অ্যালোভেরা চাষ তুলনামূলক বেশ সহজ, খরচও অনেক কম। ইদানীং অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী অধিক গুরুত্ব পেয়েছে অধিক রূপচর্চায়; তবে প্রচীনকালে এই উদ্ভিদ শুধু ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হত।
অ্যালোভেরা পরিচিত উদ্ভিদ হলেও এর চাষ সম্পর্কে চাষিরা তেমন অভিজ্ঞ নয়। তাই এর চাষাবাদ তেমন হয় না; তবে একেবারেই যে চাষ হয় না তা নয়।
আজ আমরা এই নিবন্ধে আধুনিক অ্যালোভেরা চাষ পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ঘৃতকুমারীর বা অ্যালোভেরা চাষ পদ্ধতি
সব ধরণের মাটিতে অ্যালোভেরার চাষাবাদ করা গেলেও সুনিষ্কাশিত দোঁ-আশ ও অল্প বালু মিশ্রিত জমিতে অ্যালোভেরা গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়। তবে লবণাক্ত ও অম্লীয় মাটি এর চাষের তেমন ভালো নয়।
- যেসব জমিতে পানি জমে না এমন উঁচু জমি অ্যালোভেরা চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে।
- নিচু ও পানি জমা জমিতে গাছ পচে যায়।
- অ্যালোভেরা চাষের জন্য প্রয়োজন সারাদিন রোদ; ছায়া স্থানে গাছের বৃদ্ধি তেমন ভালো হয় না।
জমি তৈরি ও বপন সময়
সারা বছর অ্যালোভেরার চাষ করা সম্ভব। সাধারণত আশ্বিন-কার্তিকে (অক্টোবর-নভেম্বর) চারা লাগানো উপযুক্ত সময়। তবে আষাঢ়ের (মে- জুন) শুরুতে এই উদ্ভিদের গাছ লাগালে তা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী চাষাবাদের জমি প্রথমে ভালোভাবে পরিষ্কার করে চাষ ও মই দিতে হবে।
- এরপর চাষের সময় গোবর সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
- অনেকে ছাই ব্যবহার করেন।
- তবে বিঘাপ্রতি ২৫-৩০ কেজি টিএসপি এবং ১০ কেজি এমওপি সার জমি প্রস্তুতের সময় ব্যবহার করতে হবে।
- এবার জমিতে চারা বপনের জন্য বেড তৈরি করতে হবে।
- বেড ১.৫ থেকে ২.২৫ মিটার চওড়া হবে।
- প্রতি দুই বেডের মাঝে ৪০-৫০ সেন্টিমিটার নালা রাখতে হবে।
- এছাড়া সারি থেকে সারির দূরত্ব সাত ইঞ্চি।
- প্রতি সারিতে ছয় ইঞ্চি পর পর চারা লাগানো হয়।
চারা বপন পদ্ধতি
অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী চাষে ৩ ধরণের চারা বপন করা যায় (রুট সাকার বা মোথা,গাছের গোড়া থেকে গজানো চারা ও গাছের গোড়ার অংশ কেটে ফেলে পুরো গাছ)।
- তবে বাণিজ্যিকভাবে রুট সাকার বপন লাভজনক নয় বিধায় এটি লাগানো হয় না।
- পুরনো গাছের গোড়া থেকে গজানো চারা মাতৃগাছ থেকে আলাদা করে প্রথমে জমিতে বা বেডে লাগানো হয়।
- সেখানে এসব চারা ৬০-৭০ দিন যত্ন নিয়ে বড় করার পর মূল জমি বপন করা হয় (এতে চারার প্রতিষ্ঠা ভালো হয়)।
- তবে এরূপ চারা লাগিয়ে পাতা তোলার জন্য কমপক্ষে ছয় মাস অপেক্ষা করতে হবে।
- তাই বাণিজ্যিক চাষাবাদের জন্য মোথা কেটে বাদ দিয়ে সরাসরি পুরনো গাছ লাগাতে বেশি পছন্দ করে চাষিরা (এতে দ্রুত পাতা তোলা যায়)।
সার-সেচ ও পরিচর্যা
অ্যালোভেরা চাষে সাধারণত কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না। খৈল বা নিম খৈলের মতো জৈব সার ব্যবহার করলে হয়ে যায়।
- তবে জমি তৈরির সময় জৈব সার ব্যবহার করে অ্যালোভেরা চাষ করতে পারেন।
- এছাড়া নিয়মিত সেচেরও দরকার হয় না।
- আর শুষ্ক মৌসুমে সেচ দিলে গাছের গোড়ায় যাতে পানি না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
- ইউরিয়া সার দিতে চাইলে একবার ব্যবহারই যথেষ্ট।
- সার ছিটানোর পর আগাছা নিড়িয়ে মাটির সঙ্গে সার মিশিয়ে দিতে হয়।
- এছাড়া মাঝেমধ্যে জমির আগাছা নিড়িয়ে দিতে হবে।
- অতিরিক্ত ইউরিয়া সার দিলে রোগের আক্রমণ ও প্রকোপ বেড়ে যায়।
পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন
অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী গাছ রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ তেমন হয় না। তবে গোড়া পচা রোগ ও জাব পোকার আক্রমণ দেখা যেতে পারে।
- গোড়া পচা রোগ হলে গাছের গোড়া পচে গিয়েঅ্যালোভেরা গাছ মারা যায়।
- যদি গাছের গোড়ায় পানি না জমে তাহলে গোড়া পচা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
- আর পোকার জন্য কীটনাশক ওষুধ স্প্রে করতে হবে।
এছাড়া পাতায় দাগ পড়া রোগ শীতকালে কম থাকে। কিন্তু শীত শেষে ফাল্গুন মাসে এ রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। ব্যাকটেরিয়া জনিত এ রোগ ছত্রাকনাশক প্রয়োগে তেমন ফল পাওয়া যায় না।
টবে অ্যালোভেরা চাষ
যারা নিয়মিত অ্যালোভেরা ব্যবহার করেন, তারা চাইলে এই উদ্ভিদ টবে চাষ করতে পারেন। জেনে নিন টবে অ্যালোভেরা চাষ পদ্ধতি…
- টবে অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী চাষের জন্য পাতা সংগ্রহ করতে হবে।
- তবে লক্ষ্য রাখতে হবে পাতার সাথে নিচের দিকের সাদা অংশটি যেন থাকে।
- এবার অ্যালোভেরার পাতা সাধারণ মাটির মাঝে গর্ত করে বসিয়ে দিন।
- এরপর মাটি পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিন।
- শেকড় গজাতে শুরু করলে টবে লাগাতে হবে।
- অন্য আরেকটি উপায়ে অ্যালোভেরার পাতা থেকে গাছ গজাবে।
- অ্যালোভেরার পাতা মাঝখান থেকে কেটে নিন ধারালো ছুরির সাহায্যে।
- দুই সপ্তাহ উষ্ণ স্থানে রেখে দিন পাতা।
- বাদামি রঙ হয়ে আসলে টবে লাগান।
- তবে নিচে যেন ছিদ্র থাকে সেদিকে লক্ষ রাখবেন।
- ঝরঝরে মাটি দিয়ে দিন টবে।
- মাটির মাঝে অ্যালোভেরার পাতা গুঁজে পানি দিয়ে দিন।
- এমন জায়গায় রাখবেন যেখানে সরাসরি রোদ পড়ে।
- প্রয়োজন মত পানি দিতে হবে।
- অ্যালোভেরা গাছ ২৫-৩০ দিনের মধ্যেই বাড়তে শুরু করবে।
- টবের অ্যালোভেরা গাছ দ্রুত বৃদ্ধির জন্য প্রাকৃতিক সার ব্যবহার করতে পারেন।
- সার তৈরির জন্য ৪ -৫টি ডিমের খোসা চূর্ণ করে নিন।
- মুঠোভর্তি আলুর খোসা, কয়েকটি কলার খোসা ও ডিমের খোসা দেড় লিটার পানিতে ভিজিয়ে রাখুন (পাত্র ঢেকে রাখবেন)। ৪
- ৪-৫ দিন পর ফেনা উঠে গেলে মিশ্রণটি ছেঁকে পানি আলাদা করুন।
- অ্যালোভেরা গাছে প্রতি ১৫ দিন পর পর এই পানি দিন (দেখবেন গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে)।
ফলন ও ফসল সংগ্রহ
অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর চারা বপনের ৭০-৮০ দিন পর পাতা সংগ্রহ করা যায়। বছরে ৯ থেকে ১০ মাস পাতা সংগ্রহ করা যায়।
তবে শীতকালে পাতা সংগ্রহ বন্ধ থাকে। একটি অ্যালোভেরা গাছে থেকে ৬০- ৭০ টি পাতা সংগ্রহ করা যায়।
–লেখাটির বিভিন্ন তথ্য কৃষি তথ্য সার্ভিস ও অনলাইন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। বগ্লে প্রকাশিত কোনও তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
আরো পড়ুন …
- সহজ ডাটা শাক চাষ পদ্ধতি
- সহজে আনারস চাষ করবেন যেভাবে
- পান চাষ, জেনে নিন চাষাবাদ পদ্ধতি ও পরিচর্যা
- জেনে নিন সঠিক বাঙ্গি চাষ পদ্ধতি
- সঠিক ও সহজ করলা বা তিত করলা চাষ পদ্ধতি
- আধুনিক কাঁকরোল চাষ পদ্ধতি
**চাষাবাদ ও কৃষি সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, খবর পড়তে আজই জয়েন করুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )” হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )” অথবা টেলিগ্রাম চ্যানেল ”বীজ ঘর ( কৃষি কথা )’‘ এ।