কৃষি কথা

আধুনিক রোজেলা বা চুকাই চাষ পদ্ধতি জেনে নিন

জেনে নিন আধুনিক রোজেলা বা চুকাই চাষ পদ্ধতি

চুকাই চাষ পদ্ধতি: চুকাই চাষাবাদ বাংলাদেশজুড়ে হচ্ছে। তবে, পাবর্ত্যাঞ্চলে প্রায় প্রতিটি বাড়ির আঙিনা বা বাণিজ্যিকভাবে রোজেলা বা চুকাইর চাষ করতে দেখা যায়।

এছাড়া টাঙ্গাইল, ঢাকা, ময়মনসিংহ, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, কিশোরগঞ্জ, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা, যশোর, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলার উর্বর জমিতে রোজেলা বা চুকাইর ব্যাপক ফলন হয়ে থাকে।

অম্ল, হুগ্নিমুখুই, খড়গুলা, হইলফা, চুকাই, চুকুল, চুকুরি, মেস্তা, মেষ্টা, চুপড়, চুকা, চুক্কি, চুই, হড়গড়া বাংলাদেশের নানা স্থানে নানা নামে পরিচিত। তবে এর বৈজ্ঞানিক নাম রোজেলা এবং সেই নামেই বিশ্বের অনেক দেশে এটি পরিচিত।

যে নামে পরিচিত হোক না কেন ব্যাপক চাহিদার পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় ইদানিং চুকাই চাষাবাদে; চাষিদের আগ্রহ বাড়ছে দিন দিন।

তাই আজ আমরা এই নিবন্ধে চুকাই চাষের পদ্ধতি ও কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

সহজ চুকাই চাষ পদ্ধতি ও কৌশল; যা জানা দরকার

স্থানীয় জাত ছাড়াও বাংলাদেশ পাঠ গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০১০ সালে অধিক ফলনশীল সবজি হিসেবে খাবার উপযোগী একটি উন্নত চুকাইর জাত উদ্ভাবন করে; যা ভিএম-০১ নামে একটি জাত অবমুক্ত করেছে।

যারা রোজেলা বা চুকাই চাষ করে এমন কৃষকদের মতে…

  • এই ফল চাষে  খুব বেশি পানি লাগে না; তবে বেশি রোদের দরকার হয়।
  • বর্ষা ও শীত চাষাবাদের প্রধান মৌসুম; তবে সারা বছর চাষযোগ্য।

জমি তৈরি ও বীজ বপনের কৌশল

উচ্চফলনশীল রোজেলা বা চুকাই বীজ

উচ্চফলনশীল রোজেলা বা চুকাই বীজ কিনুন

উঁচু এবং মধ্যম উঁচু দোআঁশ এবং বেলে দোআঁশ মাটির জমিতে রোজেলা বা চুকাই চাষাবাদ করা যায়। তাছাড়া পাহাড়ি এলাকায়, বসতবাড়ির আঙিনা ও আশপাশের জমি, অনুবর্র আবাদযোগ্য প্রান্তিক জমিতে চুকুর চাষাবাদ ভালো হয়।

  • চুকাই চাষের জমি অবস্থাভেদে আড়াআড়িভাবে ৩ থেকে ৪ বার চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে।
  • সাধারণত চুকাই বা রোজেলার চারা তৈরি করা হয় বীজ থেকে।
  • সরাসরি জমিতে বীজ বোনে চকাইর চাষাবাদ করা হয়।
  • তবে পাহাড়ের ঢালে বীজ বোনলে প্রতি গর্তে ৩ থেকে ৪টি করে বীজ বপন করতে হবে।
  • বীজ থেকে চারা হওয়ার পর চারাতে ২-৩টি পাতা বের হলে প্রতি গর্তে ১-২টি চারা রেখে বাকি গুলো তুলে ফেলতে হবে।
  • জুম চাষ করার ক্ষেত্রে সাধারণত মার্চ মাস থেকে এপ্রিল মাসে বীজ বোনা হয়। তবে বীজ বপন উত্তম সময় বৈশাখের প্রথম থেকে শ্রাবনের শেষ পর্যন্ত।
  • বীজ ২ থেকে ২.৫০ফুট দূরত্বে সারি করে বপন করতে হবে।
  • সমতল ভূমির চেয়ে পাহাড়ি এলাকায় চকাই গাছ বেশি জন্মায়।

সার প্রয়োগ

সাধারণত চকাইর চাষাবাদে সার প্রয়োগ করতে হয় না। তবে গাছের বৃদ্ধি ও ভালো ফলনের জন্য অল্প সার প্রয়োগ করতে পারেন।

প্রতি হেক্টর নিম্নে বর্ণিত সার প্রয়োগ করতে পারেন (সারের নাম, সারের পরিমাণ)…

  • প্রতি হেক্টর গোবর ১ টন।
  • ১৩২ কেজি ইউরিয়া।
  • ২৫ কেজি টিএসপি।
  • ৪০ কেজি এমওপি জমি তৈরি সময় প্রয়োগ করতে পারেন।

এই ফসলের চাষের জমিতে জিপসাম ও সালফেট সার প্রয়োগ করা উত্তম। তবে, দস্তা ও গন্ধকের অভাব দেখা দিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া বীজ বোনার এক মাস পর প্রতি শতকে ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম ইউরিয়া পার্শ্ব প্রয়োগ করতে পারেন।

সেচ ও পরিচর্যা

রোজেলা বা চুকাই গাছ একদম পানি সহ্য করতে পারে না। তাই বৃষ্টি বা সেচের পানি চাষের জমিতে জমে যেন না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

  • চুকাই চাষের জমিতে প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ দিতে হবে।
  • তবে পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত নালা রাখতে হবে।
  • ভালো ফলনের জন্য চারা গজানোর পর প্রয়োজন মত নিড়ানি ও চারা পাতলা করে দিতে হবে।

রোজেলা বা চুকাই গাছ ৪৫ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে গেলে আর আগাছা পরিস্কারের দরকার হয় না। তখন রোজেলা গাছের ছায়াতে আগাছা তেমন বড় হতে পারে না।

ফলন ও ফল সংগ্রহ

বীজ বপনের ১৩০ থেকে ১৪০ দিনের মধ্যেই চুকাই গাছে ফুল আসতে শুরু করে। প্রাথমিক অবস্থায় টক হিসেবে কচি পাতা ব্যবহার করা যায়।

পরিপুষ্ট হলে ফল ছিঁড়ে অথবা মাংসল বৃতি সংগ্রহ করা হয়। নাবীতে বীজ বপনে পাতা, বৃতি খাওয়া যাবে ও বীজ উৎপাদন করা যাবে।

বগ্লে প্রকাশিত কোনও তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।

আরো পড়ুন … 

**চাষাবাদ ও কৃষি সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, খবর পড়তে আজই জয়েন করুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )”  হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )” অথবা  টেলিগ্রাম চ্যানেল  ”বীজ ঘর ( কৃষি কথা )’‘ এ। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *