মরিচ ও টমেটো চাষে রোগ ও পোকা দমনের জন্য পূর্ণাঙ্গ স্প্রে গাইড

জানুন মরিচ ও টমেটো চাষে পর্যায়ক্রমিক কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক স্প্রে শিডিউল। রোগ-পোকা নিয়ন্ত্রণ করুন নিরাপদ ও কার্যকর উপায়ে।

মরিচ ও টমেটো চাষে রোগ-পোকার ব্যবস্থাপনা: একটি পরিপূর্ণ স্প্রে গাইড

মরিচ কিংবা টমেটো চাষ করতে গিয়ে যখন রোগ ও পোকার আক্রমণ হয়, তখন অনেকেই দিশেহারা হয়ে পড়েন। প্রথমেই আমরা এমন কোনো বিষ খুঁজি যা একবারেই সব পোকা মারবে। কিন্তু কখনো কি চিন্তা করেছি – এর ফলাফল কী?

অতিরিক্ত বা ভুলভাবে কীটনাশক ব্যবহার আমাদের মাটিকে দূষিত করে, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হয় এবং অনেক সময় আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও হুমকিস্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়।

তাই প্রয়োজন পরিকল্পিত ও পর্যায়ক্রমিক স্প্রে শিডিউল, যা আপনি এখন নিচে পাচ্ছেন — ১৫টি ধাপে সাজানো একটি পূর্ণাঙ্গ স্প্রে গাইড, যা কার্যকর ও কৃষিবান্ধব।

স্প্রে শিডিউল (১ম থেকে ১৫তম ধাপ)

প্রতিটি স্প্রে-তে একাধিক ধরনের কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকের বিকল্প তালিকা দেওয়া হয়েছে। আপনার এলাকার পরিবেশ, পোকার প্রকৃতি এবং ফসলের বয়স অনুযায়ী যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন।

১ম স্প্রে: কীটনাশক: ইমিডাক্লোরোপ্রিড গ্রুপ (যেমন এডমায়ার ২০০ এসএল, কনফিডর ৭০ ডাব্লিউজি)

  • ডোজ: ০.৬ মিলি/লিটার
  • ছত্রাকনাশক: ম্যানকোজেব গ্রুপ (যেমন এগ্রিজেব ৮০ ডব্লিউপি)
  • ডোজ: ২ গ্রাম/লিটার

২য় স্প্রে: কীটনাশক: স্পাইরোটেট্রামেট বা স্পাইরোমেসিফেন গ্রুপ

  • ডোজ: ১ মিলি/লিটার
  • ছত্রাকনাশক: বেনডাজিম গ্রুপ (যেমন অটোস্টিন ৫০ ডব্লিউপি)
  • ডোজ: ২ গ্রাম/লিটার

৩য় স্প্রে: কীটনাশক: এসিফেট গ্রুপ (যেমন এসাটাফ ৭৫ এসপি)

  • ডোজ: ১.৫ গ্রাম/লিটার
  • ছত্রাকনাশক: কপার হাইড্রোঅক্সাইড গ্রুপ
  • ডোজ: ২ গ্রাম/লিটার

৪র্থ স্প্রে: কীটনাশক: এবামেকটিন + ইমিডাক্লোপ্রিড / ইমিডাক্লোপ্রিড + অ্যাসিটামিপ্রিড

  • ডোজ: ০.১৫ – ২ গ্রাম/লিটার
  • ছত্রাকনাশক: প্রপিকোনাজল গ্রুপ (যেমন টিল্ট ২৫০ ইসি)
  • ডোজ: ০.৫ মিলি/লিটার

৫ম থেকে ১৫তম স্প্রে: এগুলোতে পর্যায়ক্রমে ব্যবহার করা হয়েছে:

  • পাইমেট্রোজিন, নাইটেনপাইরাম, ইথিওন, ক্লোরফেনাপির, সাইপারমেথ্রিন, অ্যাসিটামিপ্রিড, বাইফেথ্রিন, বেটাসাইফ্লুথ্রিন ইত্যাদি।
  • ছত্রাকনাশক হিসেবে রয়েছে: এজোক্সিস্ট্রবিন, ডাইফেনোকোনাজল, কপার অক্সিক্লোরাইড, ম্যানকোজেব+কার্বেন্ডাজিম, কাসুগামাইসিন ইত্যাদি।

 স্প্রে ব্যবধান: চারা রোপণের ২–৩ সপ্তাহ পর শুরু করে প্রতি ৭–১০ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে।

গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:

  • স্প্রে করার সময় সকাল বা বিকেল বেছে নিন।
  • ব্যক্তিগত সুরক্ষাব্যবস্থা (গ্লাভস, মাস্ক, গগলস) ব্যবহার করুন।
  • ফসল তোলার কমপক্ষে ৭ দিন আগে স্প্রে বন্ধ করুন।
শেষ কথা:

পরিকল্পিতভাবে ফসলের রোগ ও পোকার ব্যবস্থাপনা করলে ফসল ভালো হবে, খরচ কমবে এবং ফলন বাড়বে। কেবল বিষ প্রয়োগে নয়, জ্ঞান ও সচেতনতাই হতে পারে চাষির আসল শক্তি।

সৌজন্য: মোঃ ফরিদুল ইসলাম,উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, ভোটমারী ব্লক, কালিগঞ্জ, লালমনিরহাট। বগ্লে প্রকাশিত কোনও তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।

আরও পড়ুন-

Discover more from বীজ ঘর ডটকম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

মতামত দিন

Item added to cart.
0 items - 0.00
Need Help?