খিরা বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় সবজি। সালাদ, ভাজি বা তরকারি হিসেবে এর জুড়ি নেই। সঠিক পদ্ধতি ও যত্ন নিশ্চিত করতে পারলে খিরার বাম্পার ফলন পাওয়া সম্ভব। আসুন, খিরা চাষের আদ্যোপান্ত জেনে নিই।
জলবায়ু ও মাটি
- তাপমাত্রা: খিরা চাষের জন্য ২৫° থেকে ৩০° ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা সবচেয়ে ভালো। তাপমাত্রা ৫° সেন্টিগ্রেডের নিচে বা ৩৫° সেন্টিগ্রেডের উপরে চলে গেলে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও ফলন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
 - আলো: দীর্ঘ সময় ধরে প্রখর রোদ পেলে পুরুষ ফুলের সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে, যা ফলন কমিয়ে দেয়।
 - মাটি: উর্বর দোআঁশ মাটি খিরা চাষের জন্য সর্বোত্তম। মাটির পিএইচ (pH) বা অম্লমান ৫.৫ থেকে ৬.৮-এর মধ্যে থাকলে সবচেয়ে ভালো ফলন হয়।
 
আবাদের উপযুক্ত সময়: অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত খিরার বীজ বোনার উপযুক্ত সময়।
কৃষি বিষয়ক নিউজলেটার’
AgriNext Weekly হলো বাংলাদেশের প্রথম সমন্বিত কৃষি নিউজলেটার, যেখানে প্রতি বৃহস্পতিবার আপনি পাবেন কৃষি, চাষাবাদ, কৃষি-প্রযুক্তি ও বৈশ্বিক কৃষি-অর্থনীতির সর্বশেষ খবর, বিশ্লেষণ ও দিকনির্দেশনা—এক নজরে, এক ইমেইলে।
চারা তৈরি
সরাসরি মাদায় বীজ বুনে অথবা পলিব্যাগে চারা তৈরি করে খিরা চাষ করা যায়। তবে পলিব্যাগে চারা তৈরি করে রোপণ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
- পলিব্যাগ প্রস্তুতি: ৮ থেকে ১০ সেন্টিমিটার (প্রায় ৩-৪ ইঞ্চি) মাপের পলিব্যাগ নিন। অর্ধেক গোবর ও অর্ধেক মাটি ভালোভাবে মিশিয়ে পলিব্যাগ ভর্তি করুন। ব্যাগ পুরোপুরি ভর্তি না করে ওপরের অংশ ১-২ সেন্টিমিটার খালি রাখুন।
 - বীজ বপন: চারা রোপণের প্রায় ১৭ থেকে ২০ দিন আগে পলিব্যাগে বীজ বুনতে হবে। বোনার আগে ১৫ থেকে ২০ ঘণ্টা পরিষ্কার পানিতে বীজ ভিজিয়ে নিলে খোসা নরম হয় এবং সহজে গজায়। প্রতি ব্যাগে একটি করে বীজ বুনুন।
 - ছাউনি: বীজ বোনার পর পলিব্যাগগুলো সাজিয়ে রাখতে হবে। অতিরিক্ত রোদ বা বৃষ্টি থেকে চারাকে বাঁচাতে বাঁশের চটা দিয়ে দেড় মিটার উঁচু একটি ছাউনি (ছই) তৈরি করে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া ভালো।
 - সেচ ও পরিচর্যা: পলিব্যাগের মাটি শুকিয়ে এলে ঝাঁঝরি দিয়ে হালকা সেচ দিতে হবে। এই সময় ‘রেড পাম্পকিন বিটল’ (কুমড়ার লাল পোকা) চারার কচি পাতা খেয়ে ক্ষতি করতে পারে। এই পোকার আক্রমণ থেকে চারা বাঁচাতে মশারির জাল দিয়ে ঢেকে রাখা সবচেয়ে কার্যকরী একটি উপায়।
 
জমি ও বেড তৈরি
- জমি নির্বাচন: এমন জমি বেছে নিতে হবে যেখানে বৃষ্টি বা সেচের পানি জমে থাকে না।
 - চাষ: জমিকে ৪ থেকে ৫ বার ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে আগাছামুক্ত এবং মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।
 - বেডের মাপ: ১.৫ মিটার (প্রায় ৫ ফুট) চওড়া বেড তৈরি করতে হবে। বেডের উচ্চতা হবে ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার (৬-৮ ইঞ্চি)।
 - নালা: প্রতি দুই বেডের মাঝখানে ৬০ সেমি (প্রায় ২ ফুট) চওড়া ও ১৫ সেমি (৬ ইঞ্চি) গভীর সেচ নালা রাখতে হবে। এছাড়া, পানি নিকাশের জন্য প্রতি দুই বেড পরপর একটি ৩০ সেমি (১ ফুট) চওড়া নিকাশ নালা রাখা জরুরি।
 
বীজের হার ও রোপণ দূরত্ব
- বীজের হার: প্রতি শতক জমির জন্য ২-৩ গ্রাম এবং প্রতি বিঘা (৩৩ শতক) জমির জন্য ৭০-১০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।
 - মাদা তৈরি: বীজ বোনা বা চারা রোপণের ১০ দিন আগে মাদা তৈরি করতে হবে। বেডের ওপর একটি সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব ১.৫ মিটার এবং সারিতে একটি মাদা থেকে অন্য মাদার দূরত্ব ১.৫ মিটার রাখতে হবে। মাদার আকার হবে সবদিকে ৪৫ সেন্টিমিটার (দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-গভীরতা)।
 - বসতবাড়ি: বসতবাড়িতে চাষের জন্য আলাদা বেড তৈরির প্রয়োজন নেই, শুধু উপযুক্ত স্থানে মাদা তৈরি করে সার মিশিয়ে বীজ বুনে দিলেই চলবে।
 
সার প্রয়োগ ব্যবস্থাপনা
সঠিক ফলনের জন্য সুষম সার ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই।
১. জমি ও মাদা তৈরির সময় (প্রতি শতকের জন্য):
| সারের নাম | জমির শেষ চাষে প্রয়োগ | প্রতি মাদায় (রোপণের ৭-১০ দিন আগে) | 
| গোবর/কম্পোস্ট | ৩০ কেজি | (মাদার মাটির সাথে মেশাতে হবে) | 
| টিএসপি | ৩০০ গ্রাম | ১২ গ্রাম | 
| এমওপি (পটাশ) | ২০০ গ্রাম | ২০ গ্রাম | 
| ইউরিয়া | — | ১০ গ্রাম | 
| জিপসাম | ৪০০ গ্রাম | — | 
| দস্তা (জিংক) | ৫০ গ্রাম (আলাদাভাবে) | — | 
| বোরাক্স (সোহাগা) | ৪০ গ্রাম | — | 
| ম্যাগনেশিয়াম | ৫০ গ্রাম | — | 
২. উপরি প্রয়োগ (চারা রোপণের পর, প্রতি শতকের জন্য):
- ১ম কিস্তি (রোপণের ১৫-২০ দিন পর): ইউরিয়া ২০০ গ্রাম, পটাশ ১০০ গ্রাম।
 - ২য় কিস্তি (রোপণের ৩৫-৪০ দিন পর): ইউরিয়া ২৫০ গ্রাম, পটাশ ১৫০ গ্রাম।
 - ৩য় কিস্তি (রোপণের ৫৫-৬০ দিন পর): ইউরিয়া ৩০০ গ্রাম, পটাশ ২০০ গ্রাম।
 
সেচ ও অন্যান্য পরিচর্যা
- সেচ: খিরা গাছ পানির প্রতি বেশ সংবেদনশীল। মাটি শুকিয়ে গেলে গাছ ঢলে পড়ে এবং ফুল ঝরে যেতে পারে। তাই মাটির আর্দ্রতা বুঝে দ্রুত সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
 - নিকাশ: খিরার গোড়ায় পানি জমে থাকা খুবই ক্ষতিকর। কয়েক দিন পানি জমে থাকলে গাছের গোড়া পচে গাছ মারা যেতে পারে। তাই সেচের পাশাপাশি পানি নিকাশেরও সুব্যবস্থা রাখতে হবে।
 - আগাছা দমন: আগাছা ফসলের খাবার ও রস শুষে নেয়। অনেক আগাছা বিভিন্ন রোগের (যেমন: পাউডারি মিলডিউ, মোজাইক) জীবাণুকে আশ্রয় দেয়। তাই খিরার ক্ষেত ও মাদা সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
 - মাচা বা জাংলা: খিরা মাটিতে বা মাচায়—দুইভাবেই চাষ করা যায়। তবে মাচায় চাষ করলে ফলন বেশি হয় এবং ফলের মান ভালো থাকে। গাছ ২০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার (প্রায় ৮-১০ ইঞ্চি) লম্বা হলেই মাচা বা জাংলা তৈরি করে দিতে হবে। মাচা মাটি থেকে ১.৫ মিটার (প্রায় ৫ ফুট) উঁচু হতে হবে। বাঁশের খুঁটি, জিআই তার বা নাইলনের রশি দিয়ে জাংলা তৈরি করা যায়।
 
ফসল সংগ্রহ ও ফলন
জাতভেদে বীজ বোনার প্রায় ৪০ দিন পর থেকেই খিরা সংগ্রহ করা শুরু করা যায়। সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ ও ঠিকমতো যত্ন নিলে হেক্টরপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টন (অর্থাৎ, প্রতি শতকে ৬০ থেকে ৮০ কেজি) পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভব।
খিরার কয়েকটি সাধারণ রোগবালাই ও তার প্রতিকার নিচে দেওয়া হলো:
১. ডাউনি মিলডিউ (Downy Mildew)
এটি খিরার একটি মারাত্মক ছত্রাকজনিত রোগ।
লক্ষণ: প্রথমে বয়স্ক পাতার ওপরের দিকে হলদে বা ফ্যাকাশে দাগ দেখা যায়। পাতার নিচের দিকে তাকালে ধূসর বা বেগুনি রঙের ছত্রাকের স্তর দেখা যায়। আবহাওয়া স্যাঁতস্যাঁতে হলে এই দাগগুলো দ্রুত বাদামি হয়ে শুকিয়ে যায় এবং পাতা মরে যায়।
প্রতিকার:
- পরিচর্যা: আক্রান্ত পাতা ও গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলুন। গাছে যেন বেশি ঘন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন এবং পানি নিকাশের ব্যবস্থা ভালো রাখুন।
 - রাসায়নিক: রোগের আক্রমণ দেখা দিলে ম্যানকোজেব + মেটালেক্সিল গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন: রিডোমিল গোল্ড) বা ম্যানকোজেব + ফেনামিডন গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন: সিকিউর) প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে।
 
২. পাউডারি মিলডিউ (Powdery Mildew)
এই রোগটিও ছত্রাকের আক্রমণে হয় এবং ফলন অনেক কমিয়ে দেয়।
লক্ষণ: পাতার ওপরের দিকে সাদা পাউডারের মতো আস্তরণ পড়ে। মনে হবে কেউ যেন আটা বা পাউডার ছিটিয়ে দিয়েছে। ধীরে ধীরে পুরো পাতা সাদা হয়ে যায়, সালোকসংশ্লেষণ বাধাগ্রস্ত হয় এবং পাতা শুকিয়ে ঝরে পড়ে।
প্রতিকার:
- পরিচর্যা: আক্রান্ত পাতা তুলে ধ্বংস করুন।
 - জৈব: আক্রমণের শুরুতে ১ লিটার পানিতে ৫ মিলি দুধ মিশিয়ে বা পটাশিয়াম বাইকার্বোনেট স্প্রে করে সুফল পাওয়া যায়।
 - রাসায়নিক: সালফার গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন: থিয়োভিট) বা টেবুকোনাজোল + সালফার গ্রুপের ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে পারেন।
 
৩. মোজাইক ভাইরাস (Mosaic Virus)
এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যার কোনো সরাসরি চিকিৎসা নেই। একে দমন নয়, প্রতিরোধ করতে হয়।
লক্ষণ: গাছের পাতা হলুদ ও গাঢ় সবুজের মেশানো ছোপ ছোপ বা মোজাইকের মতো দাগ দেখা দেয়। পাতা কুঁকড়ে যায়, আকারে ছোট হয় এবং গাছ খর্বাকৃতি হয়ে যায়। ফলন মারাত্মকভাবে কমে যায়।
প্রতিকার:
- পরিচর্যা: জমিতে আক্রান্ত গাছ দেখা মাত্র তা তুলে মাটির নিচে পুঁতে ফেলুন বা পুড়িয়ে ফেলুন।
 - বাহক পোকা দমন: এই ভাইরাস ছড়ায় সাদা মাছি ও জাব পোকা। তাই এদের দমনের জন্য ইমিডাক্লোরোপ্রিড গ্রুপের কীটনাশক (যেমন: এডমায়ার) প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
 
৪. নেতিয়ে পড়া রোগ (Wilt Disease)
এটি ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়ার কারণে হতে পারে।
লক্ষণ: গাছ কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে ঢলে পড়তে শুরু করে এবং কয়েক দিনের মধ্যে পুরো গাছটি মরে যায়।
প্রতিকার:
- পরিচর্যা: আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলুন। বীজ বপনের আগে ভিটাভেক্স বা ব্যাভিস্টিন দিয়ে বীজ শোধন করে নিলে এই রোগ কম হয়।
 - জৈব: জমি তৈরির সময় বা মাদা তৈরির সময় ট্রাইকোডারমা কম্পোস্ট ব্যবহার করলে এই রোগের প্রকোপ অনেক কমে যায়।
 
৫. গামি স্টেম ব্লাইট (Gummy Stem Blight)
লক্ষণ: গাছের কাণ্ড ফেটে যায় এবং সেখান থেকে লালচে আঠালো পদার্থ (Gummy) বের হয়। পাতায় পানিভেজা দাগ পড়ে ও পরে শুকিয়ে যায়।
প্রতিকার:
- পরিচর্যা: আক্রান্ত অংশ কেটে ফেলুন।
 - রাসায়নিক: ম্যানকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক বা রিডোমিল গোল্ড স্প্রে করা যেতে পারে।
 
গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ: যেকোনো কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক ব্যবহারের আগে প্যাকেটের গায়ের নির্দেশনা ভালোভাবে পড়ে নিন এবং স্প্রে করার পর নির্দিষ্ট সময় (সাধারণত ৭-১৫ দিন) পর্যন্ত ফসল তোলা থেকে বিরত থাকুন।
খিরার রোগবালাইয়ের মতো ক্ষতিকর পোকাও কৃষকের বড় শত্রু। চলুন, খিরার প্রধান কয়েকটি ক্ষতিকর পোকা ও সেগুলো দমনের উপায় জেনে নিই।
১. মাছি পোকা (Fruit Fly)
এটি খিরার সবচেয়ে মারাত্মক পোকা। এই পোকার আক্রমণে ফসলের একটি বড় অংশ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
ক্ষতির ধরণ: স্ত্রী মাছি পোকা কচি খিরার ভেতরে (চামড়ার ঠিক নিচে) ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে কীড়া বের হয় এবং ফলের ভেতরের নরম অংশ খেতে থাকে। এর ফলে খিরা হলুদ হয়ে যায়, পচে যায়, আকৃতি নষ্ট হয় এবং শেষ পর্যন্ত ঝরে পড়ে। বাইরে থেকে অনেক সময় ছোট একটি ছিদ্র ছাড়া আর কিছুই বোঝা যায় না।
দমন ব্যবস্থাপনা:
- পরিচর্যা: জমিতে পড়ে থাকা বা আক্রান্ত সব খিরা সংগ্রহ করে তা মাটির গভীরে পুঁতে ফেলতে হবে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। এটি সবচেয়ে জরুরি।
 - ফেরোমন ফাঁদ: এটি মাছি পোকা দমনের সবচেয়ে কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব উপায়। প্রতি ১০ শতাংশ জমির জন্য ৩টি “কিউলিওর” (Cuelure) নামের ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে। ফাঁদে সাবান পানি দিয়ে রাখলে আকৃষ্ট হওয়া পুরুষ মাছিগুলো তাতে পড়ে মারা যাবে।
 - বিষটোপ: পাকা মিষ্টি কুমড়া বা খিরার টুকরোর সাথে সামান্য বিষ (যেমন: সাইপারমেথ্রিন) মিশিয়ে সেই টোপ মাটির পাত্রে করে ক্ষেতের বিভিন্ন জায়গায় রেখে মাছি পোকা দমন করা যায়।
 - রাসায়নিক: আক্রমণের মাত্রা খুব বেশি হলে সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক (যেমন: রিপকর্ড বা কট) ১ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে। তবে কচি ফল ধরলে স্প্রে না করাই ভালো।
 
২. লাল পোকা বা পাম্পকিন বিটল (Red Pumpkin Beetle)
চারা অবস্থায় এই পোকা মারাত্মক ক্ষতি করে।
ক্ষতির ধরণ: এই লাল রঙের পোকাগুলো চারা গাছের কচি পাতা ও ডগা খেয়ে ফেলে। এরা পাতায় ফুটো করে এবং পাতার কিনারা থেকে খাওয়া শুরু করে। আক্রমণ তীব্র হলে চারা গাছ পাতাশূন্য হয়ে মরেও যেতে পারে। এরা ফুল ও কচি ফলেও আক্রমণ করে।
দমন ব্যবস্থাপনা:
- পরিচর্যা: ভোরে বা সকালে পোকাগুলো যখন নিস্তেজ থাকে, তখন হাত দিয়ে ধরে মেরে ফেলা যায়।
 - যান্ত্রিক: চারা বের হওয়ার পর থেকে ২০-২৫ দিন পর্যন্ত মশারির জাল দিয়ে চারা ঢেকে রাখলে এই পোকার আক্রমণ থেকে গাছকে বাঁচানো যায়।
 - প্রাকৃতিক: গাছের গোড়ায় ও পাতায় শুকনা ছাই ছিটিয়ে দিলে এই পোকা কিছুটা কমে।
 - রাসায়নিক: আক্রমণ খুব বেশি হলে ফেনিট্রোথিয়ন (যেমন: সুমিথিয়ন) বা সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক অনুমোদিত মাত্রায় স্প্রে করতে হবে।
 
৩. জাব পোকা (Aphids) ও সাদা মাছি (Whitefly)
এই পোকাগুলো সরাসরি ক্ষতির চেয়ে ভাইরাস রোগ ছড়িয়ে বেশি সর্বনাশ করে।
ক্ষতির ধরণ: এই ক্ষুদ্র পোকাগুলো পাতার নিচের দিকে বসে রস চুষে খায়, ফলে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। পাতা কুঁকড়ে যেতে পারে। কিন্তু এদের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হলো এরা ‘মোজাইক ভাইরাস’ রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে। এক গাছ থেকে অন্য গাছে রস খাওয়ার সময় এরা ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়।
দমন ব্যবস্থাপনা:
- প্রাকৃতিক: আক্রমণের শুরুতে সাবান গোলা পানি (প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম ডিটারজেন্ট পাউডার) স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এছাড়া হলুদ রঙের আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করে সাদা মাছি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
 - জৈব: নিম বীজের নির্যাস (নিমবিসিডিন) স্প্রে করা যেতে পারে।
 - রাসায়নিক: আক্রমণ বেশি হলে ইমিডাক্লোরোপ্রিড গ্রুপের কীটনাশক (যেমন: এডমায়ার বা টিডো) প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
 
বিশেষ সতর্কতা: যেকোনো রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারের সময় অবশ্যই ব্যক্তিগত সুরক্ষা (মাস্ক, গ্লাভস) ব্যবহার করবেন এবং স্প্রে করার পর নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ফসল তোলা থেকে বিরত থাকবেন।
আরও পড়ুন-
- যেভাবে শীতকালীন শসা চাষ করবেন
 - মরিচ ও টমেটো চাষে রোগ ও পোকা দমনের জন্য পূর্ণাঙ্গ স্প্রে গাইড
 - যেভাবে উন্নত পদ্ধতিতে মরিচ চাষ করবেন
 - সঠিক টমেটো চাষ পদ্ধতি ( রোগ বালাই ও প্রতিকার )
 - তীব্র শীতে সবজি চাষ, করণীয় ও স্প্রে সিডিউল
 
Discover more from বীজ ঘর ডটকম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.