আমাদের দেশে শীত ও গ্রীষ্ম দুই ঋতুতেই ডাটা শাক চাষ করা যায়। এই শকের চাষাবাদ খুব একটা কঠিন; খুব সহজে করা যায়।
আজ আমরা এই নিবন্ধে সহজ ডাটা শাকের চাষ পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
জেনে নেওয়া যাক সহজতম ডাটা শাক চাষ পদ্ধতি
সেপ্টেম্বর-অক্টোবর (খরিফ) ও মার্চ-এপ্রিল (রবি) উভয় মৌসুমে ডাটা শাকের চাষ করা যায়। ডাটা শাক চাষের জন্য জন্য সুনিষ্কাশিত উর্বর ও গভীর মাটি উত্তম। ‘জো’ থাকে এমন মাটিতে এই শাক সবচেয়ে ভাল জন্মে।
জমি তৈরি ও বীজ বপন
ডাটা শাক চাষাবাদের জমি গভীর ভাবে চাষ ও মই দিতে হবে (মাটি যেন মিহি হয় এবং জমি যাতে ঢেলামুক্ত হয়)।
- এরপর ২.১৮ হাত প্রশ্বস্ত এবং প্রয়োজন মত লম্বা করে বেড তৈরি করে নিতে হবে।
- ২ বেডের মাঝে ১ ফুট (৩০ সেমি.) নালা থাকবে।
- কম করে ৩০ সেমি. দূরত্ব রেখে সারি তৈরি করতে হবে।
- বীজ সরাসরি ছিটিয়ে অথবা লাইন করে বোনা যায়।
- লাইনের ক্ষেত্রে বেডের উভয় পাশে ১০ সেমি.বাদ রেখে লম্বালম্বি ২০ সেমি. দূরে দূরে লাইন করে বীজ বোনতে হবে।
- সারিতে কাঠির সাহায্যে ১.০ থেকে ১.৫ সে.মি. গভীর লাইন টানতে হবে।
- লাইনে বীজ বোনে হাত দিয়ে সমান করে দিতে হবে।
- ছিটিয়ে বুনলে বীজের সঙ্গে সমপরিমাণ ছাই বা পাতলা বালি মিশিয়ে নিলে সমভাবে বীজ পড়বে।
- বপনের পর হাল্কাভাবে মই দিয়ে বীজ ঢেকে দিতে হবে।
- চারা গজানোর পর ক্রমান্বয়ে পাতলা করে দিতে হবে।
- যেন শেষ পর্যন্ত সারিতে পাশাপাশি দুটি গাছ ৮/১২ সে.মি. দূরত্বে থাকে।
- জমিতে পর্যাপ্ত রস না থাকলে ঝাঝরি দিয়ে হাল্কা করে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে।
- তাহলে বীজ দ্রুত এবং সমানভাবে গজাবে।
- ডাটা চাষের জন্য শতাংশ প্রতি ১৫ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।
সার প্রয়োগ
ডাটা শাকের ভালো ফলন পেতে হলে চাষাবাদের জমিতে পরিমিত মাত্রায় সার দিতে করতে হবে। প্রতি শতকের জন্য
- গোবর/কম্পোস্ট সার ৪০কেজি ,
- ২৬৪ গ্রাম ইউরিয়া,
- টিএসপি ৮০০গ্রাম
- এমওপি ৬০০গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়।
জমি শেষবার চাষ দেওয়ার সময় গোবর, টিএসপি, অর্ধেক ইউরিয়া এবং পটাশ সার সমানুপাতে মাটিতে ছিটিয়ে দিতে হবে। বীজ বোনার ১৫ দিন বাদে বাকি পটাশ এবং ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে।
সেচ ও পরিচর্যা
ডাটা ক্ষেতে শুষ্ক মৌসুমে সপ্তাহ অন্তর অন্তর সেচ দিতে হবে।
- এছাড়া বীজ বোনার ১ সপ্তাহ পর গাছ পাতলা করণ ও আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে।
- জমির উপর চটা লেগে গেলে ভেঙ্গে দিতে হবে।
- এতে করে দ্রুত গাছ বৃদ্ধি পাবে এবং গোড়া পচা রোগ থেকে রক্ষা পাবে।
পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন
এনথ্রাকনোজ বা ফলপঁচা: এই রোগ বাঁচতে রোগমুক্ত ভাল বীজ ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া ঝরণা দিয়ে ক্ষেতে সেচ দেওয়া যাবে না।
অনুমোদিত ছত্রাকনাশক ব্যাভিষ্টিন/ নোইন বা একোনাজল আক্রমণের শুরুতেই ব্যবহার করতে হবে।
জাব পোকা: প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত পাতা ও ডগার জাব পোকা হাত দিয়ে পিষে মেরে ফেলা যেতে পারে।
- তবে নিম বীজের দ্রবন স্প্রে করেও এ পোকার আক্রমন অনেকাংশে কমানো যায়।
- আক্রমনের মাত্রা বেশী হলে স্বল্পমেয়াদী বিষ ক্রিয়া সম্পন্ন কীটনাশক ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি স্প্রে করতে হবে।
ফলন ও ফসল সংগ্রহ
কাণ্ডপ্রধান জাতে ফসল তোলার নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। গাছে ফুল আসার পূর্ব পর্যন্ত ফসল সংগ্রহ করা যায়।
তবে ভালো স্বাদ পাওয়ার জন্য পাতা নরম বা মোলায়েম অবস্থায় ফসল তোলতে হবে। কীটনাশক প্রয়োগ করে থাকলে ৫-৭ দিন শাক সংগ্রহ না করাই উত্তম।
ডাটা একটি উচ্চ ফলনশীল সবজি। আধুনিক পদ্ধতিতে উন্নত জাতের চাষ করলে প্রতি একরে ১০০-১২০ টন ডাটা পাওয়া সম্ভব।
–লেখাটির বিভিন্ন তথ্য কৃষি তথ্য সার্ভিস ও অনলাইন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। বগ্লে প্রকাশিত কোনও তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
আরো পড়ুন …
- সহজে আনারস চাষ করবেন যেভাবে
- পান চাষ, জেনে নিন চাষাবাদ পদ্ধতি ও পরিচর্যা
- জেনে নিন সঠিক বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি
- সঠিক ও সহজ করলা বা তিত করলা চাষ পদ্ধতি
- আধুনিক কাঁকরোল চাষ পদ্ধতি
- নতুন পদ্ধতিতে ড্রাগন ফল চাষ
**চাষাবাদ ও কৃষি সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, খবর পড়তে আজই জয়েন করুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )” হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )” অথবা টেলিগ্রাম চ্যানেল ”বীজ ঘর ( কৃষি কথা )’‘ এ।