কৃষি কথা

একসাথে বেগুন ও শসার চাষের পদ্ধতি

বেডে ৩ টা লাইন করতে হবে। ১ম ও ২য় লাইনে বেগুন এবং ২য় লাইনে শসা। এবং মাঝে মাচা তৈরি করে দিতে হবে শসার জন্য। দুই বেডের মাঝে নালা থাকবে সেচ দেবার জন্য। মডেলটি উপরের ছবিতে দেওয়া হলো।

বাজারে বেগুন ও শসা; এই দুই সবজির চাহিদা সব সময় বেশি থাকে। বেগুন ও শসার চাষ একটি লাভজনক কৃষি। তাই, জমিতে বেড তৈরি করে প্রয়োজনে একসাথে দুই ফসল চাষ করে লাভবান হতে পারে কৃষক।

বেগুন ও শসার অন্তরবর্তী চাষ পদ্ধতি

  • বেগুনের জাত:  হাইব্রিড বেগুন গ্রীন বল( সবুজ রং), প্রীতম(সবুজ), ললিতা(বেগুনি রং), শিলা(বেগুনি রং)।
  • শসার জাত: হাইব্রিড শসা, এই জাতগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী সারা বছরই চাষ করা যায়।

মাটি ও জলবায়ু

পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটিই এর চাষের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট। বেগুনের জন্য দীর্ঘ লম্বা সময়ব্যাপী নিম্ন তাপমাত্রা (১৫-২৫° সে.) সবচেয়ে উপযোগী।

  • বীজের হার : বীজের পরিমাণ ২০০-২৫০ গ্রাম/হেক্টর(বেগুন); প্রতি শতকে ২-৩ গ্রাম(শসা)।
  • বীজ শোধন : বীজতলায় বপনের পূর্বে বেগুনের বীজকে রাসায়নিক ঔষধ (প্রতি কেজি বীজে ২-৩ গ্রাম প্রোভেক্স-২০০ বা ভিটাফ্লো) ব্যবহার করে ভালোভাবে ঝাকিয়ে বীজ শোধন করা।

বীজ শোধনের ফলে বেগুনের এ্যানথ্রাকনোজ, লিফম্পট, ব্লাইট ইত্যাদি রোগ ও বপন পরবর্তী সংক্রামণ রোধ সম্ভব হয়।

বীজতলা তৈরি ও পরিচর্যা

  • দোআঁশ মাটি, বালি ও পচা গোবর সার বা কম্পোস্ট মিশিয়ে বীজতলার মাটি তৈরি করতে হয়।
  • বীজতলা সাধারণত এক মিটার চওড়া ও তিন মিটার লম্বা হবে। জমির অবস্থা ভেদে দৈর্ঘ্য বাড়ানো কমানো যেতে পারে।
  • বীজতলায় সারিতে বীজ বপন করা উত্তম। সারিতে বপনের জন্য ৫ সেমি দূরত্বে ক্ষুদ্র নালা/সারি তৈরি করে তাতে বীজ ফেলে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।চারা গজানোর পর থেকে ১০-১২ দিন পর্যন্ত হালকা ছায়া দ্বারা ঢেকে দেওয়া।
  • বীজতলায় বীজ বপনের সময় : সেপ্টেম্বর-অক্টোবর (শীতকালে), মার্চ (গ্রীষ্মকালে)।
  • বীজতলা থেকে চারা অত্যন্ত যত্ন সহকারে তুলতে হবে যেন চারার শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এ জন্য চারা তোলার আগে বীজতলার মাটি ভিজিয়ে নিতে হবে। চারা রোপণ করার পর গোড়ায় হালকা সেচ প্রদান করতে হবে।

জমি তৈরি : ৪-৫টি চাষ দিয়ে এমন ভাবে জমি তৈরি করতে হয় যাতে জমিতে মাটির ঢেলা না থাকে। বেডে চারা রোপণই উত্তম।

বেগুনের জন্য সার ব্যবস্থাপনা

সারের নাম: (মোট সারের পরিমাণ কেজিতে ১০ শতাংশের জন্য):-

  • পচা গোবর বা জৈব সার-৩০০ কেজি
  • ইউরিয়া-৯ কেজি
  • টি এস পি-৯ কেজি
  • এম ও পি-১০ কেজি
  • জিপসাম-৬ কেজি
  • জিংক সালফেট-৫০০ গ্রাম
  • বোরিক এসিড বা বোরন সার-৩০০ গ্রাম

শেষ চাষের সময়

  • জৈব সার/ পঁচা গোবর-৩০০কেজি
  • টিএস পি -৯ কেজি
  • এম ও পি -৬ কেজি
  • জিপসাম -৪ কেজি
  • জিংক সালফেট -৫০০ গ্রাম
  • বোরিক এসিড বা
  • বোরন সার-৩০০ গ্রাম

প্রয়োগ পদ্ধতি: 

  • ১ম কিস্তি চারা লাগানোর ১০ দিন পরে, ইউরিয়া-৩কেজি, এম ও পি -২ কেজি।
  • ২য় কিস্তি চারা লাগানোর ২৫ দিন পরে, ইউরিয়া-৩ কেজি, জিপসাম-১ কেজি।
  • ৩য় কিস্তি চারা লাগানোর ৪০ দিন পরে, ইউরিয়া -৩ কেজি, এম ও পি-২ কেজি জিপসাম-১ কেজি।

শেষ চাষের সময় অর্ধেক গোবর বা কম্পোস্ট, টিএসপি এবং সবটুকু জিপসাম ও বোরিক এসিড সার জমিতে সমানভাবে ছিটিয়ে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।

শসার সার ব্যাবস্থাপনা ( ১০ শতাংশের জন্য):

সারের নাম- পরিমাণ(গর্ত/ মাদা প্রতি):-

  • পঁচা গোবর / জৈব সার-২০ কেজি
  • টি এস পি-১৭০ গ্রাম
  • এম ও পি-৪৬ গ্রাম
  • জিপসাম-৪০গ্রাম
  • দস্তা/ জিংক -৩ গ্রাম

প্রয়োগ পদ্ধতি: 

  • ১ম কিস্তি চারা রোপনের ২০ দিন পরে, ৪০ গ্রাম- ইউরিয়া
  • ২য় কিস্তি চারা রোপনের ৪০ দিন পরে,ইউরিয়া -৪০ গ্রাম]
  • চারা লাগানোর ৬০ দিন পরে,ইউরিয়া -৪০ গ্রাম

চারা লাগানার ৭দিন পূর্বে গর্তে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।

বেড তৈরি: সার প্রয়োগ এর পর জমিতে বেড তৈরি করে নিতে হবে। বেডের প্রশ্বস্ততা হবে ১.৫ মিটার এবং ৩০ সেন্টিমিটার উঁচু। সেচের জন্য দুই বেডের মাঝে ৭৫ সেমি (২ ফুট) পরিমাণ নালা তৈরি করতে হবে।

চারা রোপণ: চারার বয়স ৩০-৩৫ দিন হলে বীজতলা থেকে উঠিয়ে মূল জমিতে রোপণ করতে হবে। এক মিটার চওড়া বেড়ে দুই সারি করে চারা লাগাতে হবে।

এক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সেমি এবং সারিতে চারা থেকে চারার দূরত্ব হবে ৪০ সেমি।

শসার ক্ষেত্রে চারা থেকে চারা ১২০ সে.মি. বীজতলা থেকে চারা অত্যন্ত যত্ন সহকারে তুলতে হবে যেন চারার শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। বিকেলের পড়ন্ত রোদে চারা রোপণ

পরিচর্যা
  • খুঁটি দেওয়া ও পার্শ্ব কুশি ছাঁটাই করা : গাছে বাঁশের খুঁটি দিয়ে ঠেকনা দিতে হবে। গাছে ১ম ফুলের ঠিক নিচের কুশিটি ছাড়া সব পার্শ্ব কুশি ছাঁটাই করতে হবে।
  • আগাছা ব্যবস্থাপনা : জমিকে প্রয়োজনীয় নিড়ানী দিয়ে আগাছামুক্ত রাখতে হবে। প্রয়োজনীয় নিড়ানী দিলে মাটিত শিকড়ের বৃদ্ধি ভাল হয়।
  • সেচ :চারা রোপণের ৩-৪ দিন পর পর্যন্ত হালকা সেচ ও পরবর্তীতে প্রতি কিস্তি সার প্রয়োগের পর জমিতে সেচ দিতে হয়। গ্রীষ্ম ও শীত মৌসুমে চাষের জন্য ঘন ঘন সেচের প্রয়োজন হয়। বর্ষা মৌসুমে তেমন একটা সেচের প্রয়োজন হয় না। বেগুন গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। বেডের দুপাশের নালা দিয়ে জমিতে সেচ দেয়া সুবিধাজনক। খরিফ মৌসুমে জমিতে পানি যাতে না জমে সেজন্য পানি নিষ্কাশনের জন্য জমির চারপাশে নালা রাখতে হবে
শেষ কথা 

শসা গাছের ফলন মূলত নির্ভর করে আবহাওয়ার উপর। কারণ, প্রচন্ড রোদের তাপের সঙ্গে মাঝে মাঝে বৃষ্টি শসা চাষের পক্ষে উপকারী। মাচার শসা চাষে মূলত দু’মাস সময় থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *