মেটে আলু চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা

বাজারে চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় দেশে বৃদ্ধি পাচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে মেটে আলু চাষ। আবহাওয়ার কারণে বর্তমান সময়ে ব্যাপক ভাবে মেটে আলুর চাষ বিস্তার লাভ করেছে।

তাই আজ আমারা এই নিবন্ধে মেটে আলুর চাষাবাদ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

যেভাবে বিনা খরচে মেটে আলুর চাষ করবেন

বর্তমানে আলতা-পাত, বেনা ঝাড়, গাড়লতা, হরিণ শিংয়ে বা হরিণ পেলে জাতের মেটে আলুতে বেশি ফলন হয়। তবে বাজারে হরিণ পেলে এবং আলতা-পাতের চাহিদা বেশি হওয়াতে দামও অনেক ভালো পাওয়া যাচ্ছে।

এজন্য অধিকাংশ পতিত জমিতে চাষিরা এই দুই জাতের মেটে আলু চাষ বেশি করেন। এই আলু আমাদের দেশে গাছ আলু, পেস্তা আলু, মাচা আলু, মাইট্টা আলু ইত্যাদি নামেও পরিচিত।

প্রয়োজনীয় জলবায়ু ও মাটি

  • মেটে আলু চাষ এর জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু দরকার।
  • ২৫ – ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমত্রায়এই আলুর ফলন ভালো হয়।
  • মেটে আলু গরম আবহাওয়ায় ভালো জন্মে।
  • ঠান্ডায় গাছ বাড়ে না, শুকাতে শুকাতে এক সময় মারা যায়।
  • পরের বছর মূল থেকে নতুন করে চারা গজায়।
  • সুনিস্কাশি হালকা বুনটের বেলে দো-আঁশ মাটি এই আলুর চাষাবাদে বেশি উপযোগী।
  • বেলে মাটিতে গাছ ও আলু দুর্বল হয়।

চারা তৈরি

লতানো এই উদ্ভিদটি গরম আবহাওয়ায় জন্মে কিন্তু ঠান্ডায় আর বাড়ে না। শুকাতে শুকাতে এক সময় মারা যায়। পরের বছর মূল থেকে নতুন করে চারা গজায়।

এছাড়া…

  • মেটে আলুর কন্দের মুখের খণ্ড ও বুলবিল দিয়ে চারা তৈরি করা যায়।
  • পরিণত কন্দের মুখ কেটে কয়েকদিন ছায়ায় রেখে দিলে তা গজায়।
  • মেটে আলু বোনার জন্য ২০০ -২৫০ গ্রাম আঁকারের টুকরা সর্বোত্তম।
  • পুরোনো কন্দের আকার ছোট হলে আস্ত কন্দই লাগানো যায়।
  • কন্দের আঁকারের উপর নির্ভর করে মেটে আলুর আকার।

জমি তৈরি ও চারা বপন

সুনিষ্কাশিত উঁচু, মাঝারি উঁচু ও মাঝারি নিচু জমি মেটে আলু চাষের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট। এছাড়া…

  • মেটে আলু গর্ত বা মাদা তৈরি করে বপন করতে হয়।
  • গর্ত বা মাদা উপর্যুপরি চাষ দিয়ে মাটিকে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।
  • এছাড়া গর্তের মধ্যে নিচে কিছু ছাই ভরতে হবে।
  • তারপর গর্তের মাটির সাথে সমপরিমাণ জৈব সার দিয়ে গর্ত ভরাট করে দিতে হবে।
  • মুখী উপরদিকে রেখে মাটির উপরের স্তর থেকে ৪ আঙুল নিচে বীজ/কন্দ লাগাতে হবে।
  • সাধারনত ফেব্রুয়ারী থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে মেটে আলুর চারা বোনা উত্তম।
  • বপনের দূরত্ব : লাইন থেকে লাইন ৩-৪ ফুট এবং চারা বা বীজ ৩-৪ ফুট।

মেটে আলুর ফলন প্রথম বছর সংগ্রহ না করে রেখে দিলে পরবর্তী বছর এ থেকে সুঠাম চারা বের হয় এবং ওই চারা লাগালে ফলনও বেশি হয়।

 সার প্রয়োগ

মেটে আলুর চাষাবাদে বেশি ছাই ও জৈব সার ব্যবহার করা উত্তম। গোবর সারের ব্যাপক ব্যবহারে ফলে আলুর আকার বড় হয় ও ফলন বেশি পাওয়া যায়।

এছাড়া… 

  • চারা লাগানোর এক মাস পর পর ২-৩ বার ইউরিয়া ৫০ গ্রাম এবং পটাশ ৫০ গ্রাম হারে প্রতিটি গাছের গোড়ার চারপাশের মাটিতে ২-৩ আঙুল গভীরে প্রয়োগ করতে পারেন।
  • জমিতে যথেষ্ট অনুপাতে নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম প্রয়োগ করতে হবে।
  • তবে খেয়াল রাখবেন মেটে আলু লাগানোর সময় কোন রাসায়নিক সার ব্যবহার করবেন না।
  • মেটে আলু চাষে হেক্টরপ্রতি ৯০ কেজি নাইট্রোজেন, ১৯৫ কেজি ইউরিয়া সার, ৬০ কেজি এমওপি সার দিতে হবে।
  • প্রথমবার আগাছা পরিষ্কার করে অর্ধেক ইউরিয়া, অর্ধেক এমওপি ও সবটুকু টিএসপি সার দিতে হবে।
  • বাকি সার একমাস পরে দ্বিতীয়বার পরিষ্কার করার সময় দিতে হবে।
সেচ ও পরিচর্যা

মেটে আলুর চারা গজানো পর মাটিতে রসের অভাব হলে চারা মারা যেতে পারে। এমনকি গাছের প্রাথমিক বৃদ্ধি পর্যায়েও মাটিতে রসের অভাব হলে লতার আগা শুকিয়ে যায়।

তাই গোড়ার মাটি শুকিয়ে আসার আগেই সেচ দিতে হবে। বর্ষার সময় সেচ দেয়ার দরকার নেই। এছাড়া চারা গজানোর পর থেকেই জমি/গাছের মাদা আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।

মনে রাখতে হবে লতানো গাছের অবলম্বন। গাছ যত প্রসারিত হতে পারবে মাটির নিচের আলু তত বড় হবে। জমির আগাছা অন্তত ২-৩ বার পরিষ্কার করতে হবে।

যখন চারা গজানো পর চারার গোড়ায় লম্বা বাঁশ পুঁতে দিতে হবে। বাঁশের মাথায় ঝাটি কঞ্চি বেঁধে দিতে হবে যাতে লতা লতিয়ে ঝাটির উপর অবস্থান নিতে পারে।

গজানো চারা বড় হতে থাকলে বাঁশের সাথে লতা জড়িয়ে দিতে হবে। এবার লতা লতিয়ে দিলেই আর কোন ঝামেল নেই।

এছাড়া বর্ষার সময় লাইনের মাঝখানে মাটি কোঁদাল দিয়ে লতার বরাবর উঁচু আইলের মত করে দিতে হবে যাতে সহজেই পানি নিকাশের ভালোব্যবস্থা করা যায়।

পোকামাকড় ও রোগদমন

মেটে আলুতে রোগ এবং পোকার আক্রমণ নেই বললেই চলে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে শোষক পোকার আক্রমণ দেখা যায়।  এক্ষেত্রে কীটনাশক হিসেবে সেভিন প্রয়োগ করা যায়।

এছাড়া…

  • গাছের গোড়ায় জলাবদ্ধতা এবং গোড়া পচা রোগে ফলনের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।
  • মেটে আলু গাছে লেদা পোকা খেয়ে বড় বড় ফাঁকা করে ফেলে।
  • এক ধরণের বিটিল পোকা ছিদ্র করে খায়, এক পর্যায়ে পাতার শিরা রেখে প্রায় সব সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে।
  • কোনো কোনো ক্ষেত্রে শামুকও ক্ষতি করে থাকে। হাত দিয়ে শামুক মেরে এর হাত থেকে সহাজেই রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

অ্যানথ্রাকনোজ রোগে পাতায় পোড়া পোড়া শুকনো বাদামি দাগ পড়ে। মেটে আলু গাছে পোকা দেখলে হাত দিয়ে ধরে টিপে মেরে ফেলতে হবে। ছত্রাক আক্রমণ করলে ছত্রাকনাশক দিতে হবে।

শেষ কথা

মেটে আলুর ফলন সংগ্রহ করতে ৮ থেকে ১২ মাস সময় লাগে। যখন দেখা যাবে মেটে আলু গাছের পাতা হলুদ হয়ে গেছে তখনই আলু তোলার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।

খন্তা বা কোদাল দিয়ে সাবধানে মেটে আলু তুলতে হবে। অনেকেই একই গাছ থেকে দুই বার আলু তোলেন কিন্তু দুইবার আলু তোলা লাভজনক নয়।

অন্যান্য সবজির তুলনায় এই সবজি উৎপাদনে ঝুঁকি ও রোগবালাই যেমন কম, তেমনি পরিশ্রম হয় না বললেই চলে।

তাই সবজির ঘাটতি মেটাতে, পরিত্যক্ত স্থানের সঠিক ব্যবহার করতে, বিষমুক্ত সবজি পেতে এই সবজিটি উলেস্নখযোগ্য অবদান রাখতে পারবে।

–লেখাটির বিভিন্ন তথ্য কৃষি তথ্য সার্ভিস ও অনলাইন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।  বগ্লে প্রকাশিত কোনও তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।

আরো পড়ুন … 

**চাষাবাদ ও কৃষি সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, খবর পড়তে আজই জয়েন করুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )”  হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )” অথবা  টেলিগ্রাম চ্যানেল  ”বীজ ঘর ( কৃষি কথা )’‘ এ। 


Discover more from বীজ ঘর ডটকম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

মতামত দিন

Item added to cart.
0 items - 0.00
Need Help?