জবা ফুল চাষ করে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে চাষিরা। বাঙালির অতি পরিচত এই ফুল রোপণের উত্তম সময় ভাদ্র-অশ্বিন।
সঠিক পরিচর্যা ও যত্ন নিলে গোলাপ ফুল কেও হার মানায় জবা ফুল। আমরা এই নিবন্ধে সহজ সঠিক জবা ফুলের চাষ পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
সহজ ও সঠিক জবা ফুল চাষ পদ্ধতি
সব ধরনের মাটিতে জবা ফুল চাষ করা গেলেও সুনিষ্কাশি বেলে-দোঁয়াশ মাটি এই ফুলের জন্য বেশি উপযুক্ত। তবে সার মিশিয়ে বাগান বা টবের মাটি তৈরি করলে ফুলের গুনগত মান অনেক ভালো হয়।
স্থান নির্বাচন ও মাটি প্রস্তুত
জবা ফুলের চারা রোপনের জন্য আলো বাতাসপূর্ণ স্থান নির্বাচন করতে হবে। এতে গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পাবে,
পাশপাশি রোগবালাইয়ের আক্রান্ত কম হয়।
মাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জবা ফুলের চাষের জন্য। গাছ কেমন হবে তা অনেকটাই নির্ভর করে মাটির উপার।
তাই মাটি তৈরী করতে ৫০ ভাগ উর্বর দোআঁশ মাটি সাথে ৪০ ভাগ গোবর সার বা পাতা পচা সার / ভার্মিকম্পোস্ট মিশিয়ে দিতে হবে।
একেই সাথে ১০ ভাগ নদীর সাদা বালি, ৫০ গ্রাম হাড় গুঁড়ো, ৫০ গ্রাম সিং কুচি ও হাফ চামচ সরিষার খোল মাটির সাথে ভালো ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
বর্ষাকালে জবা গাছ প্রতিস্থাপন করলে এক চামচ ফাঙ্গিসাইড মাটির সাথে মিশিয়ে নেবেন।
চারা রোপন পদ্ধতি
মাটি তৈরির পর জবা ফুলের চারা বসানোর জন্য জমিতে প্রতি সারিতে ৩-৪ মিটার অন্তর অন্তর দেড় ফুট ঘন গভীর গর্ত করে নিতে হবে।
- এরপরে চারা সোজাভাবে গর্তে লাগিয়ে শেকড় সম্পূর্ণ মাটি দিয়ে ভালোভাবে ঢেকে দিতে হবে।
- তারপর গাছের গোড়ার মাটি ভালোভাবে চেপে দিয়ে প্রয়োজন মতো পানি দিতে হবে।
- জমির পাশাপাশি টবেও জবা ফুলের চারা রোপন করা যায়।
- এই ফুলের চারা টবে রোপনের জন্য কম করে ১০ ইঞ্চি বা তার বড় মাটির টব বা ড্রাম ব্যবহার করতে পারেন।
- টবে নতুন চারা না লাগিয়ে এক বছরের পুরোনো ( ১২ ইঞ্চি অথবা আরো বড় ) চারা লাগাতে পারেন।
- টবে নিচের কয়েক সেমি পরিমাণ অংশে ইট বা মাটির হাড়ি পাতিলের ভাংগা টুকরা এমনভাবে বিছিয়ে দিতে হয় যাতে টবের মাটি এগুলোর উপর থাকে। এতে বাড়তি পানি নিষ্কাশনে সুবিধা হবে।
- চারা রোপনের পরে প্রথমদিকে ঘন ঘন পানি দিতে হবে।
- তারপর খরা মৌসুমে প্রতি ৭-৮ দিন পর পর পানি দিতে হবে।
- তবে অতিরিক্ত পানি জমলে তা বের করে দিতে হবে।
- জবা গাছের কাটিং থেকে চারা করার সময় মার্চ থেকে অক্টবর পর্যন্ত।
জবা গাছে সার প্রয়োগ ও পরিচর্যা
জবা গাছে শীত মৌসুমে মাটি খুঁড়ে সার প্রয়োগ করতে হয়। এছাড়া প্রতি বছর বর্ষার পর পর টবের শোঁকড় কাটাই ছাঁটাই এবং মাটি পরিবর্তন করতে হবে।
জবা ফুলের চারা লাগানোর ২-৩ দিন পরে জমিতে বা টবে হালকা সেচ দিতে হবে।
পরবর্তীতে ১৫-২০ দিন পর পর সেচ দিতে হবে।
তবে ক্ষেতে বৃষ্টির অথবা সেচের কারণে অতিরিক্ত পানি জমলে তা বের করে দিতে হবে।
- এছাড়া ভালো ফলনের জন্য নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
- পুরনো গাছের কচি ডগা, মরা ডাল পাতা ইত্যাদি ফাল্গুন-চৈত্র ও ভাদ্র-আশ্বিন মাসে ছেটে দিতে হবে।
- এত গাছের কাঠামো ভালো থাকবে।
- গাছে ফুল আসার সময়ে প্রতি লিটার পানির সাথে ২৫ মিলিলিটার ল্যানোফিক্স মিশিয়ে প্রতিদিন স্প্রে করতে পারেন।
রোগবালাই দমন
পাতা হলুদ হয়ে যাওয়া জবা গাছের উল্লেখযোগ্য রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম।
পাতা হলুদে হয়ে যাওয়া ও কুঁকড়ে যাওয়া এক ধরণের ক্ষুদ্র পোকা থেকে হয় যা সাধারণত পাতার নিচে থাকে। জবা ডালের ডগায় ছোট ছোট জাল তৈরি করে।
এদের আক্রমণ হলে পাতা হলদে হয়ে যায় ও কুঁকড়ে যায়। শুধুমাত্র ঠান্ডা পানি জোরে সেপ্র করেও এই পোকা দমন করা যায়।
এটি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেলে কেলথেন-৪২, থিওভিট-৮০, ইথিওন-৪৬.৫ ইসি প্রভৃতি কীটনাশক পাতার উল্টো পিঠে স্প্রে করতে হবে।
গ্রীষ্মকালে অত্যন্ত তাপে অনেক সময় পাতা শুকিয়েও যায়। এছাড়া পাতায় মাঝে মাঝে সাদা দাগ দেখা যায়।
ওই সমস্যা দেখা দিলে সাবান দিয়ে পাতা ধুয়ে দেওয়া উচিত।
তবে গাছের গোড়ায় যাতে সাবান জল যাতে না পৌঁছায় তাতে খেয়াল রাখতে হবে।
এ পোকা পাতার নিচের পিঠে থেকে পাতার রস চুষে খায় বলে গাছ নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
–বগ্লে প্রকাশিত কোনও তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
আরো পড়ুন …
- সহজ বেলি ফুল চাষ পদ্ধতি জেনে নিন
- আধুনিক পদ্ধতিতে গোলাপ ফুল চাষ
- সহজ ও সঠিক গাঁদা ফুল চাষ পদ্ধতি
- জেনে নিন সঠিক অ্যালোভেরা চাষ পদ্ধতি
- সহজ ডাটা শাক চাষ পদ্ধতি
- সহজে আনারস চাষ করবেন যেভাবে
**চাষাবাদ ও কৃষি সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, খবর পড়তে আজই জয়েন করুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )” হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )” অথবা টেলিগ্রাম চ্যানেল ”বীজ ঘর ( কৃষি কথা )’‘ এ।