান) ২০ ইসি ৫ মিলিলিটার হারে মিশিয়ে গাছের গোড়া ও মাটি স্প্রে করে ভিজিয়ে দিতে হবে৷ আলু লাগানোর ৩০-৪০ দিন পর স্প্রে করতে হবে।
আলুর সুতলী পোকা
  • আলুর সুতলী পোকার মথ আকারে ছোট, ঝালযুক্ত, সরু ডানা বিশিষ্ট ধূসর বাদামি হয়।
  • পূর্ণাঙ্গ কীড়া সাদাটে বা হাল্কা গোলাপী বর্ণের এবং ১৫-২০ মিলিমিটার লম্বা হয়ে থাকে।
  • কীড়া আলুর মধ্যে লম্বা সুড়ঙ্গ করে আলুর ক্ষতি করে থাকে।
  • বাংলাদেশে বসতবাড়িতে সংরক্ষিত আলু এ পোকার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

প্রতিকার-

  • বাড়িতে সংরক্ষিত আলু শুকনা বালি, ছাই, তুষ অথবা কাঠের গুড়ার একটি পাতলা স্তর (আলুর উপরে ০.৫ সেন্টিমিটার) দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
  • আলু সংরক্ষণ করার আগে সুতলী পোকা আক্রান্ত আলু বেছে ফেলে দিতে হবে।
আলুর মড়ক বা নাবী ধ্বসা (লেইট ব্লাইট) রোগ

লক্ষণ-

  • প্রথমে পাতা, ডগা ও কাণ্ডে ছোট ভিজা দাগ পড়ে।
  • ক্রমে দাগ বড় হয় ও সমগ্র পাতা, ডগা ও কাণ্ডের কিছু অংশ ঘিরে ফেলে।
  • বাতাসের আপেক্ষিক আদ্রতা বেশি থাকলে ২-৩ দিনের মধ্যেই জমির অধিকাংশ ফসল আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
  • ভোরের দিকে আক্রান্ত পাতার নিচে সাদা পাউডারের মতো ছত্রাক চোখে পড়ে।
  • আক্রান্ত ক্ষেতে পোড়াপোড়া গন্ধ পাওয়া যায় এবং মনে হয় যেন জমির ফসল পুড়ে গেছে।

প্রতিকার-

  • লেইট ব্লাইট রোগ-প্রতিরোধী বীজ ব্যবহার করা, যেমনঃ এ্যালুয়েট, ক্যারোলাস, টুইনার, লেভান্তে, বিয়োন্সে, ইত্যাদি।
  • আক্রান্ত জমিতে সেচ যথাসম্ভব বন্ধ করে দিতে হবে।
  • রোগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে রিডোমিল (০.২%), ডাইথেন এম-৪৫ (০.২%) ইত্যাদি ছত্রাকনাশক অনুমোদিত হারে ৭-১০ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।
আলুর আগাম ধসা বা আর্লি ব্লাইট রোগ

লক্ষণ-

  • নিচের পাতা ছোট ছোট বাদামি রংয়ের অল্প বসে-যাওয়া কৌণিক দাগ পড়ে।
  • আক্রান্ত অংশে সামান্য বাদামি এলাকার সাথে পর্যায়ক্রমে কালচে রংয়ের চক্রাকার দাগ অপেক্ষাকৃত লম্বা ধরনের হয়৷
  • গাছ মরে যাওয়া এ রোগের লক্ষণীয় উপসর্গ।
  • আক্রান্ত টিউবারের গায়ে গাঢ় বাদামি থেকে কালচে বসে যাওয়া দাগ পড়ে।

প্রতিকার-

  • সুষম সার প্রয়োগ এবং সময়মতো সেচ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
  • রোগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম রোভরাল মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর প্রয়োগ করতে হবে। অথবা ডাইথেন এম-৪৫ ০.২% হারে প্রয়োগ করা যায়।
  • আগাম জাতের আলু চাষ করতে হবে।
কাণ্ড ও আলু পচা রোগ

লক্ষণ- 

  • এ রোগের আক্রমণের ফলে বাদামি দাগ কাণ্ডের গোড়া ছেয়ে ফেলে।
  • গাছ ঢলে পড়ে এবং পাতা বিশেষ করে নিচের পাতা হলদে হয়ে যায়।
  • আক্রান্ত অংশে বা আশেপাশের মাটিতে ছত্রাকের সাদা সাদা জালিকা দেখা যায়।
  • কিছু দিন পর সরিষার দানার মত রোগ জীবাণু গুটি বা স্কেলেরোসিয়া সৃষ্টি হয়।
  • আলুর গা থেকে পানি বের হয় এবং পচন ধরে৷ ক্রমে আলু পচে নষ্ট হয়ে যায়।

প্রতিকার-

  • আক্রান্ত গাছ কিছুটা মাটিসহ সরিয়ে ফেলতে হবে।
  • জমি গভীরভাবে চাষ করতে হবে।
  • জমিতে সব সময় পঁচা জৈবসার প্রয়োগ করতে হবে।
আলুর স্টেম ক্যাষ্কার স্কার্ফ রোগের

 লক্ষণ-

  • গজানো অঙ্কুরের মাথায় এবং স্টোলনে আক্রমণের দাগ দেখা যায়।
  • বড় গাছের গোঁড়ার দিকে লম্বা লালচে বর্ণের দাগ বা ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
  • কাণ্ডের সাথে ছোট ছোট টিউবার দেখা যায়।
  • আক্রান্ত টিউবারের গায়ে শক্ত কালচে এবং সুপ্ত রোগ জীবাণু গুটি দেখা যায়।

প্রতিকার-

  • টেরক্লোর হেক্টরপ্রতি ১৫ কেজি মাত্রায় বীজ লাগানোর পূর্বে বীজ নালায় প্রয়োগ করতে হবে।
  • ৩% বরিক এসিড় দ্বারা বীজ শোধন বা স্প্রে যন্ত্রের সাহায্যে প্রয়োগ করলেও ভালো ফল পাওয়া যায়।
  • বীজ আলু মাটির বেশি গভীরে রোপণ পরিহার করতে হবে।
  • ভালোভাবে অঙ্কুরিত বীজ আলু রোপণ করতে হবে।
ঢলে পড়া এবং বাদামি পচন রোগ

লক্ষণ-

  • গাছের একটি শাখা বা এক অংশ ঢলে পড়তে পারে।
  • পাতা সাধারণত হলুদ হয় না এবং সবুজ অবস্থায়ই চুপসে ঢলে পড়ে।
  • গোঁড়ার দিকে গাছের কাণ্ড ফেড়ে দেখলে বাদামি আক্রান্ত এলাকা দেখা যায়।
  • ঢলে পড়া গাছ খুব দ্রুত চুপসে যায়।
  • আক্রান্ত আলু কাটলে ভিতরে বাদামি দাগ দেখা যায়।
  • আলুর চোখে সাদা পুঁজের মতো দেখা যায় এবং আলু অল্প দিনের মধ্যেই পচে যায়।

প্রতিকার-

  • সুস্থ রোগ মুক্ত ও রোগ-প্রতিরোধী বীজ ব্যবহার করা, যেমনঃ এ্যালুয়েট, ক্যারোলাস, টুইনার, আরসেনাল, ফন্টেইন, ইত্যাদি।
  • আলু লাগানোর সময় প্রতি হেক্টরে ৮০-ঌ০ কেজি হারে স্ট্যাবল ব্লিচিং পাউডার জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
  • পরিমিত মাত্রায় সেচ প্রয়োগ করতে হবে এবং রোগ দেখা দিলে পানি সেচ বন্ধ করে দিতে হবে।
আলুর দাদ রোগ

লক্ষণ- 

  • হালকা দাদ হলে টিউবারের উপরে উঁচু এবং ভাসা বিভিন্ন আকারের বাদামি দাগ পড়ে।
  • রোগের গভীর দাদে গোলাকার গর্ত বা ডাবা দাগ পড়ে।
  • রোগের আক্রমণ সাধারণত ত্বকেই সীমাবদ্ধ থাকে।

প্রতিকার-

  • রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
  • জমিতে বেশি মাত্রায় নাইট্রোজেন সার ব্যবহার বর্জন করতে হবে।
  • ৩% বরিক এসিড দিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে।
  • জমিতে হেক্টরপ্রতি ১২০ কেজি জিপসাম সার প্রয়োগ করতে হবে।
আলুর পাতা মোড়ানো রোগ

লক্ষণ- 

  • আক্রান্ত গাছের পাতা খসখসে, খাড়া ও উপরের দিকে মুড়ে যায়।
  • আগার পাতার রং হালকা সবুজ হয়ে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়।
  • কখনো আক্রান্ত পাতার কিনারা লালচে বেগুনি রংয়ের হয়।
  • গাছ খাটো হয় এবং সোজা হয়ে উপরের দিকে দাঁড়িয়ে থাকে৷ আলুর সংখ্যা কমে যায়।

প্রতিকার- 

  • সুস্থ রোগ মুক্ত ও রোগ-প্রতিরোধী বীজ ব্যবহার করা, যেমনঃ এ্যালুয়েট, ক্যারোলাস, টুইনার, লেভান্তে, ডায়ানন্ট, বিয়োন্সে, আরসেনাল, ফন্টেইন, ইত্যাদি।
  • কীটনাশক (এজেড্রিন, নোভাক্রন, মেনোড্রিন ইত্যাদি) ২ মিলিমিটার অথবা ১ মিলিমিটার।
  • ডাইমেক্রন প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর জমিতে স্প্রে করতে হবে।
  • আক্রান্ত গাছ টিউবারসহ তুলে ফেলতে হবে।
আলুর মোজাইক রোগ

লক্ষণ- 

  • পাতায় বিভিন্ন ধরনের ছিটে দাগ পড়ে, পাতা বিকৃত ও ছোট হয়।
  • ভাইরাস এবং আলুর জাতের উপর নির্ভর করে লক্ষণ ভিন্নতর হয়।
  • লতা ঝুলে পড়ে এবং পরবর্তীতে গাছ মারা যায়।

প্রতিকার- 

  • সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে এবং রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
  • টমেটো, তামাক এবং কতিপয় সোলানেসি গোত্রভুক্ত আগাছা এ ভাইরাসের বিকল্প পোষক৷ সুতরাং, আশেপাশে এ ধরনের গাছ রাখা যাবে না৷ আক্রান্ত গাছ আলুসহ রগিং করে ফেলতে হবে।
  • জাব পোকা দমন পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে অর্থাৎ ১ মিলিমিটার ডাইমেক্রন প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর জমিতে স্প্রে করতে হবে।
আলুর হলদে রোগ

লক্ষণ- 

  • স্থানীয় জাতের আলুতে এ রোগ বেশি হয়।
  • পাতা কুঁচকে যায় ও ছিটা দাগ দেখা যায়।
  • দূর থেকে আক্রান্ত গাছ সহজেই চোখে পড়ে৷ আলু ছোট হয় বা একেবারেই হয় না।

প্রতিকার- 

  • রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
  • রগিং করে আক্রান্ত গাছ উঠিয়ে ফেলতে হবে।
  • কীটনাশক প্রয়োগ করে পাতা ফড়িং দমন করতে হবে। এজন্য ডাইমেক্রন (০.১%) ৭-১০ দিন পর স্প্রে করতে হবে।
  • অপেক্ষাকৃত বড় আকারের আলু বীজ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।
আলুর শুকনো পচা রোগ

লক্ষণ- 

  • আলুর গায়ে কিছুটা গভীর কালো দাগ পড়ে।
  • আলুর ভিতরে গর্ত হয়ে যায়।
  • প্রথম পচন যদিও ভিজা থাকে পরে তা শুকিয়ে শক্ত হয়ে যায়।
  • আক্রান্ত অংশে গোলাকার ভাঁজ এবং কখনো কখনো ঘোলাটে সাদা ছত্রাক জালিকা দেখা যায়।

প্রতিকার- 

  • আলু ভালোভাবে বাছাই করে সংরক্ষণ করতে হবে।
  • যথাযথ কিউরিং করে আলু গুদামজাত করতে হবে।
  • ডাইথেন এম-৪৫ দ্রবণ ০.২% দ্বারা বীজ আলু শোধন করতে হবে।
  • বস্তা, ঝুড়ি ও গুদামঘর ইত্যাদি ৫% ফরমালিন দিয়ে শোধন করতে হবে।
  • প্রতি কেজিতে ২ গ্রাম হিসেবে টেকটো ২% গুড়া দিয়ে আলু শোধন করতে হবে।
আলুর নরম পচা রোগ

লক্ষণ- 

  • আক্রান্ত অংশের কোষ পচে যায়।
  • পচা আলুতে এক ধরনের উগ্র গন্ধের সৃষ্টি হয়৷ চাপ দিলে আলু থেকে এক প্রকার দূষিত পানি বেরিয়ে আসে।
  • আক্রান্ত অংশ ঘিয়ে রংয়ের নরম হয় যাকে সহজেই সুস্থ অংশ থেকে আলাদা করা যায়।

প্রতিকার- 

  • সুস্থ ও রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
  • অতিরিক্ত সেচ পরিহার করতে হবে।
  • উচ্চ তাপ এড়ানোর জন্য আগাম চাষ করতে হবে।
  • ভালোভাবে বাছাই করে আলু সংরক্ষণ করতে হবে।
  • ১% ব্লিচিং পাউডার অথবা ৩% বরিক এসিডের দ্রবণে টিউবার শোধন করে বীজ আলু সংরক্ষণ করতে হবে।

অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা

গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দেয়া

আলু লাগানোর ৩০-৩৫ দিন পর গোড়ায় মাটি দেওয়া প্রয়োজন। জমিতে আলুর গাছ যখন ৫-৬ ইঞ্চি অর্থাৎ ১২-১৫ সেন্টিমিটার হয় তখন দুই সারির মাঝখানের মাটি হালকাভাবে কুপিয়ে নরম ঝুরঝুরা করে নিতে হয়।

এই সময় জমির আগাছা নিধনের কাজও হয়ে যায়৷ নরম ঝুরঝুরা মাটি কোদালি দ্বারা টেনে সারিতে গাছের দুই দিকে দেওয়া হয়।

এর তিন সপ্তাহ পর গোড়ায় আবার মাটি দিতে হয়৷ গাছের বৃদ্ধি বেশি হলে আর একবার অর্থাৎ তৃতীয়বারের মতো মাটি দেওয়া হয়।

গাছের গোড়ায় এইভাবে মাটি দিলে গাছের স্টোলনগুলো টিউবার অর্থাৎ আলুতে পরিণত হবার সুযোগ পায়৷ মাটি ঠিকমতো দেওয়া না হলে বর্ধিষ্ণু আলু মাটির বাইরে এসে সবুজ রং ধারণ করে।

এ রকম আলু খাবার অনুপোযোগী এবং কখনো কখনো তা বিষাক্তও হতে পারে।

পরিপক্বতার লক্ষণ:

যখন দেখা যাবে আলু গাছগুলো হলুদ হয়ে মরে যাচ্ছে তখনই বুঝতে হবে আলু তোলার উপযুক্ত সময় হয়েছে।

সাধারণত আলুবীজ লাগাবার ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যেই এ আলু তোলা যায়৷ উচ্চফলনশীল জাতে ৮০-১০০ দিন লাগে পরিপক্বতা আসতে। দেশি জাতে সময় আরো বেশি লাগে।

হাম পুলিং:

মাটির উপরে গাছের সম্পূর্ণ অংশকে উপড়ে ফেলাকে হাম পুলিং বলে। আলু সংগ্রহের ৭-১০ দিন পূর্বে হাম পুলিং করতে হবে।

এতে সম্পূর্ণ শিকড়সহ গাছ উপরে আসবে কিন্তু আলু মাটির নিচের থেকে যাবে।

হাম পুলিং এর ফলে আলুর ত্বক শক্ত হয়, রোগাক্রান্ত গাছ থেকে রোগ বিস্তার কম হয় ও আলুর সংরক্ষণগুণ বৃদ্ধি পায়।

বীজ আলুতে অবশ্যই হাম পুলিং করতে হবে, তবে খাবার আলুর বেলায় হাম পুলিং জরুরি নয়।

ফসল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ:

আলুর সারিতে কোদালের সাহয্যে বা লাঙল চালিয়ে আলু মাটি থেকে তোলা হয়৷ তবে আলু তোলার সময় সতর্ক থাকতে হবে যাতে আলু কেটে বা থেতলিয়ে না যায়, কেননা আলু থেতলিয়ে গেলে সংরক্ষণ করার সময় পচে যায়৷

বাংলাদেশে উচ্চফলনশীল জাতের জাতভেদে হেক্টরপ্রতি ফলন ৩০-৪৫ টন পর্যন্ত হয় এবং দেশি জাতে ১০-১২ টন। বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষ করলে উচ্চফলনশীল জাতে ৩৫-৪০ টনের অধিক ফলন পাওয়া সম্ভব।

তথ্য সংকলনঃ মোঃ সাইফুল ইসলাম (পিএইচ ডি)

তথ্য তথ্যসূত্র:

  • শস্য বহুমুখীকরণ কর্মসূচী (সিডিপি), কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, খামারবাড়ী।
  • সবজি বিজ্ঞান (ড. মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ) – বারি হাত বই।
  • কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস)
  • বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) – তথ্য ও সেবা।

বগ্লে প্রকাশিত কোনও তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।

আরো পড়ুন … 

**চাষাবাদ ও কৃষি সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, খবর পড়তে আজই জয়েন করুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )”  হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )” অথবা  টেলিগ্রাম চ্যানেল  ”বীজ ঘর ( কৃষি কথা )’‘ এ। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *