যেভাবে উন্নত পদ্ধতিতে মরিচ চাষ করবেন

বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে সব ঋতুতে মরিচ চাষ করা যায়; তবে চরাঞ্চালে মরিচের উৎপাদন বেশ ভালো হয়।

সব ঋতুতে মরিচের চাষাবাদ করা গেলও, মূলত শুকনা মরিচ ৮৫% আসে শীতকালে। দেশে কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থাতেই জনপ্রিয় মসলা জাতীয় অর্থকরী ফসল মরিচের প্রচুর চাহিদা আছে।

বাজার মূল্যও বেশ ভাল। এ কারণে দিন দিন বাড়ছে বাণিজ্যিকভাবে মরিচ চাষাবাদ।

তাই আমরা এবার মরিচ চাষের আধুনিক পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব।

আধুনিক মরিচ চাষ পদ্ধতি

মরিচের ভালো ফলন পেতে কতগুলো নিয়মের ওপর অবশ্যই নির্ভর করতে হয়।

জাত –

মরিচের কোনো উদ্ভাবিত উন্নত জাত নেই। তবে বেশ কিছু স্থানীয় জাতের আবাদ এদেশে হয়ে থাকে।

তবে বারি মরিচ -১, বারি মরিচ-২ এবং বারি মরিচ -৩। বারি মরিচ -১ সারা বছর চাষ করা যায় । বারি মরিচ -২ গ্রীষ্মকালীন এবং বারি মরিচ-৩ শীতকালে চাষ উপযোগী।

এছাড়াও সনিক, প্রিমিয়াম, ধুম, মেজর, ডেমন, চন্দ্রমুখী, হটমাস্টার, এম এস ফায়ার, যমুনা প্রভৃতি জাতের মরিচেরও আবাদ হয়ে থাকে।

মাটি ও বীজ বোনার সময় –

হাইব্রিড মরিচ বীজ
হাইব্রিড মরিচ বীজ

পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত উঁচু বেলে দোআঁশ মাটিতেই মরিচের চাষাবাদের জন্য উপযুক্ত জমি। তবে, জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দো-আঁশ মাটি চাষাবাদের জন্য উত্তম।

মরিচ উষ্ণ ও শুষ্ক জলবায়ুর ফসল। অম্লীয় মাটিতে মরিচের চাষ করা গেলেও ক্ষারীয় মাটিতে ভাল হয় না।

বন্যা বিধৌত পলি এলাকায় মাঝারি উঁচু ভিটা যেখানে বর্ষার পর ভাদ্র (আগস্ট-সেপ্টেম্বর) মাসে জো আসে এমন জমিতে মরিচ ভাল হয়।

তবে  মরিচ চাষের জন্য এমন জমি নির্বাচন করতে হবে যে জমিতে বৃষ্টির পানি জমে থাকে না এবং বর্ষায় পানি উঠে না। জমিতে পানি নিষ্কাশনের সু-ব্যবস্থা থাকতে হবে।

যে স্থানে প্রচুর রোদ ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা আছে মরিচ চাষের জন্য সেই স্থান নির্বাচন করতে হবে।

বীজ বোনার সময়কাল 

সারা বছরই আবাদ হয়ে থাকে। তবে…

  • গ্রীষ্ম বা খরিপ মৌসুমে: ফেব্রুয়ারি মাঝামাঝি হতে মার্চ পর্যন্ত।
  • রবি মৌসুমে: আগস্ট মাঝামাঝি হতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

জমি ও বীজতলা তৈরি –

সেচ ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাসহ উচু জমি নির্বাচন করে ৫/৬ বার চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে।

শেষের চাষের সময় পূর্ণমাত্রায় গোবর, টিএসপি, জিপসাম এবং ১/৩ অংশ ইউরিয়া ও এমপি সার মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে । এবং মই দিয়ে সমান করে আগাছা বেছে ফেলে দিতে হবে।

মাটির ঢেলা ভেঙে মাটি ঝুরঝুর ও সমতল করে নিতে হবে

মাঠে সরাসরি বীজ বপনের জন্য ১ মিটার প্রস্থ বেড তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি দুটি বেডের মাঝখানে ৩০ সেমি প্রস্থ এবং ১০ সেমি. গভীরতা বিশিষ্ট নালা পানি সেচ ও নিষ্কাশনের সুবিধার্থে রাখতে হয়।

বেড সাধারণত ১৫-২০ সেমি উঁচু হবে।

মরিচের চারা উৎপাদন করে মূল জমিতে রোপণ করা হয়। চারার গুণাগুণ ফলনের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

এ কারণে উত্তম চারা উৎপাদনে বিশেষ দৃষ্টি রাখা আবশ্যক।

  • অপেক্ষাকৃত উঁচু জমি যেখানে পানি দাড়ায় না, যথেষ্ট আলো বাতাস পায়, পানি সেচের উৎস রয়েছে এবং আশে পাশে সোলানেসী পরিবারের কোন উদ্ভিদ নাই এরুপ জমি বীজতলা তৈরির জন্য উত্তম।
  • প্রতিটি বীজ তলার আকৃতি ৩ মি. ১ মি. হওয়া বাঞ্চনীয়। এ ধরনের প্রতিটি বীজ তলায় ১৫ গ্রাম হারে বীজ সারিতে বপন করতে হবে।
  • ভাল চারার জন্য প্রমে বীজতলার মাটিতে প্রয়োজনীয় কম্পোস্ট সার এবং ছাই মিশিয়ে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।
  • শোধিত বীজ তৈরিকৃত বীজতলায় ৪-৫ সেমি দূরে দূরে সারি করে ১ সেমি গভীরে সরু দাগ টেনে ঘন করে বপন করতে হবে।
বীজহার ও রোপণ পদ্ধতি

জমিতে সরাসরি বীজ বপন অথবা বীজতলায় চারা তৈরি; সাধারণত দুই পদ্ধতিতে মরিচের চাষ করা যায়।

রবি ও খরিফ উভয় মৌসুমে বীজতলায় চারা তৈরি করলে ১-১.৫ কেজি/হে. বীজের প্রয়োজন হয়। আবার সরাসরি ছিটিয়ে মরিচ চাষাবাদ করলে হেক্টরপ্রতি ৬-৭ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।

তবে এ পদ্ধতি শুধু মাত্র রবি মৌসুমে অবলম্বন করা উচিত।

বীজ বপনের পর বীজতলায় বীজ যাতে পোকামাকড় দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম সেভিন মিশিয়ে মাটিতে দিতে হয়।

এছাড়া……

  • জমিতে বীজ বপনের আগে ১২ ঘণ্টা পনিতে ভিজিয়ে রেখে।
  • মনে রাখা দরকার বীজ কোনো ক্রমেই ১-১.৫ সেমি. মাটির গভীরে যেন না যায়।
  • বপনের সময় জমিতে পর্যপ্ত পরিমাণ আর্দ্রতা বজায় রাখতে হবে।
  • বীজ বপনের পর অতিবৃষ্টি বা প্রখর রোদ থেকে রক্ষা পেতে বাঁশের চাটাই বা পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে দিতে হবে। বাঁশের চাটাই বা পলিথিন সকাল, বিকাল বা রাতে সরিয়ে নিতে হবে।
  • চারা গজানোর সাথে সাথে ইনসেক্ট প্রুফ নেট দিয়ে চারা ঢেকে দিতে হবে। এই নেট রোদ, বৃষ্টি এবং ভাইরাস বহনকারী বিভিনড়ব পোকামাকড় থেকে চারাকে রক্ষা করবে।
  • বীজ বুনার পর চারা বের না হওয়া পর্যন্ত নেটের উপর ঝরনা দিয়ে সেচ দেয়া আবশ্যক। ৫-৭ দিনের মধ্যে বীজ গজায়। চারা ৩-৪ সেমি হলে নির্দিষ্ট দূরত্বে চারা পাতলা করা হয়।
  • বীজতলায় আগাছা গজালে ১-২ বার নিড়ানী দিয়ে আগাছা বেছে মাটি আলগা করে দিলে চারা ভাল হয়।
  • চারা তোলার আগের দিন বীজতলায় সেচ দিলে মাটি নরম হয়। এতে শিকড়ের ক্ষতি না করে সহজেই চারা তোলা যায় এবং চারা সহজেই জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • চারার বয়স ৩০-৩৫ দিন হলে জমিতে লাগানোর উপযোগী হয়। খাট, মোটা কাণ্ড ও ৪-৫ পাতা বিশিষ্ট চারা লাগানোর জন্য ভাল।
  • সরাসরি ছিটিয়ে বপন করলে ১৫-২০সেমি. পরপর গাছ রেখে পাতলা করতে হবে।
চারা রোপণ ও পরিচর্যা

৩৫-৪০ দিন বয়সের সুস্থ চারা, ৫০-৬০ সেন্টিমিটার (সারি-সারি) দূরত্বে, ও ৫০-৬০ সেন্টিমিটার (চারা-চারা) পরপর, ৩-৪ সেন্টিমিটার গভীর গর্তে ১টি করে রোপণ করতে হবে।

চারা রোপণের পর ২-৩ দিন চারার গোড়ায় হালকা পরিমাণে পানি দিতে হবে।

সার প্রয়োগ

মরিচের জমিতে প্রতি হেক্টরে গোবর ১০ টন, ইউরিয়া ২৫০ কেজি, টিএসপি ২০০ কেজি এবং এমওপি সার ১৫০ কেজি প্রয়োগ করা হয়।

জমি তৈরির সময় সমুদয় গোবর, টিএসপি ও ৫০ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করা হয়।

চারা রোপণের ২৫ দিন পর ৮৪ কেজি ইউরিয়া ও ৩৪ কেজি এমওপি সার প্রথম উপরি প্রয়োগ করা হয়।

লাগানোর ৫০ দিন পর ২য় ও ৭০ দিন পর তৃতীয় কিস্তির উপরি সার প্রয়োগ করা হয়।

২য় ও ৩য় কিস্তির প্রতিবারে ৮৩ কেজি ইউরিয়া ও ৩৩ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করা হয়।

শহরে যারা ড্রামে মরিচের আবাদ করতে ইচ্ছুক তারা শুধুমাত্র জৈবসার যেমন খৈল, গোবর ব্যবহার করে মরিচ আবাদ করতে পারেন।

মরিচ চাষে সার প্রয়োগ

সেচ ব্যবস্থা ও আগাছা দমন

মরিচ জমিতে শুকনো মৌসুমে ৪ থেকে ৫ দিন এবং শীতকালে ১০ থেকে ১২ দিন পরপর সেচ দিতে হবে।

তাছাড়া প্রতি কিস্তি সার প্রয়োগের পরে সেচ দেয়া প্রয়োজন। সেচের কয়েক দিন পর মাটিতে চটা দেখা দিলে ভেঙ্গে দিতে হবে যাতে শিকড় প্রয়োজনীয় আলো ও বাতাস পায়।

এতে গাছের বৃদ্ধি বেশি হয়।

আগাছা দেখা দিলে তা পরিষ্কার করতে হবে এবং উপরি সার প্রয়োগের সময় কোদাল দিয়ে কুপিয়ে আলগা করে দিতে হবে।

মরিচ গাছের রোগ-বালাই, পোকা মাকড় ও প্রতিকার

মরিচ যে সব রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়, তাহলো ফুল শুকিয়ে যায় ও ঢলে পড়া, মরিচ পচা ও হলুদ মোজাইক ভাইরাস।রোগ প্রতিরোধক জাত ব্যবহার করে এসব রোগ দমন করা যায়।

প্রতিকারের ব্যবস্থা হিসেবে বোর্দো মিকচার বা কপার অক্সিক্লোরাইড নির্দিষ্ট অনুপাতে ব্যবহার করতে হবে।

  • সাধারণত, মাটি ও বীজের মধ্যে থাকা বিভিন্ন রকমের জীবাণু মরিচের রোগগুলোর জন্য দায়ী।
  • রোগগুলোর মধ্যে ড্যাম্পিং অফ, গোড়া পচা, মূল পচা রোগ অন্যতম। এ রোগগুলো সচারাচর চারা অবস্থাতেই হয়ে থাকে।
  • উপরোক্ত রোগগুলো পিথিয়াম ও রাইজোকটোনিয়া নামক ছত্রাকের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে।
  • বীজতলায় বীজ বপণের পরপরই বীজ পচে যেতে পারে অথবা চারা গজানোর পর চারা গাছ ফ্যাকাশে, দুর্বল ও লিকলিকে হয়ে যায়।
  • ছোট অবস্থায় চারার গোড়ায় পানিভেজা দাগ পড়ে ও চারা ঢলে পড়ে এবং মারা যায়।
  • এ রোগ থেকে রক্ষার উপায় হলো: মরিচের বীজ শোধন করে নেওয়া।
  • মরিচের ক্ষেতে মাইট ও থ্রিপসের আক্রমণ দেখা যায়। প্রতিকারের জন্য ম্যালাথিয়ন/ মেটাসিসটক্স প্রতি লিটার পানির সাথে ২ গ্রাম মিশিয়ে স্প্রে করলে এ সকল পোকা দমন করা যায়।
  • মরিচ গাছে এ্যানথ্যাকনোজ রোগের লক্ষণ দেখা দিলে টিল্ট নামক ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানির সাথে ২ গ্রাম মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হবে।
  • সাদা মাছি ভাইরাস রোগ বিস্তারে সহায়তা করে থাকে, সাদা মাছি দমনের জন্য ডায়াজিনন প্রতি লিটার পানির সাথে ৩ গ্রাম মিশিয়ে স্প্রে করতে হয়।

থ্রিপস ও জাব পোকা দ্বারা মরিচ আক্রান্ত হয়ে থাকে। সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এসব পোকা দমন করা হয়। পোকার আক্রমণ বেশী ম্যালাথিয়ন বা ফুরাডান কীটনাশক ঔষধ ব্যবহার করা যাবে।

টবে সহজে মরিচের চাষ করবেন যেভাবে –

বাসা-বাড়ির চিলেকোঠা বা ছাদে অথবা ঘরের বারান্দায় অথবা বাড়ির আঙ্গিনায় অল্প পরিশ্রমে মরিচ চাষ করা সম্ভব। এতে চাষে খরচও অনেক কম। সামান্য রোদ আর যত্নে দ্রুত বেড়ে ওঠবে মরিচের গাছ।

স্থান নির্ধারণ ও টব –

  • আপনার বাসা-বাড়ি বারান্দায় বা ছাদে আলো বাতাস এমন একটি স্থান বেছে নিন।
  • মরিচ ছায়ায়ও ভালো হয়, তবে মাঝে মধ্যে রোদে দিতে হবে বা জানালার কাছে রাখতে হবে।
  • বাসা-বাড়ি ছাদে অথবা বারান্দায় মরিচ চাষে মাটি অথবা প্লাস্টিকের টব ব্যবহার করা ভালো।
  • এছাড়া পলিব্যাগ, টিনের কৌটা বা প্লাস্টিকের পাত্র ব্যবহার করে পারেন।
  • মরিচ গাছের জন্য বড় না মাঝারি আকৃতির টব হলেই চলে।

মাটি প্রস্তুত ও বীজ রোপণ –

  • মরিচ চাষের জন্য দোআঁশ মাটি সবচেয়ে উপযুক্ত।
  • এছাড়া সামান্য ক্ষারীয় মাটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • দোআঁশ মাটির সাথে জৈব সার ভালো করে মিশিয়ে টবভর্তি করুন।
  • টবের এই মাটিতে যথেষ্ট পানি দিন, যাতে মাটি ভেজা ভেজা থাকে।
  • এবং লক্ষ্য রাখুন মাটি যেন একেবারে শুকিয়ে না যায়। এবং আর্দ্র স্থানে রাখুন।

মরিচ বীজ বোনার আগে বীজকে অবশ্যই ১০-১২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।

  • সাধারণত মরিচ চাষের উপযুক্ত সময় হলো মে-জুন।
  • এছাড়া শীতকালের শুরুতে অক্টোবর মাসেও মরিচের বীজ বপন করা যায়।
  • এসময় বীজ বপন করলে মরিচের ভালো ফলন পাওয়া যায়।

মরিচ বীজ টবের অথবা উপযুক্ত পাত্রের মাটিতে ছড়িয়ে দিন বা বুনে দিন। কিছুদিন পরে দেখা যাবে বেশকিছু চারা গাছ গজিয়েছে। সেখান থেকে ভালো চারাগুলো রেখে বাকি চারাগুলো তুলে ফেলুন।

পরিচর্যা –

  • প্লাস্টিকের কনটেইনার ব্যবহার করলে অতিরিক্ত পানি বের করে দেয়ার জন্য কয়েকটি ছিদ্র করে নিতে পারেন।
  • মরিচ গাছের গোড়ায় দিনে একবার অবশ্যই পানি দেবেন। এবং সবসময় সঠিক নিয়মে পরিমাণ মতো পানি দিন।
  • পানি দিলে অনেক সময় গাছ হেলে যেতে পারে; তাই গাছের গোড়ায় কোনো কাঠি বেঁধে দিন।
  • গাছে পানি দেয়ার সময় লক্ষ্য রাখুন পাতা যেন ভিজে না যায়। পাতা ভিজে গেলে রোগবালাই হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
  • পানি জমে গাছ মারা যেতে পারে; তাই টবের থেকে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখুন।
  • যখন মরিচের চারা বড় হয় সে সময়ে মাটিকে আর্দ্র রাখাটা খুবই জরুরি।
  • যথেষ্ট আলো বাতাস ও পানির প্রয়োজন হয় মরিচ গাছ বাড়ার জন্য।

এদের ছাদে, বারান্দা অথবা জানালার পাশের রৌদ্রোজ্জ্বল স্থানটিতে রাখুন। খুব বেশি রোদ যেন না লাগে। সকাল অথবা বিকালে মরিচ গাছের যত্ন নিন।

মরিচের কচি চারার ডগা খাবার জন্য সমাগম হয় পিঁপড়ে এবং ছোট ছোট পাখির। এটা তাদের খুবই প্রিয় খাবার।

তাই পিঁপড়া থেকে বাঁচার জন্য টবের চারপাশে কীটনাশক চকের দাগ দিয়ে রাখতে পারেন অথবা পাউডারজাতীয় কীটনাশক দিতে পারেন। এবং পাখির হাত থেকে বাঁচার জন্য শক্ত নেট ব্যবহার করতে পারেন।

এছাড়া পানিতে কয়েক ফোটা তরল সাবান মিশিয়ে মরিচ গাছে স্প্রে করতে পারেন। অথবা পোকা মারা কীটনাশক ব্যবহার করুন।

নাগা বা বোম্বাই মরিচ চাষ পদ্ধতি –

দেশের মানুষের কাছে মরিচের পছন্দের তালিকায় জনপ্রিয় একটি নাম নাগা বা বোম্বাই মরিচ। মূলত সুগন্ধ আর স্বাদের জন্যই নাগা মরিচের এত কদর।

এই মরিচ পৃথিবীর সবচেয়ে ঝাল মরিচ হিসেবে খ্যাত।

অনেকেই সখ করে নাগা মরিচ নিজ ছাদের উপর অথবা বারান্দার টবে চাষ করেন। বর্তমানে অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন এই নাগা বা বোম্বাই মরিচ মরিচের।

প্রায় সব ধরনের মরিচ চাষের প্রক্রিয়া একই ধরনের হয়ে থাকে। তবে…

  • নাগা বা বোম্বাই মরিচ চাষের জন্য যথেষ্ট আলো বাতাস পায় এমন স্থান এবং উর্বর দোআঁশ মাটির প্রয়োজন।
  • মনে রাখতে হবে অম্ল মাটিতে মরিচ চাষ করা সম্ভব নয়।
  • যেকোনো বাজারেই নাগা বা বোম্বাই মরিচের বীজ কিনতে পাওয়া যায়।
  • তবে যারা নতুন তারা চারা কেনে করলেই বেশি ভালো হয়।
  • যে কোন নার্সারিতে নাগা বা বোম্বাই মরিচের চারা পাওয়া যায়।
  • বীজ বা সরাসরি চারা মাটিকে হালকা গর্ত করে সেখানে রোপণ করতে হবে ।
  • চারা গুলিকে রোদ বৃষ্টি থেকে রক্ষা করার জন্য পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
  • চারা লাগানোর ২-৩ দিন সকাল-বিকাল গাছে পানি দিতে হবে।
  • মাটিতে অবশ্যই সঠিক নিয়মে সার প্রয়োগ করতে হবে।
  • নাগা বা বোম্বাই মরিচের ক্ষেত্রে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ উর্বর মাটি উপযোগী।
  • বোম্বাই মরিচ চাষের জন্য উচু জায়গা হলে ভালো হয়।
  • ছায়ামুক্ত ও বৃষ্টির পানি যেন জমে না থাকে এমন জমি মরিচ চাষের জন্য উপযোগী।
  • নাগা বা বোম্বাই মরিচ চাষের জমি উঁচু করে প্লট বানিয়ে এই মরিচের চারা বুনতে হয়।
  •  চারা ৩ ফুট চওড়া করে ২ লাইনে বুনতে হয়।
  • সঠিক পরিচর্যায় দেড় থেকে দুই মাস পর ফুল ধরা শুরু করে।
  • ফুল আসার এক মাসের মধ্যে মরিচ সংগ্রহ করার উপযোগী হয়ে ওঠে।
  • গাছকে পোকার হাত থেকে রক্ষা করতে কীটনাশক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।
মরিচ চাষে  ‘ফ্লিম মালচিং’ পদ্ধতির ব্যবহার –

ফ্লিম মালচিং হলো আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে চাষাবাদ করলে জনবলসহ উৎপাদন খরচ কম লাগার পাশাপাশি অধিক ফসল পাওয়া যায়।

এ ছাড়া…

  • এই পদ্ধতিতে চাষাবাদে সংরক্ষণ হয় প্রাকৃতিক পরিবেশ।
  • জমিতে আগাছা জন্মাতে পারে না। সেই সাথে ফসলে রোগণ্ডবালাই কম হয়, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে জমি।
  • সেচ ও বৃষ্টির অতিরিক্ত পানি জমে ফসল নষ্ট হয় না।
  • সেচের পানি ও সারের অপচয় কম হয়।
  • চাষাবাদে শ্রম কমে যাওয়ায় শ্রমিক কম লাগে, উৎপাদন খরচ কমে যায়।
  • জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পায়।
  • ফলন অনেক বেশি ও গাছের জীবন দীর্ঘ হয়।

এতে কৃষক সব দিক থেকে লাভবান হয়। এই পদ্ধতিতে মরিচের চাষাবাদের ক্ষেত্রে …

  • জমিকে উত্তমরূপে তৈরি করে প্রয়োজনীয় জৈব ও রাসায়নিক সার মিশিয়ে বেড তৈরি করেতে হবে।
  • এছাড়া মালচিং পেপার বিছিয়ে সেখানে নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর ছিদ্র করে চারা রোপণ করা যাবে।
ফসল তোলা ও বীজ সংরক্ষণ –

মরিচ গাছে ফুল আশার ১০ থেকে ১৫ দিন পর মরিচ সংগ্রহ করতে পারেন।  অধিক পরিমাণ ফলন পেতে গাছের ক্ষতি না হাওয়ার জন্য মরিচ টান দিয়ে না ছিড়ে কাঁচি দিয়ে সাবধানে কেটে নিন।

পাকা সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে গাছে মরিচ যখন সম্পূর্ণ পাকে সেই অবস্থায় উঠানো উচিত। পাকা মরিচ কয়েক দিন পরপর সংগ্রহ করা যায়।

বীজ জন্য মরিচ গাছ নির্বাচন করে পরিপক্ক, পুষ্ট এবং উজ্জ্বল লাল রঙের মরিচ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।

পাকা মরিচ কেটে ভেতরের বীজ বের করে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নিয়ে বাতাস ঢুকতে পারে না এমন পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে।

বীজ শুকিয়ে আর্দ্রতা ৬-৮ শতাংশ করে নিয়ে বায়ুরোধী পাত্র বা পলিথিন প্যাকেটে সংরক্ষণ করতে হবে।

সুত্র: লেখাটির বিভিন্ন তথ্য কৃষি তথ্য সার্ভিস ও অনলাইন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

আরো পড়ুন … 

**চাষাবাদ ও কৃষি সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, খবর পড়তে আজই জয়েন করুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )”  হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )” অথবা  টেলিগ্রাম চ্যানেল  ”বীজ ঘর ( কৃষি কথা )’‘ এ। 

মতামত দিন

Item added to cart.
0 items - 0.00
Need Help?