কৃষি কথা

সঠিক শালগম চাষ পদ্ধতি

সঠিক শালগম চাষ পদ্ধতি

শালগম চাষ করা তুলনা মূলক সহজ। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের ফসল শালগম শীতকালীন সবজি হিসেবে এদেশে সুপরিচিত হলেও এর উৎপাদনের পরিমাণ অনেক কম।

এদিকে কম খরচে অধিক লাভের কারণে শালগমের চাষাবাদে ঝুঁকছে চাষিরা। তাই, আজ আমরা এই নিবন্ধে শালগমের চাষাবাদ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব।

শালগম চাষ পদ্ধতি

হালকা দো-আঁশ মাটি শালগমের জন্য উপযুক্ত। শালগম চাষাবাদের জমি অধিক আলো যুক্ত হতে হবে। তবে, উচ্চতাপ মাত্রা এই সবজির স্বাদ কমে যায় এবং মুল দ্রুত আঁশময় হয়ে উঠে।

অন্যদিকে অধিক বৃষ্টিপাত শালগমের জন্য ক্ষতিকর।

চাষের মৌসুম ও জমি তৈরি

  • বাংলাদেশে কেবল রবি মৌসুমে (আর্শ্বিন-কার্তিক ) শালগমের চাষ সম্ভব।
  • বৃষ্টির মৌসুম শেষ হবার পর ফসল লাগানো উচিত।
  • চারা কচি থাকা অবস্থায় বৃষ্টি হলে ফসল সহজেই নষ্ট হয়।
  • জমিতে বীজ বপন করার আগে জমি ভালো ভাবে তৈরি করে নিতে হবে।
  • জমিতে ৪-৫ টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে দিতে হবে।
  • তারপর বীজ বপন করতে হবে।

বীজ অথবা চারা বপন

  • বোনার আগে বীজ শোধন করে নিতে হবে (এতে বীজ বাহিত রোগ দ্বারা ফসল আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কম থাকে)।
  • বীজ বোনে অথবা চারা বপন করে শালগমের চাষাবাদ করা যায়।
  • তবে চারা বপনের সময় প্রধান শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা থাকে তাই চারা বপন পদ্ধতি না ব্যবহার করাই ভালো।
  • ভালো মানের বীজ বপন করার ৪০-৫০ দিনের মধ্যেই ফসল সংগ্রহের উপযোগী হয়ে থাকে।
  • বীজ সারিতে বপন করতে হবে।
  • এক সারি থেকে আরেক সারির দূরত্ব হবে ৩০ সেমি।
  • এক চারা থেকে আরেক চারার দূরত্ব হবে ২০ সেমি

সার ব্যবস্থাপনা

শালগম চাষ এ ভালো ফলন পেতে জমিতে প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করতে হবে। হেক্টর প্রতি …

  • ১০ টন গোবর,
  • ১৫০ কেজি ইউরিয়া,
  • ১২৫ কেজি টিএসপি এবং ১৭৫কেজি মিউরেট অব পটাশ সুপারিশ করা হয়েছে৷

আগাম জাতের বেলায় সব সার ফসল লাগাবার সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে, নাবি জাতের বেলায় ইউরিয়া ও পটাশের অর্ধেক উপরি প্রয়োগ করা ভাল।

এছাড়া, বীজ বোনার ৩০ দিন পর প্রথম কিস্তি সার প্রয়োগ করতে হবে । তখন ইউরিয়া দিতে হবে ১৫০ গ্রাম ও এমওপি দিতে হবে ১৫০ গ্রাম।

আর বীজ বোনার ৪৫ দিন পর দ্বিতীয় কিস্তি দিতে হবে আরো ১৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও ১৫০ গ্রাম এমওপি।

প্রতিবার সার প্রয়োগ করার পর জমিতে সেচ দিতে হবে।

সেচ প্রয়োগ ও আগাছা দমন

শালগমের উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে সেচ দিতে হবে। এছাড়া…

  • সেচ দেওয়ার পর জমিতে জো আসলে মাটির চটা ভেঙে দিতে হবে।
  • জমিতে চারা রোপন করার পর প্রয়োজন অনুযায়ী এক সপ্তাহে দুটি সেচ দিতে হবে।
  • তারপর ৭-১০ দিন পর পর সেচ দিলে হবে।
  • জমিতে সেচ ঠিক মত দিতে হবে কারণ ফসলের আর্দ্রতা মাটির আর্দ্রতার উপর নির্ভর করে।
  • জমিতে জলের পরিমান কম হলে ফল গুলি তিতা স্বাদ যুক্ত হয়ে যেতে পারে।
  • আবার জল বেশি হলে ফলের স্বাদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং ফল জলময় হয়ে যেতে পারে।
  • তাই শালগম চাষে মাটিতে জলের পরিমান ঠিক রাখা খুব জরুরি।
  • জমির আগাছা ঠিক মত পরিষ্কার করে দিতে হবে।
  • জমিতে আগাছা জমে থাকলে ফসলের বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।
  • জমি নিড়ানি দিয়ে গোড়া আলগা করে দিতে হবে।
  • প্রয়োজনে গোড়ায় মাটি দিয়ে দিতে হবে।
পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন

কাটুই পোকা শালগমের চারা গাছ কেটে নষ্ট করে দেয়। শালগম পাতায় দাগ প্রধান সমস্যা।

এই পোকা দমনের জন্য ৫ লিটার জলে দেড় চা-চামচ ডায়াজিনন মিশিয়ে ছিটাতে হবে।

এছাড়াও, জাব পোকা ও শুয়ো পোকা গাছের পাতা খেয়ে ফেলে।

এই পোকা দমনের জন্য ৫ শতক জমিতে ১০ লিটার জলে ৫ চা-চামচ ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি কীটনাশক মিশিয়ে গাছে স্প্রে করতে হবে |

ফলন ও ফসল সংগ্রহ

এক শতক জমিতে প্রায় ১০০-১২০ কেজি শালগম এর ফলন হয়ে থাকে। শালগম বেশি পরিপক্ক হয়ে গেলে বাজারে আনা যাবে না।

তখন সে সব শালগমের মূল আশ যুক্ত হয়ে যায় এবং ফসল স্বাদহীন হয়ে যায়।সাধারনত বীজ বপন করার ৪৫-৬০ দিনের মধ্যেই শালগম খাওয়ার উপযু্ক্ত হয়ে থাকে।

–লেখাটির বিভিন্ন তথ্য কৃষি তথ্য সার্ভিস ও অনলাইন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।  বগ্লে প্রকাশিত কোনও তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।

আরো পড়ুন … 

**চাষাবাদ ও কৃষি সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, খবর পড়তে আজই জয়েন করুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )”  হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )” অথবা  টেলিগ্রাম চ্যানেল  ”বীজ ঘর ( কৃষি কথা )’‘ এ। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *