আদা চাষ পতিত জমি কিংবা গাছের ছায়ায যুক্ত স্থান বা টবে ও ছাদে অল্প খরচে ঝামেলা বিহীন ভাবে করা যায়।
আমাদের দেশে মসলা জাতীয় এই ফসলের উৎপাদন চাহিদার তুলনায় খুবই অল্প।
তবে ইদানিং বাণিজ্যিকভাবে আদার চাষাবাদ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আজ আমরা এই নিবন্ধে সঠিক আদা চাষ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব।
আদা চাষ পদ্ধতি
উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু পূর্ণ আবহাওয়া আদার চাষাবাদের জন্য উপযুক্ত। তবে সুনিষ্কাশিত উঁচু বেলে-দো-আঁশ ও বেলে মাটি আদা চাষের জন্য উত্তম। এছাড়া …
- ফাল্গুন-বৈশাখ মাসে আদা চাষে জন্য উপযুক্ত সময় (জৈষ্ঠ্য মাস পর্যন্ত বপন করা যাবে)।
- সারিতে ৫০ সেমি এবং কন্দ থেকে কন্দ ২৫ সেমি দূরত্বে বপন করতে হবে।
- ভালো ফলনের জন্য আদার জমিতে প্রচুর পরিমাণ জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে।
- এছাড়া শেষ চাষের আগে একর প্রতি ৪০ : ৬০ : ৫০ অনুপাত হারে নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম প্রয়োগ করতে পরেন।
- একরে ২৫০ কেজি সরিষা খোল প্রয়োগ করতে পারলে আদার ফলন আরও ভাল হয়।
- সাধারণত ১২-১৫ গ্রাম ওজনের ১-২টি কুঁড়ি বিশিষ্ট কন্দ বপন করা হয়।
- কন্দ লাগানো পর ভেলী করে দিতে হয়।
- প্রতি হেক্টরে ১০০০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।
বর্তমানে আদার অনুমোদিত কোন জাত নেই। তবে স্থানীয় জাত খুলনা, রংপুরী, টেংগুরা জাতের চাষাবাদ হচ্ছে।
রোগ ব্যবস্থাপনা ও পরিচর্যা
পিথিয়াম এফানিডারমেটাম নামক ছত্রাকের আক্রমণের কারনে এ রোগ হয়। এ রোগ রাইজমে আক্রমণ করে বলে আদা বড় হতে পারে না ও গাছ দ্রুত মরে যায়।
এ রোগ বেশী দেখা যায় ভেজা ও স্যাঁত স্যাঁতে আবহাওয়ায় (বর্ষাকাল বা জলাবদ্ধতায়)।
এই ছত্রাকের আক্রমণ থেকে আদাকে বাঁচাতে অর্ধপচা মুরগীর বিষ্ঠা প্রতি হেক্টরে ১০ টন হারে আদা লাগানোর ২১ দিন পূর্বে মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া অনুমোদিত ছত্রাক নাশক মাটি হালকা কুপিয়ে মাটিতে স্প্রে করতে হবে।
আদার গাছ বেড় হতে কমপক্ষে ৪ -৫ সপ্তাহ সময় লাগে । আদা বপনের ৫ -৬ সপ্তাহ পর জমির আগাছা ভালোভাবে নিড়িয়ে নিতে হবে।
আদা বপনের পর বৃষ্টি হলে সেচ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
তবে বৃষ্টি না হলে ও মাটিতে রসের অভাব হলে সেচ দিতে হবে এবং ২-৩ ঘন্টা পর নালার অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে হবে।
টবে বা বস্তায় আদা চাষ
বাংলাদেশে সম্প্রতি বাণিজ্যিকভাবে বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষ শুরু হয়েছে। এ পদ্ধতিতে ফলন ভালো হচ্ছে বলে আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা।
বস্তায় আদা চাষের জন্য আদার কন্দ রোপনের ১৫ দিন আগে মাটি ও সার প্রস্তুত করতে হবে। এছাড়া ……
- বস্তা হিসেবে সিমেন্টের বস্তা সহজলভ্য ও সাইজেও উপযুক্ত।
- তবে সিমেন্টের বস্তার চেয়ে মোটা প্লাস্টিকের বস্তা (ক্যামিকেলের বস্তা,চালের বস্তা) বেশি উপযোগী হবে।
- প্রতি বস্তার জন্য ঝুর ঝুরে পরিস্কার মাটি ১৫ কেজি, পঁচা গোবর ও ছাই ৫-৭ কেজি, টিএসপি ২০ গ্রাম, এমওপি (পটাশ) ১০ গ্রাম, জিংক ৫ গ্রাম, বোরন ৫ গ্রাম, দানাদার কীটনাশক ১০ গ্রাম একত্রে মিশিয়ে নিয়ে মাটি ঢেকে রাখতে হবে।
- বস্তায় সার মিশ্রিত মাটি এমন ভাবে ভর্তি করতে হবে যাতে বস্তার উপরের অংশ ২ ইঞ্চি ফাঁকা থাকে।
- মাটি তৈরি হয়ে গেলে বস্তায় রোপনের জন্যে ৪০-৫০ গ্রাম সাইজেট আদার কন্দ প্রয়োজন।
- বস্তায় একটি কন্দ ৪-৫ ইঞ্চি গভীরতায় রোপন করতে হবে।
- বস্তায় আদা চাষে তমন কোন আগাছা হয় না। যদি আগাছা দেখা যায় তাহলে হাত দিয়ে নিড়ানি দিয়ে গোড়া পরিস্কার রাখতে হবে
- বৃষ্টি না হলে হালকা ছিটানো পানি দিতে হবে।
- চারা লাগানোর দুই মাস পরে পরিমান মতো সরিষার খোল, ইউরিয়া টিএসপি, এমওপি সার মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে।
- প্রতিটি বস্তায় ৩-৪ ঝোপ আদা (বহু শাখা যুক্ত আদা) রোপণ করা যায় , যা থেকে ৮-১৮ টি বা আরও বেশি আদা গাছ হতে পারে।
- গাছ গুলো বস্তার চার দিকে ছড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় আবার বস্তায় মাটিও থাকে পর্যাপ্ত ।
বস্তায় চাষ করলে অতিবৃষ্টি বা বন্যায় ফসল ডুবে নষ্ট হওয়ার ভয় নেই। একবার ফসল তোলার পর সেখানে আলাদা করে কোনো সার ছাড়াই আরেকটি ফসল ফলানো যায়। ফলে খরচ একেবারেই কম।
আদা সংগ্রহ ও ফলন
বপনের ৭-৮ মাস পরেই ( জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারী মাসে) আদা তোলা যায় । গাছের পাতা হলুদ রঙের হলে ও গাছের ডাঁটা শুকোতে শুরু করলে আদা সংগ্রহ শুরু করতে হবে।
উপযুক্ত পরিচর্যায় প্রতি বস্তায় ১-৩ কেজি পর্যন্ত আদা পাওয়া যায়।
অনেক সময় প্রথম বছর আদা না তুলে দ্বিতীয় বছরে তোলা হয়। এতে ফসল বৃদ্ধি হয় বলে জানিয়েছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।
–লেখাটির বিভিন্ন তথ্য কৃষি তথ্য সার্ভিস ও অনলাইন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। বগ্লে প্রকাশিত কোনও তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
আরো পড়ুন …
- সঠিক হলুদ চাষ পদ্ধতি
- আধুনিক বারোমাসি সজিনা চাষ পদ্ধতি
- সাম্মাম বা রকমেলন চাষ পদ্ধতি
- সঠিক শালগম চাষ পদ্ধতি
- জেনে নিন আধুনিক ক্যাপসিকাম চাষ পদ্ধতি
- আধুনিক স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি
**চাষাবাদ ও কৃষি সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, খবর পড়তে আজই জয়েন করুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )” হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )” অথবা টেলিগ্রাম চ্যানেল ”বীজ ঘর ( কৃষি কথা )’‘ এ।