দেশের প্রায় সব স্থানে পালং শাক চাষ করা যায়। সাধারনত উর্বর দোআঁশ মাটি পালং শাক চাষাবাদের জন্য বেশ উপযোগী; তাছাড়া এঁটেল, বেলে-দোআঁশ মাটিতেও ভালো হয়।
আমরা এই নিবন্ধে পালং শাক চাষের সঠিক ও সহজ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব।
পালং শাক চাষ পদ্ধতি
সাধারনত পালং শাক চাষের জন্য দো-আঁশ এবং এঁটেল মাটি উৎকৃষ্ট । এছাড়া, এটেল বা বেলে দোআশ মাটিও এটির চাষাবাদ করার উপযোগী।
ভাদ্র-আশ্বিন (আগস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি) মাসের মধ্যে পালং শাকের বীজ বপন করা হয়। বীজ বোনার পর অঙ্কুরোদগম হতে প্রায় ৭-৮ দিন সময় লাগবে।
জমি তৈরি ও বীজ বপনঃ
পালং শাক চাষ করার আগে জমি চাষ ও মই দিয়ে ভালোভাবে মাটি ঝুরঝুরা করে নিতে হবে। তারপর জমিতে বীজ বোনতে করতে হবে। বীজ ছিটিয়ে বপন করা যায় আবার মাদা তৈরি করে মাদায় ও বপন করা যায়।
- পালং শাকের বীজ ছিটিয়ে ও সারিতে রোপণ করা যায়।
- তবে সারিতে বপন করা সুবিধাজনক।
- এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব ২০ সে.মি. রাখতে হবে।
- একটি কাঠির সাহায্যে ১.৫-২.০ সে.মি. গভীর লাইন টেনে সারিতে বীজ বোনার পর মাটি সমান করে দিতে হবে।
মাদায় বীজ বোনলে গর্ত তৈরি করতে হবে। তারপর ২-৩ টি করে বীজ বোনতে হবে। সাধারনত ১০ সেমি দূরে দূরে বীজ বোনা উত্তম।
সার প্রয়োগ ( প্রতি শতকে)
পালং শাক চাষে গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে জমিতে যতটুকু সম্ভব জৈব সার প্রয়োগ করা উৎকৃষ্ট । এতে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ উভয়ই ভালো থাকবে।
- গোবর সার দিতে হবে ৪০ কেজি।
- ইউরিয়া দিতে হবে ১ কেজি।
- টিএসপি দিতে হবে ৫০০ গ্রাম।
- এমওপি দিতে হবে ৫০০ গ্রাম
ইউরিয়া সার ছাড়া বাকি সব সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। জমি তৈরির প্রথম দিকে জমিতে গোবর সার প্রয়োগ করা ভালো।
চারা গজানোর ৮-১০ দিন পর থেকে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ কিস্তিতে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগ করার পর মাটির সাথে ভালো ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে জল সেচ দিতে হবে।
সেচ ও পরিচর্যা
- পালং শাক চাষের জমিতে রস কম থাকলে অবশ্যই সেচ দিতে হবে।
- মাটির জো অবস্থা বুঝে জমিতে সেচ দিতে হবে।
- জমিতে পানি যাতে না জমে সেজন্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
- প্রয়োজন হলে চারা রোপন করার পর হালকা সেচ দিয়ে দেওয়া ভালো।
- নিড়ানির সাহায্যে জমির ঘাস সময়মত বাছাই করতে হবে।
- বীজ বপনের ১৫-২০ দিন পর গাছ উঠিয়ে পাতলা করে দিতে হবে। এবং মাঝে মাঝে মাটি ঝুরঝুরে করে দিতে হবে। গাছের বৃদ্ধি দ্রুত ও ফলন ভালো হওয়ার জন্য মাটি আলগা করে দেওয়া ভালো।
আগাছা দমন
পালং শাক চাষের জমিতে যেন আগাছা না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আগাছা গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেয় ও পুষ্টি শোষণ করে থাকে। তাই আগাছা জন্মালে তা সাথে সাথে পরিষ্কার করে দিতে হবে।
রোগ ও পোকা দমন ব্যবস্থাপনা
- পালংশাক চাষে সাধারনত গোড়া পচা রোগ, পাতায় রোগ, পাতার ধ্বসা রোগ ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। প্রয়োজন অনুসারে জৈব বা রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
রোগ দেখা দিলে আক্রান্ত ডাল পাতা তুলে ফেলে দিতে হবে। - বীজ সংগ্রহ করার সময় রোগ মুক্ত এলাকা থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
- পালং শাকে মাঝে মাঝে পিপড়া, উরচুঙ্গা , উইপোকা ইত্যাদি পোকা আক্রমন করে থাকে। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বালাইনাশক ব্যবহার করতে হবে।
টবে পালং শাক চাষ
ভিটামিন সমৃদ্ধ শীতকালীন সবজি পালং শাক জমির পাশাপাশি ছাদ বাগানে বা টবে চাষ করা যায়।
ছাদ বাগান বা টবে পালং শাক চাষের কলাকৌশল
- ছাদে প্লাস্টিকের বড় গামলা, টব বা অর্ধ ড্রামে পালং শাকের চাষ করা যায়।
- বীজ বপনের আগে প্রতিটি ড্রাম বা টবের মধ্যে দোঁ-আশ মাটি ১০-১২কেজি, পচা আবর্জনা সার ৫কেজি, পচা গোবর ৫ কেজি, ছাই ৫ কেজি, টিএসপি ও এমপি যথাক্রমে ১০০ ও ১২০গ্রাম এবং ১০০-১১০গ্রাম পরিমাণ সরিষার খৈল মেশাতে হবে।
- সার ও মাটি মেশানেরা আগে লক্ষ্য রাখতে হবে, এগুলো মাঝারি ধরনের শুকনো আছে কি-না।
- যদি ভেজা থাকে তাহলে রোদে কিছুটা শুকিয়ে নেয়া উচিত।
- অতঃপর ড্রাম বা টব সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে ভরাট করতে হবে। তারপর বীজ বোনতে হবে।
- বীজ বোনার পর হালকা পানি দেয়া প্রয়োজন।
- সকাল-বিকাল দিনে দু’বার পানি দিতে হবে।
- টবে যেন অতিরিক্ত পানি জমে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত।
- চারা গজানোর পর গোড়ায় কোনো আগাছা জন্মালে তা তুলে দিতে হবে।
- চারা গজানোর ১৫-২০দিন পর থেকে ঘন জায়গার চারা তুলে পাতলা করে দিতে হয়।
- গামলা, ড্রাম বা টব প্রতি ১০-১৫গ্রাম ইউরিয়া সার ১৫, ২৫ ও ৩৫দিন পরপর প্রয়োগ করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ
বীজ বোনার বীজ বপনের ৩০ থেকে ৪০ দিন পর পালংশাক সংগ্রহ করা যায়। এটি গাছে ফুল না আসা পর্যন্ত যে কোনো সময় সংগ্রহ করা যায়। প্রতি বিঘা জমি থেকে প্রায় ২.৫ টন পালং শাক পাওয়া সম্ভব।
সুত্র: লেখাটির বিভিন্ন তথ্য কৃষি তথ্য সার্ভিস ও অনলাইন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
আরো পড়ুন …
- সহজ লালশাক চাষ পদ্ধতি জেনে নিন
- যেভাবে সঠিক পদ্ধতিতে ধনিয়া চাষ করবেন
- আধুনিক বেগুন চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা
- বরবটি চাষ পদ্ধতি ( বারোমাসই চাষ করুন )
- অধিক ফলন পেতে যেভাবে মিষ্টি কুমড়া চাষ করবেন
- কোন মাসে কী ধরনের শাক-সবজি ও ফল চাষ করবেন
**চাষাবাদ ও কৃষি সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, খবর পড়তে আজই জয়েন করুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )” হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )” অথবা টেলিগ্রাম চ্যানেল ”বীজ ঘর ( কৃষি কথা )’‘ এ।