চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষ, সঠিক ও সহজ পদ্ধতি জেনে নিন

বাগানে, বাড়ির আঙিনা বা টবে ‘শরৎ রানি’ চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষ করা যায় খুব সহজে। শীতকালীন জনপ্রিয় এই ফুল ক্রিসমাসের সময় ফোটে বলে একে ক্রিসেন্থিমামও বলা হয়।

ইদানিং চাহিদা বাড়ার কারণে এই ফুলের বাণিজ্যিক চাষাবাদ হচ্ছে।

আজ আমরা এই নিবন্ধে সঠিক চন্দ্রমল্লিকা ফুলের চাষ পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

যেভাবে চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষ করবেন, শিখে নিন নিয়ম-কানুন

আমাদের দেশে চন্দ্রিমা,স্নোবল, সোনার বাংলা, পমপম, স্টার, কুইন অব তমলুক ইত্যাদি চন্দ্রমল্লিকা ফুলের চাষ হয়।

যে জাতের হোক না কেন, চন্দ্রমল্লিকা চাষে পর্যাপ্ত সূর্যালোক প্রয়োজন।

তাই চারা রোপণের আগে জমি বা টবে ঠিক মতো রোদ আসছে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশে শীতকালই চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষের উপযুক্ত সময়। কারণ তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা আবহাওয়া এবং রৌদ্রোজ্জ্বল জায়গায় এই ফুল ভালো জন্মে।

মাটি ও চারা তৈরি, এবং রোপণ পদ্ধতি

চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষের জন্য জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ সুনিষ্কাশিত দো-আঁশ ও বেলে মাটি উত্তম। তবে চারা রোপণের আগে ভাল ভাবে মাটি তৈরি করাটা অত্যন্ত জরুরি।

  • সে জন্য প্রথমে মাটির সাথে গোবর সার, নিম খোল, বাদাম খোল, সামান্য পরিমাণে মহুয়া খোল মেশাতে হবে।

    উচ্চফলনশীল চন্দ্রমল্লিকা ফুল বীজ (হাইব্রিড)
    উচ্চফলনশীল চন্দ্রমল্লিকা ফুল বীজ (হাইব্রিড)
  • এই মাটি ৩ মাস মতো রাখার পরে চারা রোপণ করলে গাছের বৃদ্ধি ও ফুলের মান ভালো হবে।
  •  টবে চন্দ্রমল্লিকা ফুল গাছ রোপণের আগে প্রতি টবে ১ চামচ ইউরিয়া, ১-২ চামচ পটাশ প্রয়োগ করা উত্তম।
  • মুলত বীজ, সাকার ও শাখা কলম থেকে চন্দ্রমল্লিকা ফুলের চারা তৈরি করা হয়।
  • জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে শাখা কলম করা শুরু হয়।
  • একবছর পূরানো সবল ডাল থেকে ৮-১০ সেন্টিমিটার লম্বা ডাল তেরছাভাবে কেটে নিতে হবে।
  • এই ডালের কাটিং বেডে বা বালতিতে বসিয়ে দিলে তাতে শেকড় গজাবে।
  • ফেব্রুয়ারি দিকে ফুল দেওয়া শেষ হয়ে গেলে গাছগুলোকে মাটির উপর থেকে ১৫-২০ সেন্টিমিটার রেখে কেটে দিতে হবে।
  • কিছুদিন পর ওসব কাটা জায়গার গোড়া থেকে কিছু সাকার বের হয়।
  • এসব সাকার ৫-৭ সেন্টিমিটার লম্বা হলে মা গাছ থেকে ওদের আলাদা করে ছায়াময় বীজতলায় বা টবে লাগানো যায়।
  • তবে মে-জুলাই মাসে চারাকে বৃষ্টি ও কড়া রোদ থেকে বাঁচানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
  • জমি কিংবা টবে চারা রোপণের উপযুক্ত সময় অক্টেবর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত।
  • জাতভেদে ৩০x২৫ অন্তর চন্দ্রমল্লিকার চারা রোপণ করতে হবে।
  • চন্দ্রমল্লিকার চারা বিকেলে রোপণের পর গোড়ার মাটি চেপে দিয়ে হালকা সেচ দিতে হবে।

চন্দ্রমল্লিকা ফুল গাছ বেশি পানি সহ্য করতে পারে না; তাই পানি এমনভাবে দিতে হবে গাছের গোড়ায় যেন বেশিক্ষণ পানি জমে না থাকে। চারা রোপণের আগে এবং পরে প্রতিদিন নিয়মিতভাবে পরিমাণমতো সেচ অন্যন্ত জরুরি।

সার ও পরিচর্যা

চন্দ্রমল্লিকা গাছ মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য উপাদন শোষণ করে থাকে। এ কারণে জৈব ও রাসায়নিক খাদ্যযুক্ত মাটিতে এ ফুল গাছ খুব ভালোভাবে জন্মে। চন্দ্রমল্লিকা চাষে  প্রতি হেক্টর …

  • ১০ টন গোবর বা কম্পোস্ট ,
  • ৪০০ কেজি ইউরিয়া,
  • ২৭৫ কেজি টিএসপি,
  • ৩০০ কেজি মিউরেট অব পটাশ,
  • ১৬৫ কেজি জিপসাম,
  • ১২ কেজি বোরিক অ্যাসিড ও জিংক অক্সাইড সার প্রয়োগ করতে হবে।

সাকার রোপণের ১০ থেকে ১৫ দিন আগে পঁচা গোবর বা কম্পোস্ট এবং ইউরিয়া বাদে অন্যান্য সার ৭-১০ দিন আগে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।

এছাড়া সাকার রোপণের ২৫ থেকে ৩০ দিন পর ইউরিয়া সারের অর্ধেক প্রয়োগ করতে হবে এবং বাকি অর্ধেক সার সাকার রোপণের ৪৫ থেকে ৫০ দিন পর গাছের গোড়ার চারপাশে একটু দূর দিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।

উপরি প্রয়োগের পর সার মাটির সাথে মিশিয়ে সেচ দিতে হবে।

এছাড়া…

  • চন্দ্রমল্লিকার বেড ও টব আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
  • চারা রোপনের মাসখানেক পর গাছের আগা কেটে দিতে হয়।
  • চারা গাছে তাড়াতাড়ি ফুল আসলে তা সাথে সাথে অপসারণ করতে হয়।
  • চন্দ্রমল্লিকার ফুল সাধারণত ডালপালার তুলনায় বড় হয়, বড় আকারের ফুল পেতে হলে ডিসবাডিং করা উচিত।
  • গাছের গোড়া থেকে কুঁড়ি পর্যন্ত একটা শক্ত কাঠি পুঁতে দিলে ফুল নুয়ে পড়বে না।
  • চারা লাগানোর সময় কাঠি একবারেই পুঁতে দেওয়া ভালো।
চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষ -এ রোগবালাই দমন

চন্দ্রমল্লিকা গাছে ফুল হওয়া পর্যন্ত ১০-১৫ দিন অন্তর ‘সাইপারমেথিন’ অথবা নিম তেলের মতো কীটনাশক দেওয়া যায়। এক মুঠো নিম খোল গাছের গোড়ায় দিলে শিকড়ের কাছেও পোকা লাগার ভয় থাকে না।

এছাড়া শোষক পোকা চন্দ্রমল্লিকা গাছের পাতা ও ফুলের রস শোষন করে। ফলে আক্রান্ত পাতা ও ফুলে দাগ পড়ে। এমনকি ফুল এবং গাছও শুকিয়ে যায়।

এ পোকা দমনের জন্য ২ মিলি ম্যালাথিয়ন ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে।

জাব পোকা অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয় অবস্থাতেই গাছের নতুন ডগা বা ফুলের রস চুষে খায়। এটি গাছের বৃদ্ধি এবং ফলনে মারাত্মক ক্ষতি করে।

নোভাক্রন (০.১% ) বা রগর (১%) স্প্রে করে এ পোকা দমন করা যায়।

পাউডারি মিলডিউ: এ রোগ হলে গাছের পাতা ধূসর হয়ে যায়। পাতার উপরে সাদা সাদা পাউডার দেখা যায়।

টিল্ট ২৫০ইসি ০.৫ মিলি বা ২ গ্রাম থিয়োভিট প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন অন্তর স্প্রে করে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

ফলন ও ফুল সংগ্রহ

চন্দ্রমল্লিকা গাছ বছরে গড়ে ৩০ থেকে ৪০টি ফুল পাওয়া যায়। তবে জাতভেদে এই ফুলের ফলন কমবেশি হয়ে থাকে।

বাইরের পাপড়িগুলো সম্পূর্ণ খুললে এবং মাঝের পাপড়িগুলো ফুটতে শুরু করলে খুব সকালে বা বিকেলে ধারালো ছুরি দিয়ে দীর্ঘ বোঁটাসহ কেটে ফুল সংগ্রহ করা উচিত।

বগ্লে প্রকাশিত কোনও তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।

আরো পড়ুন … 

**চাষাবাদ ও কৃষি সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, খবর পড়তে আজই জয়েন করুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )”  হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ” বীজ ঘর ( কৃষি কথা )” অথবা  টেলিগ্রাম চ্যানেল  ”বীজ ঘর ( কৃষি কথা )’‘ এ। 

মতামত দিন

Item added to cart.
0 items - 0.00
Need Help?