সহজে আনারস চাষ করবেন যেভাবে

বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি জাতের আনারস চাষ হয়। এই ফলের ব্যাপক চাষাবাদ হয় মূলত পাহাড়ি অঞ্চলে।

তবে ইদানিং ছাদ বাগান বা টবেও আনারসের চাষ হচ্ছে।

আনারসের চাষাবাদ পদ্ধতি খুব সহজ; উল্লেখযোগ্য কোন যত্ন-আত্বি ছাড়াই এই ফলের চাষ করা সম্ভব। আই আজ আমরা এই নিবন্ধে আধুনিক আনারস চাষাবাদ পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

সঠিক ও আধুনিক আনারস চাষ পদ্ধতি

সাধারণত সুনিষ্কাশিত উচু দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি আনারস চাষের জন্য খু্বই উত্তম। তবে পানি জমে না এমন উঁচু জমি বাছাই করতে হবে।

সয়াবিন, আদা, সরিষা, কলাই, কচু ইত্যাদি সাথী ফসল হিসেবে আনারসের সাথে অনায়াসে চাষ করা স্মভব। পাহাড়ি এলাকায় আনারস চাষ করলে বিভিন্ন ফল গাছের বাগানের ভেতর এটি চাষ করা যায়।

জমি তৈরি ও চারা বপন

আনারস চাষের জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে মাটি সমতল করে তৈরি করতে হবে। এরপর বেড তৈরি করে নিতে হবে।

  • জমি থেকে ১৫ সেন্টিমিটার উঁচু এবং ১ মিটার প্রশস্ত বেড তেরি করতে হবে।
  • বেড থেকে বেডের দূরত্ব হবে ৫০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার।
  • আনারসের চারা লাগানোর উপযুক্ত সময় মধ্য আশ্বিন থেকে মধ্য অগ্রাহায়ণ পর্যন্ত।
  •  মধ্য মাঘ থেকে মধ্য ফাল্গুন পর্যন্ত চারা লাগানো যাবে সেচ সুবিধা থাকলে।
  • লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ৫০ সেন্টিমিটার।
  • এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৪০ সেন্টিমিটার হবে।
  • চারা যদি বেশি লম্বা হয় ৩০ সেমি রেখে বাকি টা কেটে দিতে হবে।
  • চারা বপনের পর ভালোভাবে গোড়ার মাটি চেপে দিতে হবে।
  •  বীজ থেকে আনারসের বংশ বিস্তার হয় না।
  • চারার মাধ্যমে এই ফলের বংশ বিস্তার হয়।
  • মুলত আনারসের বংশ বিস্তার হয় পার্শ্ব চারা, বোটার চারা, মুকুট চারা ও গুড়ি চারা দিয়ে।
  • এদের মধ্যে পার্শ্ব চারা সবচেয়ে ভালো।

তবে পাহাড়ের ঢালে আনারস চাষের সময় জমি কখন ও আলগা করা যাবে না; শুধু আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। তবে চারার শূণ্যস্থান পূরণ করা ,সার প্রয়োগ ও বালাই ব্যবস্থাপনার দিকে বিশেষ ভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে।

সার প্রয়োগ

ভালো ফলন পেতে হলে আনারস চাষাবাদের জমিতে পরিমিত মাত্রায় সার দিতে করতে হবে। জৈবসার সহ অন্যান্য সব ধরনের সার ই প্রয়োজন অনুযায়ী দিতে করতে হবে।

জৈব সার দিলে মাটির গুনাগুন ভালো থাকবে। এছাড়া প্রতি গাছে …

  • গোবর সার ৩১০ গ্রাম,
  • ৩৬ গ্রাম ইউরিয়া সার,
  • ১৫ গ্রাম টিএসপি সার,
  • ৩৫ গ্রাম এমওপি সার,
  • জিপসাম সার ১৫ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়।

ইউরিয়া ও পটাশ সরি চারা বপন ৪-৫ মাস পর থেকে শুরু করে ৫ কিসি-তে প্রয়োগ করতে হবে। অন্যান্য সার গুলো বেড তৈরির সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।  গাছের বয়স ৭-৮ মাস হলে একই ভাবে আবার এই সার দিতে হবে।

সেচ ও পরিচর্যা

শুকনো মৌসুমে আনারস চাষের জমিতে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। তবে বর্ষাকালে অতিরিক্ত গাছের গোড়ায় যেন অতিরিক্ত পানি জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

  • প্রয়োজনে নালা তৈরি করে অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে হবে।
  • এছাড়া আনারস ক্ষেত সব সময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
  • বছরে ২ বার আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। একবার আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ফল সংগ্রহ করার পর ও দ্বিতীয়বার অক্টোবর-নভেম্বর মাসে দিকে।
  • প্রতিবার সেচ ও সার দেওয়ার পর মালচ দিয়ে দিলে জমি আগাছা মুক্ত থাকে; এতে জমির উর্বরতা ও বৃদ্ধি পাবে।

রোগবালাই দমন

  • আনারস গাছে সাধারনত ফল পচা ও কান্ড পচা রোগ হয়ে থাকে।
  • এ সব রোগে আক্রান্ত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করে ছত্রাকনাশক স্প্রে করে রোগ দমন করতে হবে।
টবে আনারস চাষ

ছাদ বাগান বা  টবে আনারসের চাষাবাদ পদ্ধতি খুব সহজ। যেভাবে টবে আনারস চাষ করবেন…

  • ছাদ বা ব্যালকনিতে আনারসের চারা বপনের জন্য ১০ ইঞ্চি আকারের ড্রাম বা টব সংগ্রহ করতে হবে।
  • তবে টবের তলার ছিদ্রগুলো ইটের ছোট টুকরা দিয়ে বন্ধ করতে হবে।
  • এরপর ২ ভাগ বেলে দোআঁশ মাটি, ১ ভাগ গোবর, ১০-১৫ গ্রাম টি,এস,পি সার, ১০ গ্রাম পটাশ সার, এক সাথে মিশিয়ে ড্রাম বা টব ভরে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রেখতে হবে ১০ থেকে ১২ দিন ।
  • তারপর মাটি কিছুটা খুচিয়ে দিয়ে আবার ৪-৫ দিন এভাবেই রেখে দিতে হবে ।
  • যখন মাটি ঝুরঝুরে হবে তখন আনারসের চারা ড্রাম বা টবে বপন করতে হবে (সোজা করে লাগাতে হবে)।
  • গাছের গোড়ায় মাটি কিছুটা উচু করে দিতে হবে এবং চেপে দিতে হবে; যাতে গাছের গোড়া দিয়ে বেশী পানি না ঢুকতে পারে।
  • চারা লাগানোর ২-৩ মাস পর থেকে নিয়মিত ২৫-৩০ দিন অন্তর অন্তর সরিষার খৈল পচিয়ে অল্প পরিমানে দেওয়া উত্তম।
  • ১০-১৫ দিন অন্তর অন্তর টবের মাটি কিছুটা খুচিয়ে আলগা করে দিতে হবে।
ফলন ও ফল সংগ্রহ

আনারস চারা বপনের ১৫-১৬ মাস পর গাছে ফুল আসে। তবে জাত ভেদে ভিন্নতা দেখা যায়।

কিছু কিছু জাত আছে সারা বছর ফল দেয়।

সাধারণত মাঘ মাসের মধ্য থেকে চৈত্র মাসের মধ্য পর্যন্ত সময়ে আনারস গাছে ফুল আসে। আর বৈশাখ মাস থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ভাদ্র মাসের মাঝ থেকে আশ্বিন মাসের মাঝ পর্যন্ত সময়ে ফল পাকে।

ফল পরিপক্ক হলে তা সংগ্রহ করতে হবে। জাত ভেদে প্রতি হেক্টরে ১৫ থেকে ৪০ টন পর্যন্ত আনারসের ফলন হয়।

–লেখাটির বিভিন্ন তথ্য কৃষি তথ্য সার্ভিস ও অনলাইন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।  বগ্লে প্রকাশিত কোনও তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।

আরো পড়ুন … 

**চাষাবাদ ও কৃষি সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, খবর পড়তে আজই জয়েন করুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )”  হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )” অথবা  টেলিগ্রাম চ্যানেল  ”বীজ ঘর ( কৃষি কথা )’‘ এ। 

মতামত দিন

Item added to cart.
0 items - 0.00
Need Help?