অর্কিড ফুল চাষ, জেনে নিন আধুনিক পদ্ধতি

বাংলাদেশে ইদানীং বাণিজ্যিকভাবে আকর্ষণীয়, রঙিন ও সুগন্ধি ফুলের জন্য বিখ্যাত অর্কিড ফুল চাষ হচ্ছে। তবে এই আকর্ষণীয় ফুল দুনিয়াজুড়ে অনেকেই তাদের বাগানে লাগাতে পছন্দ করে।

অর্কিড ফুল জন্মানোর জন্য মাটির প্রয়োজন হয় না; তাই ইনডোর প্লান্ট হিসাবে আপনি ঘরেই এই ফুল রাখতে পারেন। কি ভাবে সঠিক পদ্ধতিতে অর্কিড ফুলের চাষ করবেন তা আজ আমরা এই নিবন্ধে বিস্তারিত তুলে ধরব।

যেভাবে অনিন্দ্য সুন্দর অর্কিড ফুল চাষ করবেন

পরাশ্রয়ী উদ্ভিত অর্কিড প্রচন্ড সূর্যের আলোতে ভালো হয় না; স্বল্প আলোতেও এই ফুল ভালো জন্মাতে পারে।

  • অর্কিড ফুলের চাষের জন্য ছায়াযুক্ত সুনিষ্কাশিত কিন্তু স্যাঁতস্যাঁতে জমিতে চাষ খুবই উপযোগী।
  • এমন ছায়াযুক্ত জমি নির্বাচন যাতে ৪০-৬০% সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে।
  • বহুবর্ষজীবী এই ফুল টবে চাষের ক্ষেত্রে বড় গাছের নিচে চাষ করা উত্তম।
  • অর্কিড গাছের ফুল কাটার পর প্রতিটি গাছ থেকে পার্শ্বীয়ভাবে সাকার বের হয়।
  • এই সাকারসমূহ গাছে লাগানো অবস্থায় যখন শিকড় বের হয়  তা তখন গাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে মূল জমিতে লাগানো যেতে পারে।
  • এছাড়া কেটে ফেলা ফুলের স্টিকের ফুল শেষ হয়ে গেলে তা থেকেও চারা উৎপাদন করা সম্ভব (এজন্য বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়)।

জমি তৈরি ও চারা রোপণ

  • অর্কিড ফুলের চাষাবাদের জন্য গোবর বা কম্পোস্ট, নারিকেলের ছোবড়া, ধানের তুষ ও বেলে দো-আঁশ মাটির সাথে সমপরিমাণ মিশিয়ে বেড বা টব তৈরি করতে হবে।
  • বিভাজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্কিড ফুলের গাছ থেকে সাকার সংগ্রহ করা যায়।
  • অথবা টিস্যু কালচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্কিড চারা তৈরি করে জমি বা টবে রোপন করতে হয়।
  • সাকার লাগানোর সময় সারি থেকে সারি দূরত্ব হবে ৩০-৪০ সেন্টিমিটার।
  • এবং গাছ থেকে গাছে ২৫-৩০ সেন্টিমিটার দূরত্ব রাখতে হয়।
  • এমন ভাবে সাকার রোপন করতে হবে শেকড়গুলো পুরোপুরি যেন মাটির নিচে থাকে।
  • জমি বা টবে পর্যাপ্ত রস থাকতে লাগানোর পর সেচ দিতে হয়, যাতে সাকারগুলো মাটিতে লেগে যায়।

সেচ ও সার প্রয়োগ

অর্কিড ফুল চাষের জন্য  ইউরিয়া, টিএসপি ও এমপি সমৃদ্ধ ২০:২০:২০ মিশ্র সার বেশ উপযোগী।

  • সার পানিতে গুলিয়ে সপ্তাহে ১-২দিন গাছে স্প্রে করতে হবে।
  • স্প্রে করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে গাছের পাতা যেন ভালোভাবে ভিজে যায়।
  • অবস্থা বুঝে নিয়মিত সেচ দিতে হবে।
  • এছাড়াও এ ফুল চাষের জন্য বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৬০ ডিগ্রি বজায় রাখতে হলে স্প্রিংকলার দিয়ে মাঝে মাঝে পানি স্প্রে করতে হয়।
রোগবালাই দমন

সাধারণত অর্কিড ফুলে তেমন কোন রোগ বা পোকার আক্রমণ দেখা যায় না।

তবে ভাইরাস রোগে আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। ফুলের কুঁড়ির কীড়া দমনের জন্য যে কোন অনুমোদিত কীটনাশক স্প্রে করতে পারেন।

ফলন ও ফুল সংগ্রহ

জাতভেদে অর্কিডের ফুল সারা বছর ফোটে তবে দেশীয় অর্কিড গাছে সাধরনত ফাল্গুন-চৈত্র মাসেফুল আসে।

সাকার থেকে গাছ লাগানোর ১ বছরের মধ্যেই ফুল আসলেও, টিস্যুকালচারের চারা থেকে ফুল পেতে কমপক্ষে ১৮ মাস অপেক্ষা করতে হয়।

বাণিজ্যিক অর্কিড চাষের ক্ষেত্রে স্টিকের ১ -২টি ফুল ফোটার সাথে সাথে কাটতে হবে। তবে টবে সৌখিন চাষের ক্ষেত্রে ফুল কাটার প্রয়োজন নেই।

বৃষ্টির সময় অথবা ভেজা অবস্থায় ফুল সংগ্রহ করা উচিত নয়। ফুল সংগ্রহের পর পরই এর ডাটার গোড়া পানিতে ডুবিয়ে রাখলে ফুল বেশি দিন সতেজ থাকে।

হেক্টর প্রতি প্রথম বছরে ৮০০০ স্টিক, দ্বিতীয় বছরে ১৫০০ স্টিক, তৃতীয় বছরে ২৫০০০ স্টিক উৎপাদিত হয় |

বগ্লে প্রকাশিত কোনও তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।

আরো পড়ুন … 

**চাষাবাদ ও কৃষি সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, খবর পড়তে আজই জয়েন করুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )”  হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )” অথবা  টেলিগ্রাম চ্যানেল  ”বীজ ঘর ( কৃষি কথা )’‘ এ। 

মতামত দিন

Item added to cart.
0 items - 0.00