জেনে নিন চিচিঙ্গা চাষের সহজ পদ্ধতি

গ্রীষ্মকালীন সবজি চিচিঙ্গা উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় ভালো জন্মে। বীজের অঙ্কুরোদগম ও গাছের বৃদ্ধির জন্য উচ্চ তাপমাত্রা প্রয়োজন।

যেমন, দিনের বেলায় ২৫-২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং রাতের বেলায় ১৮-২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস।

বাংলাদেশে শীতের কয়েক মাস বাদ দিলে; বছরের যেকোন সময় চিচিঙ্গার চাষবাদ যায়। মোটামুটি শুষ্ক আবহাওয়ায়ও ভালো জন্মে চিচিঙ্গা।

এবার জেনে নেওয়া যাক চিচিঙ্গা চাষের আধুনিক পদ্ধতি।

চিচিঙ্গা চাষের পদ্ধতি এবং রোগ ও প্রতিকার

দো-আশঁ ও বেলে দো-আশঁ মাটি চিচিঙ্গা চাষের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট হলেও, জৈব সার সমৃদ্ধ সব রকম মাটিতে চিচিঙ্গার চাষ করা যায়।

চিচিঙ্গা চাষবাদের জন্য যেমন অধিক পানির প্রয়োজন হয়। তবে এটি আবার জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না।

অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে এর পরাগায়ন বিঘ্নিত হতে পারে।

বীজ বপনের সময় ও জীবন কাল

জাত ও আবহাওয়া ভেদে চিচিঙ্গার জীবনকাল পাঁচ-ছয় মাস (কমবেশী হতে পারে)।

বাংলাদেশে চিচিঙ্গা প্রধানত খরিফ মৌসুমেই হয়ে থাকে। ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে জুন পর্যন্ত চিচিঙ্গার বীজ বপন করা যায়।

তবে শীতকালে চাষ করলে গাছের বৃদ্ধি ও ফলন একটু কম হয়।

চিচিঙ্গা চাষের জন্য হেক্টর প্রতি ৪-৫ কেজি (১৬-২০ গ্রাম/শতাংশ) বীজের প্রয়োজন হয়।

জমি তৈরি ও বীজ বোনার পদ্ধতি

চিচিংগা বীজ
মুনজেরিন ১ চিচিংগা বীজ কিনুন

প্রয়োজন অনুযায়ী ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে, জমি এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে কোন ঢিলা বা আগাছা না থাকে।

চিচিঙ্গা গাছের শিকড়ের যথাযথ বৃদ্ধির জন্য উত্তমরুপে মাদা তৈরি করতে হবে। এছাড়া এমন জমি নির্বাচন করতে হবে সেচ ও পানি নিষ্কাশনের সুবিধা থাকে এবং পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পায়।

জমি বড় হলে নির্দিষ্ট দূরত্বে নালা কেটে লম্বায় কয়েক ভাগে ভাগ কর নিতে হয়।

  • বেডের প্রস্থ হবে ১.০ মিটার এবং দু-বেডের মাঝে ৩০ সেমি নালা থাকবে।
  • চিচিঙ্গার বীজ সরাসরি মাদায় বোনা যেতে পারে।
  • এক্ষেত্রে প্রতি মাদায় কমপক্ষে ২টি বীজ বপন করতে হবে।
  • তাছাড়া পলিব্যাগে (১০x১২ সেমি) ১৫-২০ দিন বয়সের চারা উৎপাদন করে নিলে বীজ নষ্ট কমহয়।
  • চিচিঙ্গার জন্য ১.৫ মিটার দূরত্বে মাদা তৈরি করতে হবে।
  • চারা গজানোর পর একের অধিক গাছ তুলে ফেলতে  হবে।
  • বপনের আগে বীজ ২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে নিলে বীজ তাড়াতাড়ি অঙ্কুরিত হয়।

মাদায় বীজ বুনতে বা চারা রোপণ করতে হলে অন্তত ১০ দিন আগে মাদায় নির্ধারিত সার প্রয়োগ করে তৈরি করে নিতে হবে। মাদার আয়তন হবে ৪০x৪০x৪০ সেমি।

সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি

চিচিঙ্গার জমিতে নিম্নোক্ত হারে সার (শতাংশ প্রতি) প্রয়োগ করা যেতে পারে।

  • ৮০ কেজি গোবর।
  • ৭০০ গ্রাম টিএসপি।
  • ৬০০ গ্রাম এমওপি।
  • ৪০০ গ্রাম জিপসাম।
  • ৫০ গ্রাম দস্তাসার।
  • ৪০ গ্রাম বোরাক্স এবং ৫০ গ্রাম ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে।

চিচিঙ্গা চাষাবাদের জমি তৈরির সময় অর্ধেক গোবর মিশিয়ে চাষ দিতে হবে। বাকি অর্ধেক সার বীজ বোনা বা চারা লাগানোর ১০ দিন আগে মাদার মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে।

প্রত্যেকবার সার প্রয়োগের পর জমিতে পানি সেচ দিতে হবে। এরপর মাটিতে ´জো´ এলে চটা ভেঙে দিতে হবে।

মাচা তৈরি বা বাউনি দেওয়া

বাউনী দেয়া চিচিঙ্গার চাষের প্রধান পরিচর্যা। মাচায় চাষ করলে চিচিঙ্গার ফলন বেশী ও ফলের গুনগত মানও অনেক ভালো হয়।

  • চারা ২০-২৫ সেমি উঁচু হতেই ১.০-১.৫ মিটার উঁচু মাচা তৈরি করতে হবে।

জেনে নিন চিচিঙ্গার রোগ-বালাই দমন পদ্ধতি

‘ফলের মাছি পোকা’ চিচিঙ্গার সবচেয়ে বড় বালাই গুলো অন্যতম ।  এই পোকা চিচিঙ্গার কচি ফলের গায়ে ছিদ্রকরে ডিম পাড়ে। এর ফলে আক্রান্ত ফল নষ্ট ও বিকৃত হয়ে যায়।

ফলের মাছি পোকা কচি আক্রান্ত ফুল ও ফল তুলে ধ্বংস করে দিতে হবে। হাত দিয়ে ধরে টিপে মেরে ফেলা এই পোকা দমনের সহজ পদ্ধতি।

এছাড়াও আরও কিছু পোকা চিচিঙ্গা গাছ কে আক্রমণ করে। তার মধ্যে…

পাতা সুড়ঙ্গকারী পোকা

কাঁটালে পোকা ও ইপিলাকনা বিটল চিচিঙ্গার পাতা জালের মতো ঝাঁঝরা করে খেয়ে ফেলে। এর ফলে পুরো পাতাই আঁকাবাঁকা দাগের মত দেখায় এবং পরিশেষে পাতাটি মারা যায়।

এদের দূরীকরণে হাত দিয়ে টিপে মেরে ফেলতে হবে।

অথবা ৫ মিলিলিটার নিমতেলের সাথে ৫ মিলিলিটার ট্রিকস বা তরল সাবান ১ লিটার পানিতে গুলে স্প্রে করে দিতে হবে।

পাতা কোকড়ানো রোগ

এ রোগ হলে পাতা কুঁকড়ে যায় এবং পাতা ছোট হয়ে যায়। পাতা হলদে হয়ে যায়, বয়স্ক পাতা শক্ত ও মচমচে হয় এবং গাছ খাটো হয়ে যায়।

বাহক পোকার মাধ্যমে চিচিঙ্গার পাতা কোকড়ানো রোগ হয়।

তাই বাহক পোকা দমন-ই ভাইরাস ঠেকানোর একমাত্র উপায়।

বাহক পোকা দমনে ব্যবহার করুন টোপাম্যাক ৭০ ডব্লিউ জি। প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৫ শতক জমির জন্য ২ গ্রাম, একর প্রতি মাত্রা ৪০ গ্রাম, হেক্টর প্রতি মাত্রা ১০০ গ্রাম।

হোয়াইট মোল্ড

এ রোগের আক্রমনে কান্ড ও ফলে সাদা তুলার মত দাগ দেখা যায় এবং ওখান থেকে ফলটি পচে যায়।

হোয়াইট মোল্ড দমনে ট্রয় অত্যন্ত কার্যকরী ছত্রাকনাশক।

অধিক ফলন পেতে স্প্রে করুন “ফসলি গোল্ড” ২০ মিলি ফসলি গোল্ড ১০ লি: পানিতে মিশিয়ে প্রতি ২০-২৫ দিন পর পর স্প্রে করলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।

অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা ও ফসল সংগ্রহ

চিচিঙ্গার চারা গজানোর ৫০ থেকে ৬০ দিন পর থেকে ফলন সংগ্রহ করা যায়; তা দুই আড়াই মাস পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।

ফুল আসার ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়। আধুনিক পদ্ধতিতে চিচিঙ্গা চাষ করলে হেক্টর প্রতি ফলন ২২ থেকে ২৪ টন পাওয়া সম্ভব।

অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা…

  • আগাছা সবসময় পরিষ্কার করে সাথে সাথে মাটির চটা ভেঙ্গে দিতে হবে।
  • খরা হলে প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ দিতে হবে। মাটি শুকিয়ে গেলে ফুল ঝরে যায় ফল বড় হয় না।
  • জুন-জুলাই মাস থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর আর সেচের প্রয়োজন হয় না।
  • বিশেষ করে প্রতিবার ইউরিয়া সার দেয়ার আগে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
শেষ কথা

সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করে চিচিঙ্গা চাষ করায় ফলন নিয়ে আশাহত হন অনেক চাষি। তাই ভালো ফলনের জন্য চিচিঙ্গা চাষের সঠিক পদ্ধতি জানা অপরিহার্য।

সুত্র: লেখাটির বিভিন্ন তথ্য কৃষি তথ্য সার্ভিস ও অনলাইন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

আরো পড়ুন … 

**চাষাবাদ ও কৃষি সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, খবর পড়তে আজই জয়েন করুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )”  হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )” অথবা  টেলিগ্রাম চ্যানেল  ”বীজ ঘর ( কৃষি কথা )’‘ এ। 

মতামত দিন

Item added to cart.
0 items - 0.00