কৃষি কথা

জেনে নিন সঠিক বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি

সঠিক বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি

বাঙ্গি চাষ করে স্বাবলম্বী চাষিরা। সঠিক চাষাবাদ অনুসরণের ফলে চৈত্রের মৌসুমী ফল বাঙ্গির চাষে কৃষকদের চোখমুখে এখন হাসির ঝিলিক।

পাশপাশি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন এই ফল চাষিরা। তাই আজ আমরা সহজ ও সঠিক বাঙ্গির চাষাবাদ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব এই নিবন্ধে।

যেভাবে বাঙ্গি চাষ কররেন

দেশের প্রায় সব অঞ্চল বাঙ্গির চাষাবাদ করা সম্ভব। তবে এই ফলের চাষের জন্য শুষ্ক ও উষ্ণ জলবায়ু সবচেয়ে উত্তম।

উর্বর বেলে দোআঁশ ও পলি মাটিতে বাঙ্গি চাষ ভালো হয়। শিলাবৃষ্টি ও অতিবৃষ্টি এই ফল চাষের জন্য উপযোগী নয়, তাই বর্ষাকালে বাঙ্গির চাষ না করাই ভালো।

জমি তৈরি ও বীজ বা চারা বপন

চারা বপনের জন্য বাঙ্গি চাষের জমি ৩-৪ চাষ ও মই দিয়ে মাটি সমান করে ভালো ভাবে তৈরি করে নিতে হবে। এছাড়া…

  • বাঙ্গির জাত ভেদে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারীতে বীজ বোনতে হবে।

    উচ্চফলনশীল বাঙ্গি বীজ (হাইব্রিড)

    উচ্চফলনশীল বাঙ্গি বীজ (হাইব্রিড)

  • প্রায় ৫ ফুট থেকে ৬.৬৭ ফুট দূরে দূরে ১.৩৩ ফুট চওড়া ও গভীর মাদা তৈরি করতে হবে।
  • প্রতি মাদায় ৪-৫ টি বীজ বুনে চারা গজানোর পরে ২-৩ টি রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হয়।
  • মাদায় সরাসরি বীজ বপন না করে পলিব্যাগে ও চারা তৈরি করে বপন করা যায়।

সার ব্যবস্থাপনা

সাধারণত বাঙ্গির চাষাবাদে সার প্রয়োগের তেমন প্রয়োজন হয় না। তবে বেশি ফলনের জন্য কিছু কিছু সর দিতে পারেন। যেমন-

  • প্রতি শতাংশে গোবর সার ৪০ কেজি,
  • ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া,
  • ৩০০ গ্রাম টিএসপি,
  • পটাশ ২০০ গ্রাম।

বাঙ্গি চাষের জমি তৈরির সময় অর্ধেক সার প্রয়োগ করতে হবে। আর বাকি অর্ধেক সার দিতে হবে মাদায়। মাদায় প্রয়োগের ক্ষেত্রে অর্ধেক জৈব সার ও পুরো টিএসপি সার মাদায় প্রয়োগ করতে হবে।

চারা বড় হলে ইউরিয়া সার ও পটাশ সার মাদার আশেপাশের মাটিতে (ভালো ভাবে মিশিয়ে) প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবার সার প্রয়োগের পর প্রয়োজন মত সেচ দিতে হবে (মাটিতে রসের ঘাটতি দেখা যায়)।

সেচ ও পরিচর্যা

বাঙ্গি গাছ তাপ ও ক্ষরা সহ্য করতে পারে। তবে…

  • ভালো ফলনের জন্য জমিতে প্রয়োজন মত সেচ দিতে হবে।
  • তবে লক্ষ্য রাখতে হবে ক্ষেতে পানি যেন জমে না থাকে।
  • ক্ষেতে পানি জমে থাকলে গোড়া পচা রোগ দেখা দিতে পারে।
  •  এছাড়া ফলনকে পচন থেকে বাঁচাতে ক্ষেতে ফলের নিচে খড় বিছিয়ে দিতে হবে।
  • অতিরিক্ত ফল ধরে প্রতি গাছে ৪-৫ ফল ছাড়া বাকী গুলো নিয়ে ফেলতে হবে।
  • বাঙ্গি ক্ষেত সব সময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
  • এই ফল গাছের লতা যতটা ম্ভব পাতলা রাখতে হবে

পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন

বাঙ্গিতে ক্ষেতে সবচেয়ে বেশি হয় হোয়াইট মোল্ড রোগ। এছাড়া ও বাঙ্গি ক্ষেতে কাঠাল পোকা , থ্রিপস পোকা, ব্লাক রট রোগ ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

হোয়াইট মোল্ড রোগ: বাঙ্গিতে ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়। এতে বাঙ্গির গায়ে সাদা তুলার মতো ছোপ ছোপ দাগ হয়। এতে আক্রান্ত হলে ফলটি পচে যায়।

এই ছত্রাকের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য …

  • প্লাবন সেচের পরিবর্তে স্প্রিংলার সেচ দিতে হবে।
  • দ্রুত আক্রান্ত ফল সরিয়ে ফেলতে হবে।
  • ফল যাতে মাটির সংস্পর্শ না আসে তার জন্য, ফলের নিচে খড় বা পলিথিন বিছিয়ে দিতে হবে।

এছাড়া প্রপিকোনাজল গ্রুপের ছত্রাক নাশক ব্যবহার করতে হবে। এটি  ১০ দিন পর্যন্ত অন্তর অন্তর ৩ বার বিকালে ক্ষেতে স্প্রে করতে হবে।

কাঁঠাল পোকা: এই পোকা বাঙ্গি গাছের পাতা খেয়ে ঝাঁজরা করে ফেলে।

এই পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য …

  • বাঙ্গি ক্ষেত পরিষ্কার রাখতে হবে।
  • গাছে পরিমাণ মতো ছাই ছিটাতে হবে।
  • পাতা থেকে এ পোকা খুঁজে নিয়ে মেরে ফেলতে হবে।
  • এর জন্য প্রয়োজনীয় ছত্রাক নাশক স্প্রে করতে হবে।

থ্রিপস পোকা: এই পোকা কচি পাতা ও ডগার রস শুষে খেয়ে বাঙ্গি গাছকে দুর্বল করে ফেলে। ফুল ও কচি ফলে আক্রমণের কারণে ফলে দাগ হয়; ফল পচতে শুরু করে।

এই পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য …

  • বাঙ্গি ক্ষেতে তামাক ও সাবানের গুঁড়োর সঙ্গে নিমের পাতার নির্যাস স্প্রে করতে পারেন।
  • সুষম সার ব্যবহার করতে হবে।

ব্ল্যাক রট রোগ: আক্রান্ত পাতায় হালকা বাদামি থেকে ধূসর ছাই রঙের দাগ দেখা যায়। ধীরে ধীরে এ দাগ বড় হয়। পাতার শিরায় যখন এ রোগ আক্রমণ করে তখন ইংরেজি ‘ভি’ আকৃতি ধারণ করে।

এর আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য …

  • আক্রান্ত গাছের অংশ সংগ্রহ করে নষ্ট করতে হবে।
  • রিডোমিল গোল্ড মিশিয়ে স্প্রে করলে এ রোগ আক্রমণের আর সম্ভাবনা থাকে না।

লিফ কার্ল রোগ: ভাইরাসজনিত এই রোগ সাদা মাছি আক্রমণে ছড়ায়।

  • আক্রান্ত বাঙ্গি গাছ খর্বাকৃতি হয়; অতিরিক্ত শাখা-প্রশাখা বের হয়।
  • পাতার গায়ে ঢেউয়ের মতো ভাঁজের সৃষ্টি হয় ও কুঁচকে যায়।
  • ফুল-ফল হওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে গাছ।
  • এর জন্য প্রয়োজনীয় ছত্রাক নাশক স্প্রে করতে হবে।
ফলন ও ফসল সংগ্রহ

বাঙ্গি গাছের আয়ুষ্কাল খুবই কম। ফল আসার ৪৫-৬০ দিন পর্যন্ত জমি থেকে এই ফল সংগ্রহ করা যায়।

বাঙ্গির রং হলুদ বর্ণ ধারণ করলে, বা ফল ফেটে যাওয়া শুরু হলে বা কোন জাতের বোটা বিচ্ছিন্ন হলে বুঝে নিতে হবে যে ফললন সংগ্রহের সময় হয়েছে।

তখন ফলন সংগ্রহ শুরু করতে হবে। প্রতি শতাংশে জমিতে জাত অনুযায়ী  ৮০ থেকে ১০০ কেজি বাঙ্গি ফলন হয়ে থাকে।

 

–লেখাটির বিভিন্ন তথ্য কৃষি তথ্য সার্ভিস ও অনলাইন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।  বগ্লে প্রকাশিত কোনও তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।

আরো পড়ুন … 

**চাষাবাদ ও কৃষি সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, খবর পড়তে আজই জয়েন করুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )”  হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )” অথবা  টেলিগ্রাম চ্যানেল  ”বীজ ঘর ( কৃষি কথা )’‘ এ। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *