দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর লালশাক চাষ হয়। একই জমিতে বার বার লালশাকের চাষ করা যায়, সার কিংবা কীটনাশকের তেমন প্রয়োজন হয় না।
তাই উৎপাদন খরচ নেই বললেই চলে। আর সে কারণেই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লাল শাকের চাষ ও বাজারজাত লাভজনক ব্যবসা।
আপনিও ইচ্ছে করলে বেকারত্ব দূর করতে লাল শাক চাষ করে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। আজ আমরা এই নিবন্ধে লাল শাক চাষের সহজ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব।
লালশাক চাষ পদ্ধতি
জমিতে বীজ বোনার মাত্র ২০-২১ দিনের মধ্যেই লালশাক সংগ্রহ করা যায়। উপযুক্ত সুবিধা থাকলে বাংলাদেশে প্রায় সব ধরণের মাটিতে সারাবছরই লালশাক চাষ করা সম্ভব।
তবে বেলে দোঁ-আশ বা এঁটেল দোঁ-আশ মাটিতে এবং শীতের শুরুতে ( ভাদ্র-পৌষ ) লাল শাকের ফলন বেশি পাওয়া যায়।
এছাড়া,পানি জমে না এমন উচু জমি লাল শাকের চাষাবাদের বেশ উপযোগী।
জাত
আলতা পেটি ২০, রক্ত লাল, বারি লালশাক ১, ললিতা, রক্তরাঙ্গা, পিংকি কুইন, রক্তজবা ও স্থানীয় জাত। দেশে ‘বারি লালশাক-১’ জাতের শাক চাষ ১৯৯৬ সালে অনুমোদন করা হয়।
এ শাকের পাতার বোটা ও কাণ্ড নরম ও উজ্জ্বল লাল রঙের হয়।
- প্রতি গাছে ১৫ থেকে ২০টি পাতা থাকে।
- গাছের উচ্চতা ২৫-৩৫ সেন্টিমিটার এবং ওজন ১০-১৫ গ্রাম হয়ে থাকে।
জমি তৈরি ও বীজবপন পদ্ধতি
লালশাক চাষাবাদের জমি ও মাটির অবস্থা বুঝে ৪-৬টি চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে।
লালশাকের বীজ ছিটিয়ে ও সারিতে বপন করা যায়। ১ ভাগ বীজের সাথে ৯ ভাগ শুকনা ছাই মিশিয়ে হালকা ভাবে ছিটিয়ে লাল শাকের বীজ বুনতে হয়।
তবে সারিতে বীজ বপন করা সুবিধাজনক।
- এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব ২০ সেন্টিমিটার রাখতে হবে।
- একটি কাঠি দিয়ে ১৫-২০ সেন্টিমিটার গভীর লাইন টেনে সারিতে বীজ বোনার পর তা মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
বীজের পরিমাণ ( হেক্টর প্রতি )
- সারিতে ১০০ গ্রাম ১-১.৫ কেজি
- ছিটিয়ে ১৫০ গ্রাম ২-২.৫ কেজি
উন্নত পদ্ধতিতে লালশাক চাষ করলে প্রতিবিঘা জমি থেকে প্রায় ৫শ’ কেজি লালশাক পাওয়া যায়।
সার প্রয়োগ
লালশাক চাষে ভালো ফলন পেতে হলে মাটির ধরন অনুযায়ী জমিতে যতটুকু সম্ভব গোবর সার প্রয়োগ করা ভাল। এছাড়া বেশি ফলনের জন্য জমিতে আবর্জনা পচা সার ব্যবহার করতে পারেন।
সারের পরিমাণ ( হেক্টর প্রতি)
- গোবর ৪০ কেজি ১০ টন
- ইউরিয়া ৫০০ গ্রাম ১২৫ কেজি
- টিএসপি ৩০০ গ্রাম ৭৫ কেজি
- এমওপি ৪০০ গ্রাম ১০০ কেজি
গোবর, টিএসপি, এমওপি ও জিপসাম সম্পূর্ণ জমি তৈরি করার সময় প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া ইউরিয়া সার অর্ধেক প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া দুই কিস্তিতে বীজ বপন করার ১০-১৮ দিন পর পর প্রয়োগ করতে হবে।
পরিচর্যা
- লাল শাক গজানোর এক সপ্তাহ পর ঘন জায়গা থেকে চারা তুলে পাতলা করে দিতে হবে।
- এছাড়া নিড়ানি দিয়ে জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে এবংমাটি আলগা করে দিতে হবে।
- ৪-৫ দিন পর পর সেচ দিতে পারলে ভাল।
- জমির উপরের মাটিতে চটা হলে নিড়ানি দেওয়ার সময় তা ভেঙে দিতে হবে।
টবে লাল শাক চাষ পদ্ধতি
আমাদের দেশে ভিটামিন সমৃদ্ধ লালশাক খুব জনপ্রিয় ‘শাক’। জনপ্রিয় এই ‘শাক’ খুব সহজেই ছাদ বাগানে চাষ করা যায়।
চাষ পদ্ধতি
যেভাবে খুব সহজেই ছাদ বাগানে লালশাকের চাষাবাদ করবেন…
- দেশে সব ধরণের মাটিতেই লাল শাক চাষ করা যায় ।
- অপেক্ষাকৃত কম গভীরতার পাত্র লালশাক চাষাবাদের জন্য উপযোগি।
- পাত্র যত বড় হবে তত বেশি লাল শাক চাষ করা যাবে। সেজন্য দৈর্ঘ্য এবং প্রস্তে একটু বড় পাত্র/বক্স লাল শাকের জন্য নির্বাচন করতে হবে।
- ছাদের উপরে অনেকেই বেড তৈরি করে। এইসব বেডেও লালশাকের চাষ খুব ভালো হয়।
- টব/বক্স/ড্রা্ম যা কিছুতেই লাল শাক চাষ করা হোক না কেন এর নিচের দিকে ৩/৪ টি ছিদ্র করে নিতে হবে যাতে অতিরিক্ত পানি জমে না থাকে।
- ছিদ্রগুলো্র উপর ইটের ছোট ছোট টুকরা দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে ।
- এখন ২ ভাগ দোআঁশ কিংবা বেলে- দোআঁশ মাটি এবং ১ ভাগ গোবর একত্রে মিশিয়ে ড্রাম বা টব ভরে পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে ৭-৮ দিন ।
- সাত-আট দিন পর পূণরায় মাটি খুচিয়ে দিতে হবে।
- মাটি যখন খুব ঝুরঝুরে হবে তখন লাল শাকের শাকের বীজ বপন করতে হবে ।
- ছাদ বাগানের জন্য বীজ একটু ঘন করে বুনলে ভাল হয়। আস্তে আস্তে বড় হওয়ার সাথে সাথে ২০-২১ দিন পর থেকে অল্প অল্প করে শাক তুলতে হবে এবং ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে পুরো শাক তুলে খেয়ে ফেলতে হবে।
- পুরো শাক উঠানোর পর পুনরায় বীজ বপন করে দেয়া যাবে।
- এভাবে পর পর বছরে ৮-১০ বার পর্যন্ত লাল শাক চাষ করা সম্ভব ।
রোগ ও পোকা দমন ব্যবস্থাপনা
লালশাকের ক্ষেতে প্রায় দুটি মারাত্মক রোগ ( শুয়া পোকা ও মরিচা রোগ) দেখা যায়।
শুয়া পোকা:
এ পোকা লাল শাক গাছের পাতা খেয়ে সমুহ ক্ষতি করে থাকে।
এই পোকা থেকে মুক্তি পেতে ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি, রক্সিয়ন ৪০ ইসি, ইকালাক্স ২৫ ইসি ঔষধগুলোর যেকোন একটি ১.১ লিটার পানিতে মিশিয়ে এক হে: জমিতে স্প্রে করতে হবে।
মরিচা রোগ:
এ রোগ লালশাক গাছের শিকড় ছাড়া সকল অংশকেই আক্রমণ করে। সাদা অথবা হলুদ দাগ পাতার নিচে দেখতে পাওয়া যায়। পরে সেগুলো লালচে বা মরিচা রং ধারন করে এবং পাতা মরে যায়।
এই রোগ থেকে লালশাককে বাঁচাতে প্রতি লিটার পানিতে ১.৫ গ্রাম ডাইথেন এম – ৪৫ ঔষধ মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
বাজার সম্ভাবনা
সুস্বাদু ও পুষ্টিকর লালশাক ছোট-বড় সবার খুব পছন্দ ।
যেহেতু এই শাকের ব্যাপক চাহিদা আছে, উৎপাদন খরচ নেই বললেই চলে।
আর সে কারণেই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লাল শাকের চাষ ও বাজারজাত করে বাড়তি আয় করা সম্ভব।
এছাড়া লালশাক রপ্তানি করার জন্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
ফসল সংগ্রহ
লালশাক বীজ বপনের ২১ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে শাক খাওয়ার উপযুক্ত হয় ( তবে করে ধীরে ধীরে শাক সংগ্রহ করা ভালো)।
সুত্র: লেখাটির বিভিন্ন তথ্য কৃষি তথ্য সার্ভিস ও অনলাইন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
আরো পড়ুন …
- যেভাবে সঠিক পদ্ধতিতে ধনিয়া চাষ করবেন
- আধুনিক বেগুন চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা
- বরবটি চাষ পদ্ধতি ( বারোমাসই চাষ করুন )
- অধিক ফলন পেতে যেভাবে মিষ্টি কুমড়া চাষ করবেন
- লাউ চাষের সহজ পদ্ধতি ও পরিচর্যার সঠিক নিয়ম
- কোন মাসে কী ধরনের শাক-সবজি ও ফল চাষ করবেন
**চাষাবাদ ও কৃষি সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, খবর পড়তে আজই জয়েন করুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )” হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )” অথবা টেলিগ্রাম চ্যানেল ”বীজ ঘর ( কৃষি কথা )’‘ এ।